পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী হবে বিশ্বের অন্যতম সেরা- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক। গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের রামু সেনানিবাসে কক্সবাজার এরিয়ায় নবপ্রতিষ্ঠিত ৭টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে তিনি এ সন্দীপক বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, দ্রুত ও সমন্বিত আধুনিকায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক সময় বিশ্বের অন্যতম সেরা বাহিনীতে রূপান্তরিত হবে। বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ণে বিশ্বাসী। এ লক্ষ্য সামনে রেখে সেনাবাহিনী ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। তিনি বলেন, এ এলাকায় সেনানিবাস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন এবং পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের নিরাপত্তা ও তদারকির জন্য একটি কম্পোজিট ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্ত সুরক্ষিত করতে বেবুখালিতে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে আরো একটি ডিভিশন। এছাড়া সেনাবাহিনীতে অনেক আধুনিক যানবাহন, হেলিকপ্টার, সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান সেনাসদস্যদের উদ্দেশেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেছেন। তার প্রাণিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এদেশের সম্পদ। দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সাংবিধানিক ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গঠন এবং বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে। তাই পেশাগত ইপ্সিত মান অর্জনের জন্য সকলকে পেশাগতভাবে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ এবং মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে। পবিত্র সংবিধান এবং দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ থেকে আভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।
আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক যে বক্তব্য রেখেছেন, তা সময়োপযোগী, উদ্দীপনামূলক, আশাব্যঞ্জক এবং আমাদের দেশমাতৃকার স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক। উল্লেখ করা প্রয়োজন, দেশের সাধারণ মানুষ আমাদের সেনাবাহিনী সম্পর্কে কী ভাবছে এবং সেনাবাহিনীই কী ভাবছে দেশ ও মানুষ সম্পর্কে, তা কোনো পক্ষই খুব একটা অবগত নয়। দেশের মানুষ বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনীকে ঠিকাদারি কাজ, যানজট নিরসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, রাস্তাঘাট উন্নয়ন ইত্যাদি কাজেই সম্পৃক্ত থাকতে দেখেছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অংশগ্রহণের বিষয়টি জানলেও সেখানে তাদের কাজ সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা তাদের নেই। সেনাবাহিনী প্রধানের এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ তাদের কর্মপরিধি এবং দায়িত্ব সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জানতে পেরেছে। তারা যে শুধুমাত্র একটি সশস্ত্র বাহিনী নয়, বরং দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত, এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এর ফলে সেনাবাহিনী ও জনসাধারণের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক জোরদার হবে। সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা আরো বৃদ্ধি পাবে। সেনাবাহিনী আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতীক। স্বাধীনতা যুদ্ধোত্তর বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তার ভূমিকা অপরিসীম। দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যে কোনো কাজে তার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। দেশের উন্নয়ন কাজে সমানতালে অবদান রেখে চলেছে সেনাবাহিনী। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি এবং ২০৫০ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার যে আকাক্সক্ষা, তার সাথে সেনাবাহিনীও শামিল হয়েছে। আমাদের বিশাল সমুদ্র সীমা রয়েছে, তিনটি সমুদ্র বন্দর রয়েছে, এসবকে কেন্দ্র করে বিশাল অর্থনৈতিক বলয় গড়ে উঠছে এবং উঠবে। বিনিয়োগ স্ফীত আকার ধারণ করবে। সব মিলিয়ে দেশ প্রত্যাশিত উন্নয়ন লক্ষ্যে উপনীত হবে। উন্নয়নকে সুরক্ষিত ও ধরে রাখার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ভূমিকা অত্যাবশ্যক। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলা অপরিহার্য। সেনাবাহিনীকে যুুগোপযোগী ও আধুনিক করে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। আমরা জানি, সেনাবাহিনী প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও এর নিরাপত্তা নিশ্চত করার ক্ষেত্রে প্রশ্নাতীত ভূমিকা রেখে চলেছে। এছাড়া দেশের সার্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ইস্পাত কঠিন অবস্থানে রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম যে দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে, তা আমাদের সেনাবাহিনীর দৃঢ়তার কারণেই। শুধু দেশের মধ্যেই তার কর্মপরিধি সীমিত নয়, জাতিসংঘের হয়ে বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায়ও তার ব্যাপক ভূমিকা ও অবদান রয়েছে। জাতিসংঘে আমাদের সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। সেখানে এর কর্মকর্তা ও সদস্যরা ব্যাপক সুখ্যাতি অর্জন ও প্রশংসিত হচ্ছে। অবিচল আস্থা ও ভরসার কারণেই জাতিসংঘ আমাদের সেনাবাহিনীর উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। সবকিছু বিবেচনায় সেনাবাহিনী প্রধান যে বক্তব্য রেখেছেন, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। তিনি বাস্তবতার আলোকে আমাদের সেনাবাহিনীকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অত্যাধুনিক এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন। তার প্রতিফলন সেনাবাহিনীর কর্মকা-েও পরিলক্ষিত হচ্ছে।
নিশ্চিতভাবেই সেনাবাহিনী প্রধানের আশাসঞ্চারি বক্তব্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও উদ্দীপ্ত করবে। সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা ও ভরসা অধিক বৃদ্ধি পাবে। তিনি যা বলেছেন, তাতে জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যেখানে জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটে, সেখানে জনগণের সাথে একটি সুষম সম্পর্ক গড়ে উঠে। দেশমাতৃকার সুরক্ষা ও সেবায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন থাকে। আমাদের সেনাবাহিনীর প্রতিও জনগণের ভরসা সবসময়ই রয়েছে। ফলে দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে তার বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রতি জনগনের সমর্থন রয়েছে এবং থাকবেÑএটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। সাধারণত সেনাবাহিনী সম্পর্কে সাধারণ মানুষ অনেক কিছুই অবগত নয়। সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে জানার যে সুযোগ পাওয়া গেল, তা একটি বড় প্রাপ্তি। সেনাবাহিনীর প্রতি তাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা যে আরো বাড়বে, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। আমরা সেনাবাহিনী প্রধানকে তার বক্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।