Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা হোক

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ জেলায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ২০০৬ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। কাজও শুরু হয়। সেই থেকে এ পর্যন্ত চার দফা সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। তারপরও কাজ শেষ না হওয়ায় সরকার প্রকল্পটি বন্ধ করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যয় হয়ে গেছে বৈদেশিক ঋণের ৩৭১ কোটি টাকা। এ যাবৎ কালে কেবলমাত্র কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে খুলনার আড়ংঘাটা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন বসানোর কাজ হয়েছে। অপেক্ষা ছিল গ্যাস সংযোগ দেয়ার। ওদিকে পাঁচ জেলায় ৮৪৫ কিলোমিটার গ্যাস বিতরণ পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ শুরুই হয়নি। জানা গেছে, প্রকল্পটি শুধু বন্ধই করা হয়নি, একই সঙ্গে ক্রয়কৃত পাইপ, যন্ত্রপাতি সরকারের অন্যান্য কোম্পানীর কাছে বিক্রী করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারী কোম্পানী সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু যন্ত্রাংশ বিক্রী করে দেয়া হয়েছে। কেন এ ধরনের একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা জানা যায়নি। একটি কারণই অনুমান করা যায়, সেটি হলো, প্রকল্পটির কাজ আশাব্যঞ্জক হয়নি এবং সময় বার বার বাড়ানোর পরও সংশ্লিষ্ট কোম্পানী কাজ শেষ করতে পারেনি। এটাই একমাত্র ও যুক্তিযুক্ত কারণ, সেটা ধারণা করা মুশকিল। বিবেচ্য বিষয় হলো, প্রকল্পটির প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গেছে কিনা। এটা কারো অজানা নেই, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপন ও গ্যাস সরবরাহের নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে এবং কোনো কোনো অঞ্চলে কাজও চলছে। এমতাবস্থায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের প্রয়োজন নেই বা প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে মনে করার সঙ্গত কারণ থাকতে পারে না। অবশ্যই ওই অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের প্রয়োজন আছে। এর সঙ্গে অঞ্চলটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনেক কিছুই নির্ভরশীল, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
প্রকল্প বন্ধ এবং প্রকল্পের জন্য কেনা সামগ্রী সরকারের অন্য কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রী করে দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, সরকার ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে আর আগ্রহী নয়। বলা যায়, সরকার এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। এর অর্থ হলো, ওই অঞ্চলের মানুষ গ্যাস পাবে না, গ্যাস-ভিত্তিক কোনো শিল্পকারখানা সেখানে গড়ে উঠবে না। আমরা যে সুষম উন্নয়ন বা আঞ্চলিক উন্নয়নের গুরুত্বের কথা সব সময় উচ্চারণ করি, এই সিদ্ধান্তে তা ব্যাহত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পিছিয়ে থাকবে একটি বিরাট এলাকা। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রকল্প কোনো অজুহাতেই বন্ধ করে দেয়া সঠিক সিদ্ধান্ত বলে বিবেচিত হতে পারে না। সরকারের বা মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল, কেন প্রকল্পের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক হয়নি, কেন বার বার সময় বাড়িয়েও কাজ সম্পন্ন করা যায়নি, তা খুঁজে বের করা। এ জন্য যে সব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে তা দূর করা। এই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কোম্পানীর জবাবদিহি করতে বাধ্য করা। এই শ্লথতা, সময়ক্ষেপণ ইত্যাদির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মাথার যন্ত্রণায় পুরো মাথাটিই কেটে ফেলা গ্রহণযোগ্য ও সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না।
এই সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের ফলে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বঞ্চিত হলো। গ্যাস গেলে জনসাধারণই কেবল উপকৃত হতো না, সেই সঙ্গে ওই অঞ্চলে শিল্পায়নের একটা বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হতো। খুলনা ও যশোরে বহু শিল্প-কারখানা অতীতে ছিল, যার একটা বড় অংশ নানা কারণে বন্ধ ও রুগ্ন হয়ে গেছে। গ্যাসের সংস্থান হলে, অনেক শিল্প-কারখানাই ফের পুনর্বাসন করা সম্ভব হতো, নতুন নতুন শিল্প-কারখানাও গড়ে উঠতে পারতো। মংলা সমুদ্র বন্দর ফের কর্মমুখর হয়ে উঠেছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরও চালু হয়েছে। পদ্মা সেতু হচ্ছে। দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর কথাও বলা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা অপার। এ সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে গ্যাস সরবরাহ শুধু জরুরী নয় অত্যাবশ্যকও বটে। আমরা জানি, যমুনার ওপর একটি মাত্র সেতু হওয়ার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের যাতায়াত ও যোগাযোগই শুধু মসৃণ হয়নি, উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল নানামুখী অবহেলার শিকার। অথচ জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থেই ওই অঞ্চলের উন্নয়ন দরকার। স্বাভাবিক কারণেই সরকারের এই সিদ্ধান্তে ওই পাঁচ জেলার মানুষ হতাশ। তারা আশা করছে, সরকার সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করবে। আমরা জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, ওই অঞ্চলের উন্নয়নের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে বলতে চাই, সরকারের উচিত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা। প্রকল্পটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সেটা প্রাধান্যে নিয়ে সরকারের তরফে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন