পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো যাচ্ছে না। বারবার পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মঙ্গলবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে অয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার জানিয়েছেন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের বেচাকেনা চলে। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে অর্থ নেয়া হয় বিকাশের মাধ্যমে। এসব প্রশ্নপত্রের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ৪০ ভাগের বেশি মিল থাকে। এদিকে ডিবির একটি টিম অভিযান চালিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারে এ পর্যন্ত বোর্ডের কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তবে বিজি প্রেসের কয়েকজনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পরীক্ষার আগেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বোর্ডের ৫টি সভা অনুষ্ঠিত হয়। তারপরেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার খবরে তারা চিন্তিত। তিনি মনে করেন, এ চক্রের মূলে প্রবেশ করতে না পারলে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস অনেকটা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এবারেও যথারীতি পরীক্ষা শুরুর আগের রাত থেকেই ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে পড়েছে। এ প্রশ্নের সাথে মূল প্রশ্নের মিল খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরীক্ষা শুরু হবার আধাঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা আগে শিক্ষার্থীরা যে প্রশ্ন পেয়েছে এর সঙ্গে মূল প্রশ্নের মিল পাবার অভিযোগ উঠেছে। চলতি এসএসসি পরীক্ষায় বাংলা দ্বিতীয়পত্র ও ইংরেজি প্রথমপত্রের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। কয়েক বছর ধরেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জেএসসি ও অন্যান্য সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠছে। এবারেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে মন্ত্রী পরীক্ষা বাতিলের কথা বললেও পরে সেখান থেকে সরে এসেছেন। বাস্তবতা হচ্ছে বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা প্রমাণ করে কোথাও না কোথাও গলদ থেকে যাচ্ছে। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, যারা ফাঁসের বিরোধিতা করেছে তাদেরই বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর সাথে একটি শক্তিশালী সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত। এদের মূল শক্তি কোথায় তা স্পষ্ট নয় বলেই হয়তো এদের আটকানো যাচ্ছে না। মূলত এটা ওপেন সিক্রেট যে, খোদ রাজধানীতে একটি বিশেষ মহল পরীক্ষার আগেই তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সবকিছু ঠিকঠাক রাখে। অস্বীকার করা যাবে না, কোনো না কোনোভাবে এর সাথে প্রভাবশালী মহলের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না, আগেও হয়তো কখনো কখনো প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে তবে তা কখনো গত কয়েক বছরের মতো অত্যধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়নি। সামগ্রিক বিবেচনায় শিক্ষার মান নিয়ে এখন অহরহ প্রশ্ন উঠছে।
গ্রাম ও শহরে মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাবৈষম্য বিদ্যমান। দেখা যায়, যে হারে শহরের শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করে সে মাত্রায় গ্রামের শিক্ষার্থীরা করছে না। এর উপর প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা এই বৈষম্য আরা বাড়িয়ে তুলছে। অবস্থা বিশ্লেষণে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি মূলত একটি নিয়মিত পরিণত হয়েছে। এ পরিস্থিতি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দিন দিন ধ্বংস করে দিচ্ছে। এর স্থায়ী প্রতিকার জরুরি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই বাস্তবতা কোনো অবস্থাতেই চলতে দেয়া যায় না। এমনিতেই আমাদের দেশের শিক্ষার মান নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন রয়েছে তার উপর প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি শিক্ষাকে আরো প্রশ্নসাপেক্ষ করে তুলেছে। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট সকলে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।