Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি বর্ষিত হোক ভাষা শহীদদের আত্মায়

| প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাহমুদুল হক জালীস : প্রতি বছরই ফেব্রুয়ারি এলে ভাষার প্রতি টান বেড়ে যায়। ভীষণ মমতা অনুভাব হয়। আস্তিত্বের শিকরে জমে থাকা একরাশ শ্রদ্ধা আবার নব চেতনায় উজ্জীবিত  হয়। মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা অকুণ্ঠ ভালোবাসা ক্রমশই আচ্ছন্ন করে তনু-মনকে। সর্বত্রই বিরাজ করে আনন্দঘন এক পরিবেশ। কাকডাকা ভোরে পাখিদের কূজনকে বড় পরিচিত লাগে। সমুদ্রে আছড়ে পড়া ঊর্মিমালাকে বেশ উচ্ছ্বসিত মনে হয়। ঝর্ণার কলকল ধ্বনি ইথারে ইথারে বাষ্পীত হয়ে এক অনবদ্য মুহূর্ত তৈরি করে। অপরাহ্ণের সূর্যের লাল গুঁড়ো গুঁড়ো আলোর ঝিলিক  পৃথিবীর আকাশকে রক্তিম করে তুলে। রাতের বিদঘুটে আঁধারের মাঝে চাঁদের নিভু নিভু আলোয় দারুণ প্রফুল্লতা বোধজন্মায়। শহরের অলি-গলিতে বাংলা বর্ণমালা দেখে ফের জীবন্ত হয়ে উঠে বায়ান্নর স্মৃতি। তখন পূর্বওপশ্চিম পাকিস্তানের শতকরা আটান্নজন লোকের মুখের ভাষা ছিল বাংলা। কিন্তু তারপরও শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে চাপিয়ে দিয়েছিল নিরহ জনগণের উপর। তারা কেড়ে নিতে চেয়েছিল মায়ের ভাষাকে। কিন্তু বীরের জাতি বাঙালিরা তা হতে দেয়নি। তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। প্রতিহত করে তাদের অসৎ মনোবাঞ্ছাকে। বুকভরা সাহস নিয়ে পা রাখে রাজপথে। মুষ্টিবদ্ধ হাতে তুলে ধরে বাংলা বর্ণমালা। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তাদের ঔদ্ধত তর্জনী। ঝাঁঝালো শ্লোগানে মুখরিত হয় ঢাকার রাজপথ। অধিকার আদায়ের গলা ফাটা চিৎকারে কেঁপে উঠে আকাশ বাতাস। পদভারের ঝাঁকুনিতে থরথর করে কাঁপতে থাকে মাটি। মাতৃভাষা বাংলা চাই, উর্দুভাষার দখল নাই এই শ্লোগান নিয়ে এগুতে থাকে দামাল ছেলেরা। চোখে মুখে প্রতিশোধের তীব্র ছাপ। হাতের আঙুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ। সব কিছুকে যেন ভেঙে চুরমার করে দিবে। আগুনে ভস্ম করে দিবে ঢাকার যত্রতত্র বেড়ে উঠা বাড়িঘর। শত্রুপক্ষ সেদিন গুলি চালিয়ে ছিল বাংলার দামাল ছেলের বুকে। রক্তে রঞ্জিত হয়েছিলো ঢাকার রাজপথ। কংক্রিট ফুটপাত। আস্তাকুঁড় পরিণত হয়েছিল লাল রক্তের নহরে। লুটিয়ে পরে বরকত সালাম রফিক জব্বারের জীবন্ত তরতাজা দেহ। বুকের রক্ত দিয়ে সেদিন তারা ছিনিয়ে এনেছিলো বিজয়ের জয়মাল্য। বেদনাবিধুর সেই দিনটি ছিল ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ। আজও স্মৃতিপটে ভেসে বেড়ায় গর্বেভরা আতীতের আখ্যানের কথা। বেদনাদীর্ণ সকালের রক্তমাখা চিত্র।
ভাষার প্রতি ছিলো যাদের অকুণ্ঠ মমতা। বুকভরা দরদ আর ভালোবাসা। তাদের এই ত্যাগের ফলে ফিরে আসে বাংলা ভাষার স্বকীয়তা। রক্ষা পাই পৃথিবীর আনাছে-কানাছে ছড়িয়ে থাকা ত্রিশ কোটি মানুষের মুখের ভাষা। তারপর ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কা কর্তৃক বাংলাদেশের একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করা হয়। এভাবেই ক্রমেক্রমে বাংলা ভাষা পৃথিবীতে বুকটান করে দাঁড়ায়। পরিশেষে মহান একুশে ফেব্রুয়ারিতে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান যানাচ্ছি যে,আর নয় নগ্নপদে শহীদ মিনারে বেদিত ফুল আর্চনা। এখন থেকে সকলে মিলে বরের দরবারে দুহাত তুলে ফরিয়াদ জানাবো, তিনি যেন ভাষা শহীদগণকে ক্ষমা করে দেন। জয় হোক ভাষার। শহীদদের আত্মায় শান্তি বর্ষিত হোক। জয়তু সালাম বরকত রফিক জব্বার।
শিক্ষার্থী, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, মুহাম্মদপুর, ঢাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাষা

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন