পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রেসিডেন্ট মো. আদুল হামিদ সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদাকে ১২তম নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া সাবেক সচিব মো.রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানম এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরিকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। গত সোমবার রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এই নিয়োগ আদেশ জারি করা হয়েছে। অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলে আগামী বৃহস্পতিবার সদ্য নিয়োগ পাওয়া সিইসিসহ তিনজন নির্বাচন কমিশনার নতুন কর্মস্থলে যোগদান করবেন। অন্য একজন নির্বাচন কমিশনার আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি যোগদান করতে পারেন। নিয়োগ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকেই তাদের নিয়োগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন,বড় দুইদল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রস্তাবিত তালিকা থেকে দু’জন করে নাম সুপারিশ করেছে সার্চ কমিটি। এর মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে মাহবুব তালুকদার ও ড. তোফায়েল আহমেদ এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আবদুল মন্নান ও ব্রিগেডিয়ার জেনরেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরির নাম সুপারিশ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের উদ্দেশ্যে সুপারিশ প্রদানের জন্য ২৫ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন। সোমবার কমিটি তাদের রিপোর্ট দেয়।
সংগত বিবেচনা থেকেই এবারে নতুন নির্বাচন কমিশনের আলোচনা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিস্তৃত হয়েছিল। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনায় যারপরনাই ব্যর্থতার কারণে রকিব কমিশনের পর কে বা কারা এই পদে আসীন হতে যাচ্ছেন তা বিশেষ বিবেচনায় উঠে আসে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে অটল থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এ জন্য সংলাপেরও আহ্বান জানানো হয়েছিল। প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে গত ডিসেম্বর মাসে রাজনৈতিকদলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু হয়েছিল বিএনপিকে দিয়ে। এরপর ৩১টি রাজনৈতিক দলের সাথে তিনি এ নিয়ে কথা বলার পর ১৯৭৩ ব্যাচের প্রশাসন ব্যাচের সাবেক কর্মকর্তা বিগত বিএনপি সরকারের আমলে যুগ্ম সচিব থাকাকালে বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া জনাব নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভূতাপেক্ষ সচিব হয়েছিলেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পালনের অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, সাংবিধানিক দায়িত্ব আমি নিরপেক্ষভাবে সংবিধান ও আইন মেনে পালন করবো। এবারে নির্বাচন কমিশন গঠন উপলক্ষে গঠন করে দেয়া সার্চ কমিটি বেশ খানিকটা ব্যতিক্রমী ও প্রশংসনীয় অবস্থান নিয়েছিলেন। তারা দেশের বিশিষ্টজনদের সাথেও মত বিনিময় করেছিলেন। নির্বাচন কমিশন গঠনে পেশাদারী ও মানবিক গুণাবলী বিবেচনা করে অনুসন্ধান কমিটিকে নাম সুপারিশ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। তাদের আশা ছিল অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ ধরে দলনিরপেক্ষ বিবেকবান সাহসী প্রজ্ঞাবান পরিশ্রমী ও সমযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে ইসি গঠন করা হবে, যাদের মেরুদ- থাকতে হবে শক্ত। কোন হুমকিকে পরোয়া করবে না। তাদের এই প্রত্যাশার সাথে জাতির প্রত্যাশা ছিল সংগতিপূর্ণ। এমনকি রাজনৈতিকদলগুলোর সাথে অলোচনার পরে প্রেসিডেন্ট জাতিকে আশ্বস্ত করেছিলেন প্রস্তাব ও মতামত বিবেচনা করে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। বাস্তবত বিদ্যমান পরিস্থিতে এটা বলাযায়, ঘোষিত কমিটিতে জাতি হতাশ হয়েছে।
একথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রচ- দলীয়করণের অভিযোগ রয়েছে। সকলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রয়োজনে যে ধরনের দলনিরপেক্ষ দক্ষও মেরুদ- সম্পন্ন কমিশনের প্রয়োজন ছিল বোধকরি সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সার্চ কমিটি যাদের নাম দিয়েছে তাদের মধ্যে অনেক যোগ্য, দক্ষ মেধাবী ব্যক্তির নামও ছিল। যাই হোক, বিদ্যমান বাস্তবতায় এটা বলা যায় রাজনৈতিক দলগুলো যেসব নামের সুপারিশ করেছে সেগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করা জরুরি। নির্বাচনে যারা স্ট্যাকহোল্ডার কমিশন যদি তাদের অস্থায় আনতে না পারেন তাহলে পরিস্থিতি ভিন্নখাতে প্রবাহিত হবার আশঙ্কা অমূলক নয়। নতুন নির্বাচন কমিশনের নাম ঘোষিত হবার পর সংগত বিবেচনা থেকেই মনে হতে পারে তাহলে এত নাটকের প্রয়োজন কি ছিল। সংগত কারণেই হয়ত এ ঘোষণার নেতিবাচক প্রভাব রাজনৈতিক দলগুলোর উপরও পড়বে। রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে প্রেসিডেন্টের উপর যে আস্থা রেখেছিল তিনি তার সম্মান রেখেছেন সেটি বোধহয় বলা যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।