Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সড়ক পারাপারে সচেতন হতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজধানীসহ সারা দেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হওয়া কোনো নতুন বিষয় নয়। যতই নিয়ম-কানুন ও বিধি-নিষেধ থাকুক না কেন, কিছুতেই যেন পথচারীদের এই বিপজ্জনক পারাপার থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না। এর ফলে প্রায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, জীবন যাচ্ছে এবং চিরতরে পঙ্গুও হচ্ছে। চোখের সামনে এই উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও পথচারীদের মধ্যে কোনো সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হয় না। সময়ের চেয়ে যে জীবনের মূল্য অনেক বেশি, চির প্রচলিত অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথাটি তারা বেমালুম হয়ে যাচ্ছে। পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর দুর্ঘটনার শতকরা ৪০ ভাগই ঘটে পথচারীদের অসচেতন চলাফেরার কারণে। প্রায়ই পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশন স্ক্রলে দেখা যায়, অমুক জায়গায় বাসের নিচে চাপা পড়ে, পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। এসব খবর এখন আর কাউকেই নাড়া দেয় না। অথচ যে পরিবারের মানুষটি মৃত্যু বরণ করে, কেবল সেই পরিবার লোকেরাই জানে এর বেদনা কী! এই দুর্ঘটনার জন্য তারা কাকে দায়ী করবে? দুঃখের বিষয়, আমাদের বোধ এখন এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, যতক্ষণ না নিজে বিপদে পড়ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত বিপদের মর্ম বুঝতে পারছি না। এ ধরনের মনোভাব কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
রাজধানীর ব্যস্ততম গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর দিকে যদি দৃষ্টি দেয়া যায়, তবে দেখা যাবে, পথচারীদের চলাচল এবং রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সচেতনতা নেই। যে যেভাবে পারছে, হেঁটে যাচ্ছে। এমনকি মোবাইলে কথা বলতে বলতে এতটাই বেখেয়াল হয়ে যায়, যে কোন দিক থেকে কী আসছে, তা বুঝতেই পারে না। এ অবস্থায় যদি ব্যক্তিটি গাড়ি চাপা পড়ে, তবে এর দায় কার? ব্যস্ততম ও দ্রুত সড়কে গাড়ির সামনে হঠাৎ কেউ যদি এসে পড়ে, তখন চালকেরও কোনো উপায় থাকে না, তৎক্ষণাৎ গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করা। ফলে অবধারিতভাবেই পথচারিকে গাড়ি চাপা পড়তে হয়। বেশিরভাগ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, কেবলমাত্র সচেতনতার অভাবেই বেঘোরে প্রাণ দিতে হচ্ছে। রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে রাজধানীতে ফুটওভার ব্রিজসহ বেশ কিছু আন্ডার পাস রয়েছে। এসব তৈরি করা হয়েছে পথচারীরা যাতে নির্বিঘেœ রাস্তা পারাপার করতে পারে। বনানী, এয়ারপোর্ট এলাকায় ওভার ব্রিজে সহজে উঠার জন্য বৈদ্যুতিক এসকেলেটর পর্যন্ত লাগানো হয়েছে। তারপরও দেখা যায়, পথচারীরা তা ব্যবহার করতে অনীহা পোষণ করছে। দ্রুত গতির গাড়ি চলাচলের মধ্য দিয়েই রাস্তা পার হতে তারা সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এমনকি অতি আদরের সন্তানকে নিয়েও পার হতে দেখা যায়। এ মানসিকতা আত্মঘাতী ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে পথচারীদের যেমন সচেতনতার অভাব রয়েছে, তেমনি অধিকাংশ ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস পথচারীদের চলাচলে অনুপযুক্ত থাকার অভিযোগও রয়েছে। এমন অনেক ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে যেগুলো যথাস্থানে যেমন স্থাপন করা হয়নি, তেমনি সেগুলো অবাঞ্চিত লোকজন এবং হকারদের দ্বারা দখল হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং উদাসীনতার বিষয়টি উপেক্ষণীয় নয়। ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের সময় এর কার্যকারিতার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া অত্যন্ত জরুরী। রাস্তা পারাপারে পথচারীদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি যাত্রী পরিবহনকারী বাস ও অন্যান্য পরিবহনের চালকদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। দেখা গেছে, বাসগুলো নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়াও চলতি পথে থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করে। সড়কের যে কোনো স্থানে দাঁড়িয়ে যে কেউ হাত উঠালেই বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানো হয়। এর ফলে সড়কজুড়েই যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থাকে। এতে হঠাৎ করে বাস থামাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। কেউ কেউ উঠতে গিয়ে পড়ে আহত হয়। এ ধরনের প্রবণতা শুধু বিপজ্জনকই নয়, মৃত্যুরও কারণ। অথচ যাত্রী পরিবহন যদি নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া রাস্তার মাঝ পথে থামানো না হয়, তাহলে একদিকে দুর্ঘটনা যেমন কমবে, তেমনি বাস ধরার জন্য পথচারীদের দৌড়ে রাস্তা পার হওয়ার প্রবণতাও আর থাকবে না।  
আমরা দেখেছি, শাহবাগ, বাংলামোটরসহ রাজধানীর বেশ কিছু জায়গায় যাত্রীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বসেছে। পথচারীদের জরিমানা এবং দ-ও দেয়া হয়েছে। এ ধরনের কার্যক্রম আমাদের সকলের জন্যই লজ্জার। কারণ আইন-আদালত দিয়ে যদি হাঁটা ও চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তবে বুঝতে হবে আমাদের সিভিক সেন্স বা নাগরিক সচেতনতা বলতে কিছু নেই। যারা রাস্তা পারাপার করতে চায়, তাদের মধ্যে এ সচেতনতার বড়ই অভাব রয়েছে। তাছাড়া এলোপাতাড়িভাবে রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে কী ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়, এর অসংখ্য উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে। অসচেতনভাবে এ ধরনের দুর্ঘটনা ও মৃত্যু মুখে পতিত হওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়। এ থেকে পরিত্রাণে পথচারীদের সচেতন হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। সড়ক ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও সচেতন হওয়া এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। তারা যদি প্রতি মুহূর্তে পথচারীদের সচেতন করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তাহলে নিশ্চয়ই তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে সচেতনতা বোধ জাগ্রত হবে। এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম জায়গায় ফুটওভার ব্রিজের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং তা পথচারী পারাপারে সবসময় উপযুক্ত রাখারও পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্ধারিত স্থান দিয়ে এবং ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডার পাস ব্যবহার করার জন্য পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ নিতে হবে। চিরকালের উদাসীন থাকার অপসংস্কৃতি থেকে বের হয় সচেতন হয়ে উঠতে হবে। সড়কে যাত্রী, পথচারী এবং যানবাহনের শৃঙ্খলা ও নিয়ম-কানুন মেনে চলার উদ্যোগ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন