সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
রু মা ন হা ফি জ : বেশ কিছুদিন ধরে মনটা ভালো নেই বাবুর। বাসার কারো সাথে তেমন একটা কথা বলছে না। বিকেল বেলা খেলতেও যায় না এখন। আজ আর স্কুলেও যায়নি বাবু কিন্তু বাবু তো কখনো স্কুল মিস দেয় না। প্রতিদিন বাসার গেটের সামনেই স্কুল বাস এসে থামে। বাবুদের বাসা রাস্তার পাশেই। তাই বাবুকে স্কুলে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে কাউকে সাথে থাকতে হয় না। বাবু একাই স্কুলে যাওয়া-আসা করতে পারে। কেন জানি বাবুকে আজ খুব আনমনে লাগছে। এসব দেখে বাবুর আম্মু বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। সারাক্ষণ যে ছেলেটা পুরো বাসা মাতিয়ে রাখতো সে কিনা এখন একদম চুপচাপ! হঠাৎ করে এমন হলো বাবুর? বাসার সবাই যখন হাসিখুশিতে তাদের বড় চাচ্চু গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক থেকে দেশের ফিরছেন তখন বাবু একেবারেই নীরব। কিন্তু কি এমন সমস্যা হলো- বাবুর। এভাবে আরো কত প্রশ্ন মায়ের মাথায় এসে ভর করতে থাকে।
সকাল বেলা নাস্তা খেতে বাবুকে ডাকলেন না। কিন্তু সেকি বেশ কিছু সময় চলে গেলেও কোনো সাড়াশব্দ নেই- বাবুর। কি হলো এই ভেবে মা যখন বাবুর রুমে গেলেন তখনই তিনি দেখতে পেলেন বাবু কাঁদতেছে। কি হলো বাবুর- এভাবে কাঁদতেছে কেন? বাবুর পাশে বসে মা তার মাথায় আদরমাখা হাত বুলাতে লাগলেন।
-এভাবে কাঁদছো কেন বাবু?
কি হয়েছে তোমার? মায়ের প্রশ্ন-
বাবু কোনো কথাই বলছে না। মা তখন বাবুকে তুলে তার বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলেন। আস্তে আস্তে বাবুর কান্না কিছুটা থামে। মা বাবুকে প্রশ্ন করেন-
-‘বাবু তুমি এভাবে কাঁদতেছিলে কিসের জন্য? কি হয়েছে তোমার? ততক্ষণে বাবু মুখ খুলে, কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে-
-‘আমার বড় আপু কোথায়’?
‘আমাকে রেখে কোথায় চলে গেছে আপু’?
‘কেন আপু বাড়িতে নেই’? এক নিঃশ্বাসে প্রশ্নগুলো করে- বাবু। মায়ের স্বাভাবিক উত্তর- ‘না বাবু, তোমার আপু তো দূরে কোথাও যায়নি এইতো দু’একদিনের মধ্যে চলে আসবে, কেমন।” ‘তবে কোথায় গেলো আপু’? আবারও প্রশ্ন করে বাবু।
হ্যাঁ বাবু, তোমার আপু ভার্সিটি অ্যাডমিশন দিতে মেজো মামার সাথে ঢাকায় গেছে। পরীক্ষাটা শেষ করেই চলে আসবে তোমার আপু। বাবু তখন মনের মাঝে কিছুটা হলেও প্রশান্তি লাভ করে। এর জন্যই বুঝি আমার ছেলেটা কাঁদতেছিল।
বাবু এখন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। তার আসল নাম বাবু না হলেও বাসায় সবাই আদর করে বাবু বলেই ডাকে। বাবুর পুরো নাম হলো তানিমুল হাসান সামি। আর বাবু নামটা বড় আপুই প্রথম ডাকে। পরীক্ষাটা শেষ করেই পরের দিন বাড়ি ফিরে বাবুর আপু।
ঢাকা থেকে অনেক কিছু বাবুর জন্য নিয়ে আসে আপু। বাবু তো দারুণ খুশি। তবে আপুর কাছে তার প্রশ্ন- “আপু আমাকে রেখে কিভাবে তুমি ঢাকায় গেলে? জান আপু তুমি না থাকলে বাসায় আমার একদম ভালো লাগে না। ঠিক আছে বাবু, আপু আর তোমাকে রেখে কোথাও যাবো না, কেমন। একথা শুনে বাবুর মুখে হাসি।
এদিকে কিছুদিন পর ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলো। বাবুর আপু চান্সু পেয়ে যায় ভার্সিটিতে। এই সংবাদ শোনার পর বাসার সবাই তখন খুব খুশি। মেজো মামা বাজার থেকে মিষ্টি নিয়ে আসলেন। এক এক করে সবাই মিষ্টি মুখ করলেন। আশপাশ কয়েকটি বাসায়ও দেওয়া হলো। সবাইকে উদ্দেশ্য করে তখন মামা বললেন, দু’একদিনের মধ্যেই রুমিকে (বাবুর বড় আপু) ঢাকায় চলে যেতে হবে। ঢাকায় মামাদের বাসা আছে। সেখানে তারা অনেকদিন থেকে বসবাস করছেন। বাবুও ইতিমধ্যে দুই-তিন বার বেড়াতে গেছে মামাদের বাসায়। মামার কথায় বাবুর বুঝতে আর বাকি হইলো না, তার আপু যে ঢাকায় চলে যাচ্ছে। বাবু কি তার আপু ছাড়া থাকতে পারবে? বাবুকে এখন আর কে আদর করবে আপুর মতো? এরকম কতো চিন্তা এসে ঘুরপাক খেতে থাকে বাবুর মাথায়।
খুব সকালেই রেডি হতে বললেন, মেজো মামা। কাপড়চোপড়, ব্যাগ, বইপত্র সব কিছুই গুছিয়ে দিলেন মা। আশপাশে পরিচিত বাসার অনেকেই এসেছেন রুমিকে বিদায় জানাতে। একে একে সবার কাছ থেকে বিদায় নিল রুমি। সবশেষে যখন বাবুকে বিদায় জানাতে আসে তখন বাবু তার আপুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। আপু তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছো। এখন কে আমাকে আদর করবে, পড়া শিখিয়ে দেবে। আমার সাথে খেলবে? কথাগুলো বলতে বলতে বাবুর গলা ধরে আসে। কিন্তু কোনো উত্তর দিতে পারে না রুমি। নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয় বাবুর দিকে। বুকফাটা কান্নাগুলো চোখের কোনা দিয়ে পড়তে থাকে রুমির...।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।