Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজধানীর উত্তরায় গত বুধবার চলন্ত প্রাইভেট কার থামিয়ে গাড়িতে থাকা মা ও মেয়েকে গুলি করে ৬ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার একদিন পর গত সোমবার সাভারে প্রায় একই ধরনের ডাকাতির পুনরাবৃত্তি ঘটল। এবার সশস্ত্র মটরসাইকেল আরোহী ডাকাতরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে চলন্ত মিনিবাস থামিয়ে তিনজন যাত্রীকে গুলি করে ৬ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। গুলিবিদ্ধ ভুক্তভোগীরা এখন হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। তবে পুলিশ এখনো দুর্বৃত্তদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বাহিনী ও মন্ত্রীদের মধ্যে কোন উদ্বেগ না থাকলেও সমাজের প্রতিটি স্তরেই এখন চরম নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। ঘরে বাইরে, রাজপথে, যানবাহনে কেউই নিরাপদে চলাচল ও বসবাস করতে পারছে না। যেখানে রাজনীতির প্রভাবশালীরা প্রকাশ্য হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে রক্তপাত ঘটাচ্ছেন। সংসদ সদস্য থেকে সংবাদকর্মী পর্যন্ত এদের হাতে প্রাণ হারাচ্ছেন। সেখানে সাধারণ মানুষ নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত হওয়াই স্বাভাবিক। ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাস হানাহানি ও আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা বাদ দিলেও সাম্প্রতিক সময়ে রাজপথে ও হাইওয়ের যানবাহনে প্রকাশ্য দুর্ধর্ষ ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনাও বেড়ে চলেছে।
তথাকথিত উন্নয়নের চাইতে সব মানুষের জানমালের নিরাপত্তা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। সরকার দেশকে উন্নয়নের মহাসরণিতে নিয়ে যাচ্ছে বলে হরহামেশা দাবী করলেও জননিরাপত্তা পরিস্থিতি যেন ততটাই নাজুক। সরকারী বাহিনীগুলো বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি এবং জঙ্গিবাদের হুমকি মোকাবেলার নানাবিধ উদ্যোগ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় তাদের ততটা গরজ বা তৎপর দেখা যায় না। এ ধরনের নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আশা করা যায় না। বিশেষত, ব্যবসায়িক লেনদেন ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নস্যাৎ হয়ে যেতে পারে। রাজধানীর উত্তরা ও সাভারে সংঘটিত দু’টি ডাকাতির ঘটনাই ঘটেছে প্রকাশ্য দিনের আলোতে। ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গিয়ে রাজপথে, হাইওয়েতে ও গণপরিবহনে সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের হাতে সর্বস্ব হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। যাত্রীভর্তি চলন্ত মিনিবাস থামিয়ে তিনজনকে গুলি করে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে নির্বিঘেœ মোটর সাইকেল চালিয়ে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের বর্তমান নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি যে কতটা নাজুক তা সহজেই আঁচ করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ব্যস্ত রাস্তায় সাভার ও আশুলিয়া থানার কাছাকাছি এলাকায় সকালবেলা যাত্রী বোঝাই বাসে এমন দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনার সময় আশপাশে কোন পুলিশ না থাকা এবং ঘটনাটি তাদের নজরে না আসা অস্বাভাবিক। এমনকি ঘটনার পর দু’দিনেও কেউ ধরা না পড়া এবং টাকা উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন ব্যর্থতাও মেনে নেয়া যায় না।  
হাইওয়েতে চলন্ত বাস থামিয়ে মাত্র তিন-চারজন লোক গাড়িতে উঠে টার্গেটেড যাত্রীদের উপর গুলি চালিয়ে দিনে দুপুরে ডাকাতির ঘটনার সময় অন্য যাত্রীদের কেউ প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের ঝুঁকি নিতে সাহস পায়নি। এ যেন আমাদের বর্তমান সমাজ বাস্তবতারই একটি খ-চিত্র। কিছু সংখ্যক দুর্বৃত্ত ও প্রভাবশালী ব্যক্তির হাতে পুরো সমাজ যেন জিম্মি হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকা সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্তরাও আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে সমাজ বিরোধী অবৈধ কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। গতকাল প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে গত ১২ মাসে ৭৭টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা শহরে এবং সারাদেশে এ সংখ্যা প্রায় শতগুণ বেশী। একদিকে সরকারের সংশ্লিষ্টরা জোরেশোরে উন্নয়নের শ্লোগান তুলছে, অন্যদিকে প্রায় প্রতিদিনই বেপরোয়া দুর্বৃত্তদের হাতে, হত্যা, গুম, ছিনতাই, অপহরণ ও ডাকাতির শিকার হচ্ছে সর্বস্তরের মানুষ। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্য সব ধরনের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। প্রতিবছর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বহু সদস্যের বিরুদ্ধে নানা ধরনের বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হলেও অপরাধের মাত্রা ও সংখ্যা কমছে না। তবে নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন মামলায় অভিযুক্ত র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির দৃষ্টান্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধ প্রবণ সদস্যদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রাজপথে ও হাইওয়েতে ডাকাতির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না হলে জননিরাপত্তার উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশে বিদ্যমান সামাজিক বিশৃঙ্খলা, মাদকসহ নানাবিধ অপরাধ প্রবণতার জন্য অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং সুশাসনের অভাবকে দায়ী করছেন। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এ অধিকার রক্ষায় ব্যর্থতার কোন ক্ষমা বা আপস নেই।  



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন