পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীর পুরানো অংশের ইসলামবাগে একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুনে পুড়ে তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ওই এলাকায় আবাসিক ভবনে এ ধরনের বহু কারখানা রয়েছে। কারখানাগুলোতে অগ্নি নির্বাপনের কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আগুন লাগা চারতলা ভবনে স্যান্ডেল ফ্যাক্টরি ছাড়াও আরো দোকানপাট রয়েছে। ওই ভবনেই অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয়। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে দাহ্য কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক সামগ্রী সংরক্ষিত ছিল। পুরানো ঢাকায় পলিথিন ও প্লাস্টিক কারখানা, জুতার কারখানা, কেমিক্যালের দোকান ও গুদামের কোনো হিসাব নেই। আবাসিক ভবনগুলোতেই এসব কারখানা ও গুদাম গড়ে উঠেছে। আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা, দোকানপাট, কারখানা, কেমিক্যালের দোকান ও গুদাম ইত্যাদি থাকার কথা নয়। অথচ পুরানো ঢাকায় এসব বহুদিন ধরেই আছে এবং তা জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে আছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত ‘পুরানো ঢাকায় মৃত্যুর সঙ্গে বসবাস’ শীর্ষক এক রিপোর্টে জানা গেছে, পুরানো ঢাকায় ২৫ হাজারেরও বেশি কেমিক্যাল গুদাম রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার আছে আবাসিক ভবনে। মাত্র আড়াই হাজারের সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স আছে। বাকি ২২ হাজারের বেশি গুদামই অবৈধ। ২০০ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর কেমিক্যালের ব্যবসা এখানে রয়েছে। পুরানো ঢাকার মানুষ যে মৃত্যুর সঙ্গে বসবাস করছে, বৈধাবৈধ কেমিক্যাল গুদামের এই হিসাব থেকে তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। এর সঙ্গে পলিথিন ও প্লাস্টিক কারখানাসহ অন্যান্য কারখানা ও দোকানপাটের হিসাব যুক্ত করলে পরিস্থিতি যে ভয়ঙ্কর, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
কারখানা-গুদামে আগুন এবং আগুনে পুড়ে হতাহত হওয়ার ঘটনা পুরানো ঢাকায় সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীতে কেমিক্যাল গুদামে আগুন লাগায় ১২৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। আহত হয় শতাধিক লোক। সেই সময় সরকারের তরফে বলা হয়, যত দ্রুত সম্ভব পুরানো ঢাকা থেকে কেমিক্যালের দোকান ও গুদাম সরিয়ে দেয়া হবে। সেই সরিয়ে দেয়ার কাজটি আজ অবধি হয়নি। ইতোমধ্যে হয়তো কেমিক্যালের দোকান-গুদামসহ জনস্বাস্থ্যের জন্য হানিকর কারখানা ও দোকানপাটের সংখ্যা আরো বেড়েছে। এই সঙ্গে প্রাণহানি ও দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়েছে। কথা ছিল, পুরানো ঢাকার কেমিক্যালের দোকান ও গুদাম অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হবে সেখানে এ ধরনের হুমকি ও ঝুঁকিও থাকবে না। সেই কাজটি এতদিনেও হলো না কেন, তার জবাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভালো দিতে পারবে। অবহেলা, অমনোযোগ ও দায়িত্বহীনতা যে এ ক্ষেত্রে সীমাহীন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পুরানো ঢাকায় এমনিতেই বাড়িঘর, দোকানপাটে ঠাসা এবং জনঘনত্বও অন্য এলাকার চেয়ে বেশি। এখানে যে ধরনের কেমিক্যাল ও দাহ্য প্রদার্থের মজুদ রয়েছে এবং অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থার যে হাল, তাতে যে কোনো বড় অগ্নিদুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি অবধারিত। নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়ে সরকার এতটা উদাসীন থাকতে পারে, কল্পনাও করা যায় না। যখন কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তখনই কেমিক্যালের দোকান, গুদাম অন্যান্য বাণিজ্যিক স্থাপনা ও কারখানা সরিয়ে নেয়ার কথা জোরের সঙ্গে বলা হয়। তারপর কিছু দিনের মধ্যেই তা তামাদি হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি দলের লোকজনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষীয় লোকজনের সঙ্গে দোকান, গুদাম, স্থাপনা ও কারখানা মালিকদের অর্থ লেনদেনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণেই কোনো কিছু হয় না বা হচ্ছে না।
কেমিক্যালের দোকান, গুদাম, অন্যান্য দোকানপাট, স্থাপনা, কারখানা ইত্যাদি কেবল জননিরাপত্তার জন্যই হুমকি হয়ে আছে, তাই নয়, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্যও এগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সুতরাং যে কোনো বিবেচনায় পুরানো ঢাকাকে ক্লিন করার কোনো বিকল্প নেই। সরকারকে অবশ্যই তার বারবার দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে পুরানো ঢাকার চার শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল গুদাম উচ্ছেদের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দক্ষিণ ঢাকা সিটি কর্পোরেশনসহ ৫টি সংস্থা অভিযান শুরু করবে ১ মার্চ থেকে। এটা কিছুটা হলেও আশার কথা। অবশ্যই এ প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করতে হবে। নামকাওয়াস্তে বা লোক দেখানো অভিযান কারো কাম্য হতে পারে না। যত সময় লাগুক, লাগাতার অভিযানের মাধ্যমে কেমিক্যালের দোকান, গুদাম, বাণিজ্যিক স্থাপনা ও কারখানা উচ্ছেদ করতে হবে। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়ন দেখতে চায় পুরানো ঢাকার মানুষ। কোনো ওজর-আপত্তি, সময়ক্ষেপণ নয়। এক সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ঢাকা থেকে গার্মেন্টসহ সকল কারখানা বাইরে স্থানান্তর করা হবে। হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর হবে সাভারে। গার্মেন্টসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা সরানোর ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই। ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের সামান্য অগ্রগতি থাকলে কবে নাগাদ স্থানান্তর সম্পন্ন হবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। বলা বাহুল্য, ঢাকাকে নিরাপদ ও বসবাসযোগ্য করে তুলতে সব ধরনের কারখানা, বাণিজ্যিক স্থাপনা ও গুদাম সরাতেই হবে। এ ব্যাপারে কোনো প্রকার আপস করা যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।