Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কুষ্টিয়ায় শতাধিক বইয়ের দোকানে নিষিদ্ধ গাইড-নোট বিক্রির হিড়িক

প্রশাসনের নামে পুস্তক ব্যবসায়ী মালিক সমিতির মোটা অংকের চাঁদাবাজি

| প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এসএম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া : বছরের শুরুতেই কুষ্টিয়ায় বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ নোট-গাইড, সহায়ক ও নকল পাঠ্য বই। শহরের এনএস রোড ও ইসলামিয়া কলেজ সংলগ্ন বইয়ের মার্কেটসহ বিভিন্ন বইয়ের দোকানে প্রকাশ্যে চলছে নোট গাইড বিক্রি। এছাড়াও দোকান মালিকদের সাথে কমিশন চুক্তিতে, শিক্ষকদের পরামর্শে শিক্ষার্থীরা নোটগাইড কিনছে বলে জানা গেছে। নোট বই বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট প্রকাশনার প্রতিনিধিরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ম্যানেজ করে শিক্ষার্থীদের এসব গাইড কিনতে উৎসাহিত করছে। এক্সক্লুসিভ সহায়ক বইয়ের নামে প্রকাশে এসব বই বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কুষ্টিয়ার ৬ উপজেলায় শতাধিক বইয়ের দোকানে এসব বই বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নোট বই প্রকাশনা নিষিদ্ধ করে ১৯৮০ সালে একটি আইন করা হয়। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিগত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময় নোটবই ছাপা ও বাজারজাতকরণ বন্ধের উদ্যোগ নেয়। ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর সরকারের অনুমোদিত নিম্নমানের বই, নোট ও গাইড বই বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের সাহায্য নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়। এ নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রয় সমিতির তৎকালীন সভাপতি আবু তাহের ২০০৮ সালের ফেব্রæয়ারিতে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন।
ওই বছরের ১৩ মার্চ, ১৯৮০ সালের নোট বই নিষিদ্ধকরণ আইনের আওতায় গাইড বই বাজারজাত ও বিক্রি নিষিদ্ধের আদেশ বহাল রাখেন। এরপর আপীল বিভাগে আবেদন করলেও ওই আবেদন খারিজ হয়। এই পরিস্থিতিতে নিষিদ্ধ নোট-গাইড, নকল পাঠ্যবই কেনা ও বিক্রি প্রতিরোধে ফের জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
২০১৩ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্দেশনাপত্র সব ডিসির কাছে পাঠানো হয়। এর অনুলিপি জেলা পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ওসিদের দেয়া হয়েছিল। সেই পত্রে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকের নোট-গাইড, নিম্নমানের বই মুদ্রণ, প্রকাশনা, বিক্রি ও বিতরণের উদ্দেশ্যে মজুদ রাখা অবৈধ বলা হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া শহরের ইসলামিয়া কলেজ মাকেটের প্রায় সব বই দোকানেই এসব নোট গাইড বই মজুদ করে রাখা হয়েছে। নোট-গাইড মজুদ রাখতে নেয়া হয়েছে বিশেষ কৌশলের আশ্রয়। পাশাপাশি দোকানের ওপরেই পাটাতন করেও সেখানে রাখা হয়েছে নিষিদ্ধ নোট বুক। এছাড়াও আশে-পাশের বিভিন্ন রুম গোডাউন হিসাবে ব্যবহার করতে ভাড়া নিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা এসে বই চাইলে তবেই গোপনে সেখান থেকে সরবরাহ করা হয়।
স্থানীয় শিক্ষক সমিতির নেতাসহ কিছু অসাধু শিক্ষক এসব অবৈধ গাইড বই বাজারজাতের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ফায়দা হাসিল করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ক্লাসে বুকলিস্ট দিয়ে নির্দিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নোট গাইড, গ্রামার, ব্যাকরণ বই কিনতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিয়ে বাধ্য করছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের টার্গেটে রেখে নতুন বছরের শুরুতেই জেলা সদর সহ ৬টি উপজেলায় বইয়ের দোকানে অবৈধ গাইড বইয়ে সয়লাব। লাইব্রেরীগুলোতে প্রকাশ্যে চলছে নিষিদ্ধ এক্সক্লুসিভ সহায়ক এসব গাইড বইয়ের প্যাকেজ ব্যবসা। নির্দিষ্ট প্রকাশনার প্রতিনিধিরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ম্যানেজ করে শিক্ষার্থীদের এসব গাইড কিনতে উৎসাহিত করছে। এজন্য তারা শিক্ষক সমিতিসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে অলিখিত চুক্তির মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ প্রদান করছে।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও পুস্তক বিক্রেতাদের গড়া সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে অভিভাবকদের বই কিনতে গিয়েও হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বা এজেন্টরা স্থানীয় পুস্তক ব্যবসায়ীদের সাথে অলিখিত চুক্তি করে বিভিন্ন উপজেলা সদরে বই বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন। স্ব-স্ব উপজেলার বই নির্দিষ্ট ওই কোম্পানী ছাড়া অন্য কোন কোম্পানীর বই বিক্রি করছে না পুস্তক বিক্রেতারা। আর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বুক লিস্ট ধরিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। পুস্তক ব্যবসায়ী মালিক সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি রহমত আলী ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রতি দোকানদের কাছে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করেছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে তারা এসব চাঁদা আদায় করছে বলে তারা জানায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে পুস্তক ব্যবসায়ী মালিক সমিতি এসব টাকা প্রশাসনকে দেয়নি। বইয়ের দোকানদারগণ সমিতির লোকজনের নিকট এসব কথা বললে তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করছেন। তারা ব্যবসায়ী অভয়বাণী দিয়ে নির্বিঘেœ বই বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন। তবে নাম প্রকাশ না করে একাধিক দোকান মালিক বলেন, বর্তমান সৃজনশীল পদ্ধতির কারণে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা বুঝে উঠতে পারে না কিভাবে প্রশ্ন আসবে।
এজন্য তাদের সহায়ক বই প্রয়োজন হয়। তবে ১৯৮০ সালের আইনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে। হয়রানি রোধে আইন প্রত্যাহার ও পুস্তক প্রকাশনা সেক্টরকে সম্মানজনক পেশা হিসাবে স্বীকৃতি দানের দাবি জানান তারা। কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি রহমত আলী ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমরা কোন নোট বই বিক্রয় করছি না। সৃজনশীল পদ্ধতির কারণে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে বুঝে উঠতে পারে সেজন্য এক্সক্লুসিভ সহায়ক বই বিক্রয় করছি। আমরা সমিতি পরিচালনার স্বার্থে পুস্তক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি।ৃ

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুষ্টিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ