Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা যাবে না

| প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জনগণের প্রতি সরকারের মায়া-মমতা আছে বলে মনে হচ্ছে না। সরকার কি শুধু তার জন্য নাকি জনগণের সেবাযত্মে জন্য- এ কথা এখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। তা নাহলে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে জনগণ যখন দিশাহারা তখন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কথাও অবলীলায় সরকার বলে দিয়েছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব ইতোমধ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন পাঠানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিও আগামী এপ্রিল থেকেই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। সরকার সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছিল। এ হিসেবে এক বছর পার হতেই আবারও দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ছিল প্রতি ইউনিট (এক কিলোওয়াট) বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ছিল ৬ টাকা ২৭ পয়সা। গত বছর তা কমে দাঁড়ায় ৫ টাকা ৮০ পয়সা। চলতি বছর এ খরচ আরো কমে হয়েছে ৫ টাকা ৫৯ পয়সা। তারপরও সরকার ইউনিট প্রতি ৭২ পয়সা লোকসানের যুক্তিতে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বুঝতে অসুবিধা হয় না, সরকার বিদ্যুৎ খাত থেকে লাভ করতে চাচ্ছে। সরকারের এ মনোভাব যে এক ধরনের মুনাফাবাজির প্রবণতা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের স্বস্তির বিষয়টি সরকার কোনোভাবেই আমলে নিচ্ছে না। কীভাবে মানুষকে টানাপড়েনের মধ্যে ফেলে দেয়া যায়, সরকারের মনোভাবে তাই ফুটে উঠছে। জনবান্ধব কোনো সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে না।
সরকার ভর্তুকি কমানোর কথা বলে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি করে জনসাধারণকে এক দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। যেখানে সরকারের কাজই হচ্ছে, শত কষ্ট করে হলেও জনসাধারণের সুবিধার বিষয়টি নিশ্চিত করা, সেখানো উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। এ কথা সবাই জানেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সর্বকালের সর্বনিম্ন অবস্থায় রয়েছে। দেশের বেশির ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় জ্বালানি তেলের মাধ্যমে। অথচ জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারে সবচেয়ে কম হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অনেক নিচে নেমে এসেছে। এছাড়া গ্যাসভিত্তিক কয়েকটি কেন্দ্র উৎপাদনে আসায় খরচ আরও কমেছে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়ার পরিবর্তে কমার কথা। তা না করে সরকার উল্টো বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এটা জনসাধারণের উপর জুলুম ছাড়া কিছু নয়। সমস্যা হচ্ছে, জনসাধারণের নীরবে তা সহ্য করা ছাড়া তার প্রতিবাদ করার কোনো উপায় নেই। যে দুয়েকটি রাজনৈতিক দল বাদ-প্রতিবাদ করে, তা সরকার থোড়াই কেয়ার করে। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সরকারের উপর কথা বলার কেউ নেই। যে সরকার জনগণের হওয়ার কথা, সে এখন নিজের হয়ে গেছে। জনগণের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থই বড় করে দেখছে। সে মনে করছে, যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, তা জনগণকে মেনে নিতে হবে। আমরা লক্ষ্য করছি, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ খাত নিয়ে সরকারের মধ্যে এক ধরনের লাভ করার মনোবৃত্তি প্রবল হয়ে উঠেছে। যে কোনো ছুঁতোয় খাতগুলোর দাম বৃদ্ধির জন্য সদা ব্যস্ত থাকে। কথায় কথায় ভর্তুকি কমানোর উছিলা দেয়া হয়। ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায়, এ খাতে সরকার লাভজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এ খাতে এখন ভর্তুকির পরিবর্তে লাভ হচ্ছে। এ লাভ আসছে জনগণের পকেট থেকে। জনগণকে টানাপড়েনের মধ্যে রেখেই সরকার লাভ করে চলেছে। দাম কমিয়ে যে জনগণকে একটু স্বস্তি দেবে, সেদিকে তার খেয়াল নেই। তার মধ্যে এক ধরনের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি কাজ করছে। বলা বাহুল্য, জ্বালানি তেলের দাম কমলে এমনিতেই উৎপাদন খরচ থেকে শুরু করে পরিবহন খরচ কমে যায়। এর প্রভাব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দামের উপর পড়ে। এতে জনসাধারণ উপকৃত হয়। সরকার যে এ সরল সত্য বোঝে না, তা নয়। তবে যে দেশে সরকার জনগণের সুখ-দুঃখের কথা বিবেচনা করে না, কেবল নিজের লাভের কথা চিন্তা করে, সে দেশের জনগণের দুঃখের অন্ত থাকে না। বাংলাদেশের মানুষ এখন এই দশার মধ্যেই পড়েছে।
সরকারের কাজ হচ্ছে জনসাধারণের জীবনযাত্রাকে স্থিতিশীল রাখা। বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা এর ব্যতিক্রম দেখছি। সরকার একের পর এক গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনসাধারণকে প্রান্তিক পর্যায়ে চলে যেতে বাধ্য করছে। শুধু জনসাধারণকে নয়, শিল্প-বাণিজ্য, বিনিয়োগের ক্ষেত্রটিকেও কঠিন করে তুলছে। গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে অনেক শিল্প-কারখানা চালু করতে না পারার কথা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বিদ্যমান শিল্প-কারখানা নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস-বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। এসব সমস্যার সমাধান না করে এবং এসবের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে সরকার কেবল দাম বৃদ্ধি করে চলেছে। মাঝে মাঝে অবকাঠামো নির্মাণের একটি উছিলা দেয়া হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, জনগণকে দীর্ঘস্থায়ী টানাপড়েনের মধ্যে রেখে এ ধরনের অজুহাত দেয়া কতটা যৌক্তিক ও বিশ্বাসযোগ্য? কেবল জনসাধারণের উপর একের পর এক রাজস্ব বোঝা চাপিয়ে দিয়ে যদি সরকারকে চলতে হয়, তবে সে সরকারের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠা অস্বাভাবিক নয়। আমরা মনে করি, দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রবণতা থেকে বের হয়ে জনসাধারণের স্বস্তির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। যে সরকারের সময় জনগণকে টানাপড়েনের মধ্যে থাকতে হয়, এর দায় দায়িত্ব সে সরকারকেই নিতে হয়। জনগণ কষ্ট পায় এমন সিদ্ধান্ত যত কম নেয়া যায়, সরকারের জন্য ততই মঙ্গল। আমরা মনে করি, সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম কোনোভাবেই বৃদ্ধি করবে না। এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরকারের সরে আসা উচিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন