Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কর্মী যাচ্ছে মালয়েশিয়ায়

১০ মার্চ প্রথম ফ্লাইট

| প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কর্মী প্রেরণের সুযোগ পাচ্ছে ১০ এজেন্সি : খরচ পড়বে ৩৪ হাজার থেকে ৩৭ হাজার টাকা
শামসুল ইসলাম : অবশেষে জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় স্বল্পসংখ্যক নির্বাচিত রিক্রুটিং এজেন্সি’র মাধ্যমে আগামী ১০ মার্চ মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটপযাগে ২শ’ কর্মী যাচ্ছে মালয়েশিয়ায়। মালয়েশিয়ার প্লানটেশন খাতে এসব কর্মী দেশটি’র শ্রম আইন অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে। গত ২২ ফেব্রুয়াফর মালয়েশিয়ার মানব সম্পদমন্ত্রী দাতো শ্রী রিচার্ড রায়ট আনাক জায়েম এক চিঠিতে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশনার মোঃ শহিদুল ইসলামকে নির্বাচিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  
আগামী ১২ মার্চ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট যোগে ১শ’ কর্মী এবং ১৫ মার্চ বিমানের অপর ফ্লাইট যোগে আরো ২শ’ কর্মী মালয়েশিয়ায় যাত্রা করবে। এসব কর্মীর ভিসা, নিয়োগানুমতি, বহির্গমন ও নিয়োগকর্তা কর্তৃক বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় পড়বে ৩৪ হাজার টাকা থেকে ৩৭  হাজার টাকা। তবে অভিবাসন ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া থেকে কর্মী নিয়োগের ৯ হাজার নিয়োগানুমতি এসেছে। বায়রার নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে। জিটুজি প্লাস অনলাইন প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের সুযোগ থেকে বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বঞ্চিত হবে। তবে বায়রার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১০টি নির্বাচিত রিক্রুটিং এজেন্সি’র মাধ্যমে প্রথমে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হবার পর অন্যান্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও সাব-এজেন্ট হিসেবে কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে। ইতিমধ্যেই নির্বাচিত ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি’র সাথে ত্রিশটি করে আরো তিনশ’ এজেন্সি’র চুক্তিও নাকি সম্পন্ন হয়েছে। এতে করে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে অভিবাসন ব্যয়ে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে অনেক রিক্রুটিং এজেন্সি। বায়রার মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন রাতে ইনকিলাবকে বলেন, আগামী ১০ মার্চের দিকেই মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ শুরু হয়ে যাবে। মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের সম্পত্তিক্রমেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হওয়া দরকার। প্রথমে স্বল্পসংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ শুরু হলেও যদি বায়রার সাধারণ সদস্যদের কর্মী নিয়োগে সম্পৃক্ত করতে হয় তা আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবো। বায়রার মহাসচিব বলেন, মালয়েশিয়ার ফেলডা কোম্পানির ৭টি কোম্পানি ও ৫টি কোম্পানির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল তা নিরসন হয়ে গেছে। ফেলডা কোম্পানির কর্মকর্তারা কুয়ালালামপুর বিমান বন্দরে কর্মীদের শুধু গ্রহণ করবেই না তারা পুনরায় চিঠি দিবেন এবং বাংলাদেশে এসে কর্মী বাছাইসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। কিছু কর্মীর বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে বায়রা মহাসচিব উল্লেখ করেন।  
২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জি টু জি প্লাস চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও মালয়েশিয়ার পক্ষে সফররত মানব সম্পদমন্ত্রী দাতো শ্রী রিচার্ড রায়ত আনাক জায়েম স্বাক্ষর করবেন। এ চুক্তি  স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ সোর্স কান্ট্রি হিসেবে মর্যাদা লাভ করে। চুক্তি স্বাক্ষরের পরের দিনই মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের বিদেশি কর্মী নিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে দু’দফায় প্রায় ৯ শতাধিক যোগ্য রিক্রুটিং এজেন্সি’র নামের তালিকা মালয়েশিয়া সরকারের কাছে প্রেরণ করে। সম্পূর্ণ অনলাইনের মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশী বেসরকারি ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচিত করে। জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার যাতে কোনো সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে না যায় এবং সকল রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রেরণের সুযোগ পায় তার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য বায়রার সাবেক সভাপতি মোঃ আবুল বাসার ঐ সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান প্রবাসী সচিব বেগম শামছুন নাহারের কাছে লিখিত আবেদন পেশ করেছিলেন। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সিন্ডিকেটের হাতে ছেড়ে দিলে যে কোনো মূল্যে তা প্রতিহত করা হবে বলেও বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাসার উল্লেখ করেছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের মার্চ মাস থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে। বহু কূটনৈতিক তৎপরতার পর ২০১২ সালে মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের জি টু জি প্রক্রিয়ায় শুধু প্লানটেশন খাতে সরকারি উদ্যোগে কর্মী যাওয়ার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া কর্মী প্রেরণের জন্য ঢাকঢোল পিটিয়ে দু’দফায় সারা দেশ থেকে প্রায় ২২ লাখ কর্মীর নিবন্ধন করা হয়েছিল। কিন্ত জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে এযাবত প্রায় ১০ হাজার  কর্মী জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া গেছে।  গত বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দেশটিতে সকল অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধকরণের ঘোষণা দিয়েছেন। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ কর্মীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বৈধকরণের সুযোগ থাকবে। সকল কাগজপত্র সঠিকভাবে নথিবদ্ধ করেই এবারের নিবন্ধনের কাজ শুরু হচ্ছে। অবৈধ কর্মীদেও বৈধতা পাওয়ার সুযোগ ও মালয়েশিয়ার কর্মী চাহিদা মেটানোর কথা মাথায় রেখেই এ ব্যবস্থা নিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। তবে এ সুযোগের আওতাধীনদের বিশেষ কিছু শর্ত বেঁধে দেয়া হয়েছে। মালয়েশিয়া সরকারের অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধকরণের সিদ্ধান্তে দেশটিতে অবৈধ বাংলাদেশী কর্মীরাও বৈধ হবার সুযোগ পাচ্ছে। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরস্থ ভেস্ট মার্কেটিং এস ডি এন-বিএইচডি’ (৭৬৯২২৪-এ)-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর রুহুল আমিন মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশী কর্মীদের বৈধকরণের সুযোগ দেয়ায় মালয়েশিয়া সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ডিস্ট্রিকের কারাগার ও ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে প্রচুর অবৈধ বাংলাদেশী কর্মী মানবেতর জীবন-যাপন করছে। প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রুহুল আমিন মালয়েশিয়ার কারাগার ও ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক অবৈধ বাংলাদেশী কর্মীদের বৈধতা লাভের সুযোগ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় সকল রিক্রুটিং এজেন্সি যাতে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী প্রেরণের সুযোগ পান তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কুয়ালালামপুরের কে এল সিসি এলাকায় মালয় পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩০/৪০ জন বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কর্মী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ