Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডাক্তারের ফি ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যয় নিয়ন্ত্রণ জরুরি

| প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অসুস্থতায় চিকিৎসাসেবা পাওয়া রাষ্ট্রের কাছে জনগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার। এ সেবা নিশ্চিত করতে সীমিত সম্পদের মধ্যেও সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতাল ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পে হাজার হাজার ডাক্তার, নার্স, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম বাবদ জনগণের রাজস্ব থেকে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। তবে এসব ব্যয়িত অর্থের কতটা জনকল্যাণে কাজে লাগছে আর কতটা দুর্নীতি, লুটপাট ও অপচয়ে চলে যাচ্ছে তার স্বচ্ছ হিসাব কেউ রাখে না। বাস্তবতা হচ্ছে, চিকিৎসাসেবার ব্যয় দিনকে দিন সাধারণ দরিদ্র মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকারি হাসাপাতালে সিন্ডিকেটেড দুর্নীতির কারণে সেখানে চিকিৎসা পেতে সাধারণ মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ কারণে ডাক্তারদের ব্যক্তিগত চেম্বার, কনসালটেশন সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকই হচ্ছে সাধারণ মানুষের একমাত্র বিকল্প। সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে মানহীন হাসপাতাল-ক্লিনিক। এসব হাসপাতালের ডাক্তার ও পরিচালকরা সাধারণ দরিদ্র মানুষের সামর্থ্যরে বিষয় অগ্রাহ্য করেই ডায়াগনস্টিক চার্জসহ তাদের বিভিন্ন সেবার মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ পাওয়া যায় ডাক্তারদের ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে। অসুস্থতার প্রাথমিক পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের শরণাপন্ন হতেই হয়। একেকজন ডাক্তার প্রতিদিন শত শত রোগী দেখছেন আর প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা থেকে হাজার-দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত প্রেসক্রিপশন চার্জ নিচ্ছেন। চিকিৎসাসেবায় ডাক্তারদের ফি নির্ধারণ ও রোগী দেখার আইনগত সীমাবদ্ধতা না থাকায় ডাক্তাররা তার অপব্যবহার করছেন।
সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যায় ডাক্তার দেখাতেই একজন দরিদ্র মানুষকে হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। তার ওপর আছে অনাবশ্যক ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার ফর্দ ও হাজার হাজার টাকা ব্যয়ের বোঝা। এ কারণে নি¤œ আয়ের রোগীরা পারতপক্ষে ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না। ফার্মেসি দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে তারা আরো জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। সরকার একদিকে সরকারি হাসপাতালে সাধারণ মানুষের নির্বিঘœ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারছে না, অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতাল এবং প্রাইভেট প্র্যাক্টিসের ক্ষেত্রে ডাক্তারদের ফি নির্ধারণ ও রোগীর স্বার্থ নিশ্চিত করার কোনো আইনগত বিধিবিধানও নিশ্চিত করতে পারেনি। চিকিৎসাসেবার মতো মৌলিক অগ্রাধিকার খাতে এমন বল্গাহীন স্বেচ্ছাচারিতা এবং দরিদ্র মানুষের এমন দুর্ভোগ বিশ্বের আর কোথাও আছে কি না আমাদের জানা নেই। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ডাক্তারদের ফি নির্ধারণ করা আছে। সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররাও নির্ধারিত অংকের অধিক ফি নিতে পারেন না বলে জানা যায়। ফি নির্ধারণে ডাক্তারদের স্বেচ্ছাচার এবং অনাবশ্যক ডায়াগনোসিস ব্যয়ের বোঝা চাপিয়ে ডাক্তারদের কমিশন বাণিজ্যের কারণে স্বাস্থ্যসেবা খাত এখন অনৈতিক মুনাফা বাণিজ্যের বড় সেক্টরে পরিণত হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতের অনৈতিক মুনাফাবাজি বন্ধ করতে না পারলে কথিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয় বলে মত দিচ্ছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। গত সোমবার ঢাকার একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ত্রিবার্ষিক বক্তৃতামালায় দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যসেবা খাতকে সুলভ ও জনবান্ধব করে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন। দেশের জনশক্তির সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা ও সৃজনশীলতা নিশ্চিত করতে হলে কমমূল্যে মানসম্মত ওষুধ এবং স্বল্প খরচে ডাক্তারসহ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়। স্বাস্থ্য খাতে উচ্চ ব্যয় এবং ওষুধের মান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন এবং প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারি নিশ্চিত করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে সরকারি কোনো গাইডলাইন ও নজরদারি না থাকায় ডাক্তাররা যেমন যথেচ্ছ ফি গ্রহণ থেকে শুরু করে কমিশন বাণিজ্য ও মুনাফাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন, ওষুধ কোম্পানিগুলো যখন-তখন ওষুধের মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। দেশে অনেক মানসম্মত ওষুধ কারখানার পাশাপাশি মানহীন ও অবৈধ ওষুধ কারখানাও গড়ে উঠেছে। এসব ওষুধ জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। এ ধরনের কোম্পানির মানহীন প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে একসাথে অনেক শিশুর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। ওষুধ উৎপাদন নীতিমালা না মানায় গত সোমবার হাইকোর্টের এক রায়ে এ ধরনের ৩৪টি ওষুধ কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানসম্মত ওষুধ কোম্পানিগুলো যেখানে ইউরোপ-আমেরিকাসহ শতাধিক দেশে ওষুধ রফতানি করে এই শিল্পে বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে, সেখানে পাশাপাশি মানহীন ও প্রাণহানিকর ওষুধের রমরমা বাণিজ্য চলতে পারে না। সেই সাথে ডাক্তারদের ফি নির্ধারণসহ বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবার মান ও খরচের মানদন্ড নির্ধারণ করতে হবে। সরকারি হাসপাতালগুলোকে জনবান্ধব, দুর্নীতিমুক্ত ও আধুনিক করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন