পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ছাঁটাচুল, কোমরে পিস্তল, হাতে হ্যান্ডকাপ, গায়ে জ্যাকেট- যাতে ইংরেজিতে লেখা ডিবি, বিচরণ করছে দামি মাইক্রোবাসে। সংঘবদ্ধ এদের দেখতে পুলিশের এই বিশেষ শাখার সদস্য বলে মনে হলেও এরা আসলে দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারি। মানুষের চোখ ফাঁকি দিতে তাদের এ অভিনব কৌশল। গত শনিবার রাতে এ চক্রের ১১ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের থেকে উদ্ধার করা হয়েছেÑ অস্ত্র, ওয়াকিটকি, ডিবি লেখা জ্যাকেট ও ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য সামগ্রী। ছিনতাইকারি চক্রের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ২৫ থেকে ৪০-এর মধ্যে। তাদের টার্গেট গভীর রাতে প্রাইভেটকার, সিএনজি বা রিকশার যাত্রী। এরা ডিবি পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে গাড়ীতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাদের চোখ মুখ বেঁধে নিয়ে যায় নিরাপদ এলাকায়। ছিনিয়ে নেয় সবকিছু। এরপর একসময় গাড়ী থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এই দলের সদস্যরা ডাকাতিসহ নানা অপকর্মে অংশ নেয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এদের সোর্সও রয়েছে। এদের কাজের ধরন আর নিয়মিত বাহিনীর ধরনের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই।
রাজধানীতে বা দেশে ভুয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য গ্রেফতার নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে রাতের ঢাকায় এদের দাপিয়ে বেড়াবার খবর এর আগেও প্রকাশিত হয়েছে। এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে এদের যাতায়াত নাগরিক নিরাপত্তার বিবেচনায় উদ্বেগজনক। সাধারণভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহনী যে কোন নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। সে বিবেচনা থেকে নাগরিকরা যদি তাদের সহযোগিতা না করে তাহলে প্রচলিত আইনে অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। আইনের এই সুবিধাই গ্রহণ করছে ভুয়া বাহিনী। বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, কেন এবং কিভাবে এটা ঘটছে? এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শৈথিল্য ও উদাসীনতার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। সঙ্গতবিবেচনা থেকেই সংঘবদ্ধ চক্র এই সুবিধা কাজে লাগাচ্ছে। অন্যদিকে ডিবি সম্পর্কে একধরনের আতঙ্ক জনমনে স্বাভাবিকভাবেই রয়েছে। গত কিছুদিনে রাজধানীতে চলমান ছিনতাই রাহাজানি এবং এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকটা উদাসীনতার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। আলোচ্য ক্ষেত্রে ভুয়া হলেও নিয়মিত বাহিনীর অনেকেরই দুর্বৃত্তায়নের সাথে সম্পৃক্তার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। রাজধানীতে হাইজ্যাক থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসার সাথে এক শ্রেণীর পুলিশ সদস্যর কমিশন বাণিজ্য থাকার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতির নাগরিক নিরাপত্তা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। এটাও পরিষ্কার যে, কোথাও কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কার সেটি খুঁজে বের করা কষ্টকর হয়ে উঠছে। এটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক ধরনের ব্যর্থতা না বলে উপায় নেই। নাগরিক নিরাপত্তা উপেক্ষার ফলেই এ রকম অবাঞ্চিত ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারছে। একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করারও কোন কারণ নেই।
বলা যায়, ভুয়া পোশাকধারীদের একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে। এই নেটওয়ার্ক একদিনে বা একক প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠেনি। এর সাথে অন্য কোন কোনমহলও হয়ত যুক্ত। ইতোপূর্বে যারা এধরনের অপরাধে গ্রেফতার হয়েছে তারা কোন উদাহরণযোগ্য সাজা পেয়েছে এমন কথা জানা যায়নি। রাতে এসব অপকর্ম কিভাবে হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এসব ঘটনা, এর শাখা-প্রশাখা খুঁজে বের করতে না পারলে নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। সমাজে প্রকৃত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নাগরিক নিরাপত্তার ভাবনা সক্রিয় করা দরকার। সে লক্ষ্য অর্জনে প্রতিটি পাড়ায়-মহল্লায় প্রকৃত সন্ত্রাসী-মস্তানের খোঁজ-খবর রাখার দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। তারা এব্যাপারে যতœবান হলে অবশ্যই ঘটনা রোধ করা সম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।