Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গণমাধ্যমের এখন বড় দুঃসময় যাচ্ছে

ডিইউজে’র বার্ষিক সাধারণ সভায় মাহমুদুর রহমান

| প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : দৈনিক আমার দেশ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান বলেছেন, গণমাধ্যমের এখন বড় দুঃসময় যাচ্ছে। প্রেসনোটনির্ভর সাংবাদিকতা চলছে। গণমাধ্যমগুলো আইন-শৃংখলা বাহিনীর দেয়া তথ্য হুবহু ছাপতে বাধ্য হচ্ছে। আইনগত সুরক্ষাও পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় একমাত্র জনগণই পারে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে। গতকাল সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউটের সেমিনার হলে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিইউজে’র সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ’৭৫ সালে আইনের মাধ্যমে পত্রিকা বন্ধ করে দিলেও এখন জোর করে পত্রিকা-টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের সুরক্ষা নেই কোথাও। যে চার ধরনের সুরক্ষা থাকার কথা তার তিনটিই এখন অনুপস্থিত। আইনগত সুরক্ষা না থাকায় একটির পর একটি কালো আইন বিশেষ করে আইসিটি আইন করে পত্রিকা-টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। দেশের প্রধান সারির বিরোধীদলগুলো শক্তিশালী অবস্থান না নেয়ার কারণে রাজনৈতিক সুরক্ষাও মিলছে না। সহযোগী গণমাধ্যমগুলোর ঐক্য যে সুরক্ষা দিতে পারতো তাও পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ সহযোগী গণমাধ্যমের মধ্যে দুটি শ্রেণি বর্তমানে সরকার এবং সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপাত্যবাদী শক্তির পক্ষে কাজ করছে। আর একটি শ্রেণি জনগণের বাক-স্বাধীনতার পক্ষে থাকলেও তারা কিছু করতে পারছে না। এ অবস্থায় একমাত্র চতুর্থ সুরক্ষা-জনতার শক্তিই পারে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে।
সাধারণ জনগণ ফরাসি বিপ্লব সংগঠিত করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে পারে সাংবাদিকরাই। সাংবাদিকরাই পারেন জনগণকে উজ্জীবিত করতে।
দেশের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জনগণকে দ্বিমুখী লড়াই চালাতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একদিকে দেশীয়ভাবে লড়াই করতে হবে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিবেশী আধিপাত্যবাদী শক্তি বা আঞ্চলিক সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, যখন কোনো শাসক মনে করে তারা যা বলবে তাই হবে, তারা ইচ্ছা করলে ১০টা পদ্মা সেতু করতে পারবে, যাকে ইচ্ছা তিনদিন না খাইয়ে রাখতে পারবে, তখন মনে করতে সে শাসকের পতন অত্যাসন্ন। তিনি কুরআনের বরাত দিয়ে বলেন, অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলাও জিহাদ। এখন যেসব জ্ঞানী-গুণী চুপ করে থেকে মনে করছেন তারা পার পাবেন তা হবে না। তারাও পতনের মুখে পড়বেন। যারা ভিন্ন মতের পত্রিকা-টেলিভিশন বন্ধ হওয়ায় খুশি হচ্ছেন তারাও পার পাবেন না। শওকত মাহমুদ বলেন, ’৭১ সালে সাংবাদিকরা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতায় ভ‚মিকা রেখেছেন। এজন্য বর্তমানে সাংবাদিকদের যে সংগ্রাম চলছে তা জাতীয় সংগ্রামের সাথে জড়িত। তিনি অবিলম্বে সব বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়া এবং সাংবাদিকদের নামে দেয়া মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, সিরাজগঞ্জে সাংবাদিক হত্যার পর পৌর মেয়রকে গ্রেফতার করা হলেও তাকে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে না কেন? নাকি সাংবাদিকদের হত্যার লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের গ্রেফতারের পর দিনের পর দিন রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। সভাপতির বক্তব্যে আবদুল হাই শিকদার বলেন, দেশে এখন ক্রান্তিকাল চলছে। শত শত সাংবাদিক আজ বেকার। তারা পরিবারের লোকজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীসহ কোনো সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়নি এবং কোনো তদন্তও হয়নি। তিনি আরো বলেন, সরকার সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে নানা কালাকানুন তৈরি করছে। এখন আর কেউ সত্য কথা বলতে পারছে না। কথা বললেই তাদেরকে হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- ডিইউজে সাবেক সভাপতি আব্দুস শহীদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ডিইউজে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, ডিইউজের ইউনিট প্রধানদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- রাশেদুল হক, ফয়েজ উল্লাহ ভুঁইয়া, বাছির জামাল প্রমুখ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন- ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আইইবির সাবেক সহ-সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু ও শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, ডিইউজের যুগ্ম-সম্পাদক শাহিন হাসনাত। বিএফইউজে মহাসচিব এম আব্দুল্লাহসহ অসুস্থদের সুস্থতা কামনা ও মৃত সাংবাদিকদের জন্য দোয়া কামনায় মোনাজাত পরিচালনা করেন দৈনিক সংগ্রামের সহকারী বার্তা সম্পাদক সা’দাত হোসাইন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গণমাধ্যম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ