হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
কামরুল হাসান দর্পণ : যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নজরদারি কমিটির রিপাবলিকান চেয়ারম্যান জ্যাসন শাফেৎজ একটি নতুন খসড়া আইন করার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন। আইনটি হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পূর্বে যোগ্যতা হিসেবে প্রার্থীর মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক অবস্থা বিষয়ক আগাম তথ্য প্রকাশ করতে হবে। তিনি বলেছেন, প্রার্থীর এসব তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশিত হলে ভোটারদের পক্ষে সুবিধা হবে সঠিক প্রার্থী বেছে নিতে। এ ধরনের একটি আইন করা যায় কিনা, এ নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ আলোচনা এমন এক সময়ে শুরু হয়েছে, যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাগলামির মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবশ্য শাফেৎজ বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা মাথায় রেখে তিনি এ কথা বলেননি। বরং নির্বাচনী প্রচারের সময় হিলারি ক্লিনটনের স্বাস্থ্য নিয়ে নানা কথা ওঠায় তার মনে হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ দূর করতে এরকম একটি আইনি বিধান থাকা ভালো। শাফেৎজ যতই যুক্তি দেখান না কেন, তার এ প্রস্তাব যে নিজ দলের প্রেসিডেন্টের ফ্রিকিং বা উন্মাদের মতো আচরণকে লক্ষ্য করেই করা হয়েছে, তাতে সন্দেহের কারণ নেই। কারণ আমেরিকার প্রায় আড়াইশ বছরের নির্বাচনে এর আগে কখনই প্রার্থী শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছেন কিনা, এমন চিন্তার উদ্রেক হয়নি। নিশ্চয়ই ট্রাম্পের উল্টাপাল্টা কথাবার্তা এবং তার সিদ্ধান্তে কংগ্রেসম্যানরা এতটাই বিরক্ত যে তা সরাসরি বলতে না পেরে, আইনি প্রক্রিয়ার উছিলায় কথাটি ঘুরিয়ে বলেছেন। তাও বলেছেন, হিলারির স্বাস্থ্যকে ধরে নিয়ে। এর কারণ হচ্ছে, পরাজিতের একশ একটি দোষ থাকে বা খোঁজা হয়। এ কথা এখন বিশ্ববাসী জানে, ক্ষমতায় বসতে না বসতেই ট্রাম্প এক ধরনের উন্মাদের নৃত্য শুরু করেছেন। কলমের এক খোঁচায় সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষেধ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি থেকে বের হয়ে আসাসহ আরও অনেক নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। যারা টেলিভিশনে তার স্বাক্ষর করার ধরন দেখেছেন, তারা নিশ্চয়ই দেখেছেন তিনি অত্যন্ত আরামে বসে, কথা বলতে বলতে কলম চালিয়ে গেছেন। সাথে বিভিন্ন ধরনের রসিকতাও করেছেন। আমেরিকার আর কোনো প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায়নি। ট্রাম্পের এ ধরনের আচরণ ও শারীরিক ভাষা নিশ্চিতভাবেই অস্বাভাবিক এবং মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ। এ বিষয়গুলো এবং নির্বাচন-পূর্ব ট্রাম্পের কথাবার্তা এবং আচরণের বিষয়টি হয়তো শাফেৎজের মনে কাজ করেছে। এ কারণেই হয়তো তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মানসিক, শারীরিক সুস্থতা ও আর্থিক বিষয় জনসম্মুখে প্রকাশের একটি আইন প্রণয়নের কথা বলেছেন। তবে তার এ প্রস্তাবটি স্বাভাবিক দৃষ্টিতে অত্যন্ত ভালো। কারণ হচ্ছে, যিনি দেশের অধিকর্তা হবেন, তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা অত্যন্ত জরুরি। তাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একটি ভুল সিদ্ধান্তে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যায়। আমেরিকায় তো বটেই, সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। এখন ট্রাম্প যে পাগলামি শুরু করেছেন, তাতে তার হাতে থাকা পারমাণবিক বোমা ফেলার যে কোড ও সুইচ রয়েছে, তা যদি টিপে দেন, তবে পৃথিবীর সর্বনাশ ছাড়া আর কোনো গতি থাকবে না। তিনি যেভাবে নাচতে নাচতে নির্বাহী আদেশে সই করেন, এভাবে পারমাণবিক বোমার বোতামে টিপ দিয়ে বসলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এটা অবশ্য আমেরিকার নিজস্ব ব্যাপার। তার প্রেসিডেন্ট পুরা পাগলা নাকি আধা পাগলা, এটা তার ব্যাপার। তাকে সামাল দেয়া তারই ব্যাপার।
দুই.
তবে আমেরিকার মতো শক্তিধর দেশের কাছে আমরা শক্তি সামর্থ্যে অনেক পিছিয়ে থাকলেও আমাদের অনেক শেখার রয়েছে। একটি খারাপ উদাহরণ যেহেতু সামনে রয়েছে, তাই তা থেকে আমরা সতর্ক হতে পারি। আবার শাফেৎজ যে উপলব্ধি করেছেন, তাও আমাদের জন্য কার্যকর হতে পারে। আমাদের দেশে যারা রাজনীতি করেন এবং জনপ্রতিনিধি হন তাদের কথাবার্তা এবং কার্যকলাপ কোনো অংশে ট্রাম্পের চেয়ে কম নয়। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার কথাবার্তা এবং প্রতিপক্ষকে আক্রমণের বিষয় দেখে, তখন অনেকেই বলেছিলেন, এ যেন আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের মতো তিনি রাজনীতি করছেন। অনেকে রসিকতা করে প্রশ্নও তুলেছিলেন, আমাদের দেশের রাজনীতি যে এমন, তা ট্রাম্প জানলেন কী করে? তার কথায় কীভাবে আমাদের দেশের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি হুবহু মিলে গেল? এ ধরনের কথাবার্তা এবং রাজনৈতিক আক্রমণাত্মক ভাষা তো আমাদের দেশেই বেশি প্রচলিত। আমরাই এ ধরনের রাজনীতি করে এবং দেখে অভ্যস্ত। আমাদের যারা জনপ্রতিনিধি, তাদের কারো কারো আচরণ জগৎখ্যাত হয়ে থাকার মতো। এই যেমন চাঁদপুরের হাইমচরের উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারি স্কুলের কচি ছাত্রদের গড়া মানবসেতুর ওপর দিয়ে অত্যন্ত আনন্দ চিত্তে যেভাবে হেঁটে হেঁটে পার হলেন এবং উল্লাস প্রকাশ করলেন, পৃথিবীর আর কোনো দেশে জনপ্রতিনিধিদের এমন আচরণ করতে দেখা গেছে কিনা, তা আমাদের জানা নেই। তিনি অত্যন্ত সাবলীলভাবে ছাত্রদের মেরুদ-ের ওপর দিয়ে নিজের মেরুদ- সোজা করে হেঁটে গেছেন। আদিম যুগে ক্ষমতাবানদের অনেক নৃশংস কর্মকা- সম্পর্কে ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি। এগুলো সে সময়ের জন্য বর্বর ঘটনা হিসেবেই ইতিহাসে ঠাঁই পেয়েছে। এসব ঘটনা পড়ে এবং জেনে আমরা শিহরিত হই। আজকের সভ্য দুনিয়ায় এমন ঘটনা কেউ স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে না। অবশ্য নূর হোসেন পাটোয়ারির সন্তানটি যদি ওই মানব সেতুতে থাকত, তাহলে তার মেরুদ-ের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতেন কিনা, তা একমাত্র তিনিই ভালো বলতে পারবেন। হয়তো যেতেন। কারণ মানসিক বিকৃতি এবং বিকৃত উল্লাসের খায়েশ যখন জাগে, তখন কোনো কিছুই অসম্ভব মনে হয় না। কারণ সে বেহুঁশ হয়ে থাকে। পাগলার তো হুঁশ-জ্ঞান বলে কিছু থাকে না। যদিও সমাজবিদরা পরিশুদ্ধ ভাষায় বলেছেন, সমাজের প্রভাবশালীরা যখন ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়, তখন তারা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবেন। মনে করেন, তারাই আইন তৈরি করেন এবং এ আইন তাদের ক্ষেত্রে নয়, অন্য সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আইনে তাকে ধরার কিছু নেই। এমন মানসিকতা যখন তাদের পেয়ে বসে, তখন তারা যে কোনো কিছু করতেÑ তা আইনসিদ্ধ হোক বা না হোক কিংবা মানবিক বা অমানবিক হোক, তা করতে দ্বিধা করে না। তাদের কুকর্মের সাফাই গাওয়ার লোকেরও অভাব হয় না। ঘটনার পরপরই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেছেন, ছাত্ররা পদ্মা সেতুর মডেল হয়েছিল। প্রতি বছরই এ ধরনের মডেল তারা তৈরি করে। তবে এভাবে কোনো জনপ্রতিনিধি ছাত্রদের মেরুদ-ের ওপর দিয়ে জুতা পায়ে হেঁটে যান কিনা, তা তিনি জানাতে পারেননি। অর্থাৎ একজন শিক্ষকও জনপ্রতিনিধির হয়ে সাফাই গেয়েছেন। তিনি এ সাফাই গাইতে একটুও দ্বিধাবোধ করেননি। এতে তার মূল্যবোধ এবং মানসিক সুস্থতার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। একেবারে বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিলেন। হতে পারে ক্ষমতাধর ব্যক্তির প্রভাবের কারণে তাকে কা-জ্ঞানহীন হতে হয়েছে। যাই হোক, পদ্মা সেতু নির্মাণের আগেই একজন জনপ্রতিনিধি স্কুলের কচি ছাত্রদের শরীর দ্বারা গঠিত পদ্মা সেতুর মডেলের ওপর দিয়ে উল্লাসে হেঁটে ফেলেছেন। দেশের ভবিষ্যৎ যে শিক্ষার্থী এবং যারা এক সময় পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যাবে ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে, জনপ্রতিনিধি নুরুল ইসলাম পাটোয়ারি যেন তাদের মেরুদ- ভেঙে দিতেই অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এ ধরনের অসুস্থ মানসিকতার জনপ্রতিনিধি হলে ওই এলাকার সাধারণ মানুষের ভালো থাকার কথা নয়। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আরেক জনপ্রতিনিধি মেয়র মিরুকে শটগান হাতে যেভাবে যুদ্ধংদেহী অবস্থায় দেখা গেছে, তাতেও মানসিক বিকৃতির প্রকাশ ঘটেছে। তার সাথে প্রতিপক্ষের মারামারি, হানাহানি ঘটলেও তিনি গুলি করে বসলেন এক সাংবাদিককে। এ ধরনের মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তিরা যখন জনপ্রতিনিধি হয়, তখন এলাকায় শান্তি থিতু হয়ে থাকবে, তা মনে করার কারণ থাকতে পারে না।
তিন.
নুরু-মিরুদের মতো এমন জনপ্রতিনিধি আমাদের দেশে আর কত আছে, তা আমরা জানি না। তবে মাঝেমধ্যে জনপ্রতিনিধিদের যে দাপটের কথা শোনা যায়, তাতে বোধকরি সংখ্যাটি কম নয়। এমন কথা প্রায়ই শুনি, অমুক এমপি অমুক এলাকার গডফাদারে পরিণত হয়েছেন। কক্সবাজারের একজন এমপি তো ইয়াবা স¤্রাট হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছেন। দুর্নীতির কারণে তার তিন বছরের সাজা হলেও কিছু দিনের মধ্যে তিনি ছাড়া পেয়ে যান। ময়মনসিংহের এক এমপির এইটটি বাহিনীর কথাও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তার আশিজনের এক বিরাট ক্যাডার বাহিনীর দাপটে এলাকার মানুষ তটস্থ হয়ে থাকে। নারায়ণগঞ্জের এক এমপির কথাও বহুল প্রচলিত। তিনি সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। অথচ তার প্রভাব এতটাই যে, কেউ টুঁ শব্দ করতে পারে না। বলাবাহুল্য, আমাদের দেশে জনপ্রতিনিধি মানেই সে অত্যন্ত প্রভাবশালী। তার দাপটে এলাকা সর্বদা কম্পমান হয়ে থাকে। তিনি তখন জনপ্রতিনিধি না হয়ে সামন্তযুগীয় অত্যাচারী জমিদারে পরিণত হন। ভাবেন তিনি রাজা এবং বাকি সব প্রজা। এটা চিরায়ত একটা ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। অথচ স্বাভাবিক অর্থে জনপ্রতিনিধি মানে জনদরদী। জনগণের সেবা করা এবং তাদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকাই তার কাজ। জনদরদীরা যদি জনভীতির কারণ হয়ে ওঠেন, তবে জনগণের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য কোনোভাবেই সুস্থ থাকতে পারে না। এই যে দেশব্যাপী ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা নিজেরা-নিজেরাই মারামারি, খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়েছেÑ এটা কোনো সুস্থ লক্ষণ হতে পারে না। ক্ষমতা ও আধিপত্যের ভাগাভাগি নিয়ে তাদের যে উন্মত্ততা, তাতে দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের লোকজনই যদি তা-বীয় কর্মকা-ে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে কেউ স্বস্তিতে থাকতে পারে না। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে বারবারই বলা হচ্ছে, অন্যায় করে কেউ পার পাবে না, সে দলের যত বড় নেতাই হোক। দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের হুঁশিয়ারিতে কোনো কাজ হচ্ছে না। নেতাকর্মীরা আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তার করা নিয়ে মারামারি ও খুনোখুনি করার সময় কোনো হুঁশিয়ারিকেই আমলে নিচ্ছে না। তাদের মধ্যে এক ধরনের উন্মাদনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই মানসিক সুস্থতার লক্ষণ নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নেতা-কর্মীদের মাঝে এ ধরনের প্রবণতা দেখা দেয়, যখন কোনো দলের শীর্ষ পর্যায়ে মানসিক অসুস্থতা থেকে। আমরা দেখেছি, শিশু গুলি খেয়ে মরলে ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে’ বলে বক্তব্য দিতে। ড্রাইভারদের ভুলে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ার ফলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীকে বলতে শুনেছি, ‘দুর্ঘটনায় কারো হাত নেই’। রানা প্লাজা ধসে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটার পর এক মন্ত্রীকে বলতে শোনা গেছে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা বিল্ডিংয়ের খুঁটি ধরে ধাক্কাধাক্কি করাতে তা ধসে পড়েছে। সম্প্রতি শাহবাগে পুলিশ সাংবাদিকদের পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে ফেললেও মন্ত্রীকে বলতে শুনেছি, একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। এসব বক্তব্য যখন ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মুখ থেকে বের হয়, তখন তাদের মানসিক সুস্থতার বিষয়টি সামনে চলে আসা অস্বাভাবিক নয়। সার্বিকভাবে আমাদের রাজনীতির সংস্কৃতির দিকে যদি তাকাই তবে দেখব, কি ক্ষমতাসীন, কি বিরোধী দলÑ সব দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্য শুনলে তাদের মানসিক সুস্থতা-অসুস্থতার বিষয়টি নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। সুস্থ না অসুস্থÑ এ ধরনের দ্বিধার জন্ম দেয়। অনেকে একে অপরকে বক্তব্যের মাধ্যমে আক্রমণ করতে গিয়ে এমন সব কথা বলেন, যাতে সভ্যতা-ভব্যতা বলতে কিছু থাকে না। ব্যক্তিগত আক্রমণ করে এমন আরও যেসব কথা বলা হয়, যা শুনে মনে হতে পারে, এটা কী মানসিক সুস্থতার লক্ষণ! বলার অপেক্ষা রাখে না, যে কোনো সুস্থ মানসিকতার মানুষ বলবেন, আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের কথাবার্তায় সুস্থ মানসিকতার কথাবার্তা এবং তা চর্চা খুব কমই হয়। তাদের কথা শুনতে শুনতে আমরাও অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। ওসব রাজনৈতিক কথাবার্তা বলে উড়িয়ে দেই। এটা ভাবি না, যারা দেশ পরিচালনা করছেন বা করবেন, তাদের কথা ‘বাত কি বাত’ বা কথার কথা হবে কেন? এসব কথা উড়িয়ে দেয়া বা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো জো নেই। এই প্রবণতাও এক ধরনের মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ। বলা যায়, আমরা এক অসুস্থ মানসিকতার রাজনৈতিক ধারার মধ্যে পড়ে গেছি। যে ধারায় নিজেকেও সুস্থ ভাবা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
চার.
দেশের প্রধান যদি মানসিকভাবে উড়নচন্ডি বা ভারসাম্যহীন হন তবে গোটা শাসন ব্যবস্থাই এলোমেলো হয়ে পড়ে। আমেরিকা তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। পাগলাকে সাঁকো নাড়াতে দিলে কী টালমাটাল অবস্থা হয়, তা এখন আমেরিকায় দেখা যাচ্ছে। মানসিক ভারসাম্যহীন এক রাষ্ট্র প্রধানের হাতে শাসন ব্যবস্থা পড়লে পুরো দেশের হাল কি হয়, তা এখন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। আমেরিকানরা এখন এ পাগলার পাল্লায় পড়ে দিশাহারা। আমেরিকার আদালতকেও পাগলার আদেশ-নির্দেশ রদ করতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। এতে পাগলার পাগলামি আরও বেড়ে যাচ্ছে। আমেরিকায় এখন এ অবস্থাই চলছে। ভবিষ্যতে যে আরও অনেক পাগলামি দেখতে হবে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। এ পরিস্থিতি বিবেচনা করেই ট্রাম্পের দলের কংগ্রেসম্যান শাফেৎজ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ঠিক আছে কিনা, তা আগেভাগে প্রকাশ করার জন্য একটি আইনের প্রস্তাব করেছেন। এ আইনটি যে আমেরিকার জন্য এখন খুবই প্রয়োজন, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। আমাদের দেশেও এ ধরনের একটি আইন বা বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত। কারণ ট্রাম্পের মতো রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধি আমাদের দেশে কোনো অংশে কম নেই। তাদের কথাবার্তা এবং কর্মকা- অনেক সময় ট্রাম্পকেও হার মানিয়ে দেয়। যদিও পাগলের নির্বাচন করার কোনো বিধান নেই। তারপরও যে কোনো নির্বাচনের আগে প্রার্থীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা নেয়া হলে, রাজনীতির ধরন বদলে যেতে পারে। দলের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের কথাবার্তা এবং আচার-আচরণের ওপর গ্রুমিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হলে, রাজনীতিতে ইতিবাচক ধারার সূচনা হবে। ক্ষমতায় গেলেই সব আমার, এ মানসিকতার পরিবর্তে সব জনগণেরÑ আমি শুধু সেবক, এমন মনোভাব গড়ে ওঠা দরকার। এতে মারদাঙ্গা এবং ভাঙচুরের মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটবে। নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের আচরণবিধি থাকলেও প্রার্থীর নিজের আচরণ যদি পরিবর্তন না হয়, তবে কাগজে-কলমের আচরণ কোনো দিনই কাজে আসবে না। কাজেই প্রার্থীদের সুস্থ মানসিকতার বিষয়টির দিকে রাজনৈতিক দলগুলোর গুরুত্ব দেয়া উচিত। অসুস্থ মানসিকতার লোকজন জনপ্রতিনিধি হলে কী হয়, তার ভূরি ভূরি উদাহরণ যেমন রয়েছে, তেমনি সাম্প্রতিক সময়ে নতুন নতুন নজিরও স্থাপিত হয়েছে। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের উচিত হবে, জনপ্রতিনিধি মনোনয়নের ক্ষেত্রে যেন তার মানসিক সুস্থতার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।