Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুশ্চিন্তা ও বিষন্নতায় মুখের সমস্যা

| প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দুশ্চিন্তা করেন না এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া  কঠিন। দুশ্চিন্তা করতে করতে অনেকই আবার বিষণœœতায় ভোগেন। দুশ্চিন্তা প্রায়ই হতে পারে, যেহেতু ব্রেন ঠিকভাবে দুটি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদন ও সঞ্চালন করতে পারে না। নিউরোট্রান্সমিটারগুলো হলো গাবা এবং সেরোটোনিন। যখন স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ব্রেন পরিমাণ মতো গাবা এবং সেরোটোনিন উৎপাদন করতে পারে না যা ব্রেনকে বলবে শান্ত হয়ে যাও। ঠিকভাবে খাবার গ্রহণ না করলে, মানসম্মত খাবার না খেলে, বংশগত এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ ইত্যাদি কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় মানসিক দুশ্চিন্তা ও বিষণœতা একজন মানুষের একসাথে থাকতে পারে। এর ফলে মুখের আলসার, শুষ্ক মুখ, লাইকেন প্ল্যানাস, বার্ণিং মাউথ সিনড্রোম এবং টেম্পেরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্টের অচল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। ট্রাইসাইক্লিক বিষণœতানাশক ওষুধ সেবনের কারণে শুষ্ক মুখের সৃষ্টি হয়। লালার প্রবাহ কমে যেয়ে শুষ্ক মুখ সৃষ্টি হওয়ার কারণে দন্তক্ষয়ের সৃষ্টি  হতে  পারে। এ ছাড়া বিষণœতানাশক ওষুধ সেবনের কারণে খাবারের স্বাদ গ্রহণে ব্যাঘাত ঘটে এবং রোগীরা তাদের খাবারে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে চায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে  বিষণœতানাশক ওষুধ পরিবর্তন করে অনেক সময় ভাল ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসিড উদগীরণ হয়ে দাঁতের এনামেলের ক্ষয় হয়ে থাকে। ফলে দন্তক্ষয়ের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কারো বার্ণিং মাউথ সিনড্রোম বা মুখের জ্বালাপোড়া থাকলে সেটি দুশ্চিন্তা এবং বিষণœতার ইঙ্গিত দিতে পারে। দুশ্চিন্তার কারণে অনেকেই রাতে ঘুমের মধ্যে দাঁত কিড়মিড়  বা কামড়ায় যা দাঁতের এনামেল বা সাদা বহিরাবরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। ক্রমাগত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকলে দিনের বেলায়ও কেউ নিজের অজান্তে একইভাবে দাঁত কিড়মিড় বা কামড়াতে পারে। ঘুমের মধ্যে দাঁত কামড়ালে ঘুম থেকে উঠার সময় মাথাব্যথা হতে পারে। দাঁত কামড়ানের কারণে দাঁতে ঘর্ষণজণিত ক্ষয় বা ইরোশন এবং চোয়ালে ব্যথা হতে পারে। দুশ্চিন্তা ও বিষণœœতার  কারণে মুখের সমস্যা ছাড়া অন্যান্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে। দুশ্চিন্তার কারণে বাহু, কাঁধ এবং পিছনের মাংস পেশীতে হালকা ব্যথা হলেও হতে পারে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে আপনার ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। দুশ্চিন্তা দীর্ঘ সময়ের জন্য এবং বার  বার দুশ্চিন্তা করলে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হতে পারে। দুশ্চিন্তা করলে রক্তনালী, হৃদযন্ত্র ও কিডনী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করতে পারে। তখন মুখে ক্ষত থেকে শুরু করে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়াটাই স্বাভাবিক। বিষণœœতা আপনার হার্টের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে বিষণœতা এবং হৃদরোগের সাথে যোগসূত্র রয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো বিষণœœতা হৃদরোগের অবস্থার অবনতি ঘটাতে  পারে, আবার হৃদরোগ বিষণœœতাগ্রস্ত রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে। বিষণœœতা হৃদরোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রিস্ক ফ্যাক্টর। শুধু তাই নয় উচ্চ কোলস্টেরল এবং রক্ত চাপের জন্য হুমকি স্বরূপ।
দুশ্চিন্তা ও বিষণœœতা শুধু মুখের সমস্যা নয় বরং শারীরিক নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। যার কারণে স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত  হয়। তাই ক্রমাগত দুশ্চিন্তা থেকে বিরত থাকুন এবং মুখের বা শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। পরিশেষে সবার একটি কথা জানা প্রয়োজন যে দুশ্চিন্তা করলে কোনো অবস্থাতেই আপনার মুখের ক্ষত  বা ঘাঁ পুরোপুরি ভাল হবে না। কিছু দিনের জন্য ভাল হয়ে আবার দেখা দিতে পারে। তাই  একটু সচেতন হলে জীবন অনেক  সুন্দর হয়ে উঠবে।

ষ ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল : ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল : ফৎ.ভধৎঁয়ঁ@মসধরষ.পড়স



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন