পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
নদীর অকাল মরণ রোধের কোনো পথ নেই, ব্যবস্থা নেই। নদীর দেশ থেকে একের পর এক নদী হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময়ের অনেক নদীরই এখন অস্তিত্ব নেই। কথায় বলে, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। অথচ অবস্থা এমন, একদিন হয়তো নদীই থাকবে না। তখন দেশের অস্তিত্ব কতটা বিপন্ন ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে, সেটা আন্দাজ করা মোটেই কঠিন নয়। বড় নদী বলতে আমরা বুঝি পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলী, তিস্তা প্রভৃতিকে। এসব নদীতে শুকনো মওসুমে এখন আর পানি তেমন থাকে না। হাজামজা খালের মতো হয়ে যায়। কোথাও কোথাও দেখা যায় বিশাল বিশাল চর, ক্ষুদ্রাকৃতির চরের তো কোনো লেখাজোখা নেই। রবীন্দ্রনাথের এক কবিতায় আছে “আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে।” বৈশাখ মাসে হাঁটুজল থাকা ছোট নদী এখন খুঁজে পাওয়া ভার। অনেক বড় নদীতেই হাঁটুজল থাকে না। পৌষ-মাঘ মাসেই এসব নদীর পানি তলানিতে এসে পৌঁছায়। গত কিছুদিনের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, যমুনা-তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রের পানিপ্রবাহ মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। পদ্মা-মেঘনার অবস্থাও তথৈবচ। এসব নদীতে অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। নৌ যোগাযোগে অনেক ক্ষেত্রেই অচলাবস্থা নেমে এসেছে। সেচ কাজে ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। নদীকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এই ভয়ংকর ও উদ্বেগজনক চিত্র প্রতি বছরেরই সাধারণ চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহসা এই চিত্রের পরিবর্তন ঘটবে, এমনটি মনে করার কোনো সুযোগ নেই। নানাবিধ কারণে নদীর অপমৃত্যু, নৌ-পথের সংকোচন, প্রকৃতি-পরিবেশ-জীববৈচিত্র্যের বেহাল এবং উৎপাদন ও জীবন-জীবিকা ব্যাহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ অভিন্ন নদীর উজান থেকে ভারতের একতরফা পানি ছিনতাই। যতদিন এটা ঘটতে থাকবে ততদিন নদীতে পানির আকাল ঘুচবে না। এছাড়া প্রাকৃতিক কারণেই ক্রমশ নদী ভরাট হচ্ছে, নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে। এই সঙ্গে আছে নির্বিচার দখল ও দূষণ।
নদী বাঁচাও আন্দোলনের হিসাবে ৪৫ বছর আগে দেশে নদীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩শ’। এখন তা ৭শতে নেমে এসেছে। এর মধ্যে প্রবহমান নদীর সংখ্যা অর্ধেক। আরেক হিসাবে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত পানি না থাকায় বিলীন হওয়ার পথে এক-তৃতীয়াংশ নদী। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, কাগজ-কলমে দেশে সাড়ে ৩শ’ নদীর অস্তিত্ব আছে। এর মধ্যে প্রায় ১শ’ নদীতে বছরের বেশিরভাগ সময়ই পানি থাকে না। কিছুদিন আগে পদ্মার পানির ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১শ’ নদী পানি না থাকায় শুকিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আরেক খবরে তিস্তার পানির ওপর নির্ভরশীল ৩০টিরও অধিক নদী শুকিয়ে গেছে বলে বলা হয়েছে। অন্যান্য নদীর শাখা-উপশাখাগুলোর অবস্থাও যে এর চেয়ে ভিন্ন নয় তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। নদী হারিয়ে গেলে, নদী প্রবাহ কমে গেলে নৌপথ হ্রাস পাওয়ার কথা। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭২ সালে নৌপথ ছিল ৩৭ হাজার কিলোমিটার। ২০০৬ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার কিলোমিটারে। ২০১০ সালে তা কমে আসে ৪ হাজার কিলোমিটারে। শুকনো মওসুমে নৌপথ ২ হাজার ৬শ’ কিলোমিটারেরও কমে নেমে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালে দেশে কোনো নদীপথ থাকবে কিনা সন্দেহ।
বাংলাদেশ নদীকেন্দ্রিক ও নদীনির্ভর দেশে। নদীকে ভিত্তি করেই এখানে জনবসতি, জীবন-জীবিকা, অর্থনীতি ও উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এর প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রতিবেশ, আবহাওয়া সবকিছুর ওপরই রয়েছে নদীর বিশাল ও ব্যাপক প্রভাব। দেশের অস্তিত্ব ও মানুষের ভবিষ্যৎ নদীর অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে নদী বাঁচানোর কোনো বিকল্প নেই। নদী বাঁচানোর উপায় কি? প্রথমত, অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সকল প্রকার দখল ও দূষণ থেকে নদী রক্ষা করতে হবে। তৃতীয়ত, নদী প্রবহমান ও নাব্য রাখার জন্য ড্রিজিং এবং খনন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সরকারের কোনো জোরালো উদ্যোগ ও ভূমিকা নেই। সরকার বোধ হয় ধরেই নিয়েছে পানি পাওয়া যাবে না। পানির বিষয়ে সরকারের এই গাছাড়া ভাব দুর্ভাগ্যজনক। মানুষ পানির ন্যায্য অধিকার চায়। সরকার এটা এড়িয়ে যেতে পারে না। নদী যে বেপরোয়াভাবে দখল ও দূষণের শিকার হচ্ছে তা প্রতিরোধ করার ব্যাপারে সরকারের মনোযোগ ও পদক্ষেপ সন্তোষজনক নয়। নদী ড্রেজিং, নদী শাসন, নদী সংস্কার ও খননের ক্ষেত্রেও কোনো সুসংবাদ নেই। এসব ক্ষেত্রে গৃহীত কর্মসূচিগুলো শোচনীয় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, নদী ড্রেজিং ও উন্নয়নের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। আরো শোনা যাচ্ছে, নৌপথ নাব্য রাখতে ২২ লাখ কোটি টাকার মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। শুধু পরিকল্পনা নেয়ার কথা কোনো কাজের কথা নয়। দ্রুত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটাই এখন প্রয়োজন ও জরুরি। যে কোনোভাবে নদী বাঁচাতে ও রক্ষা করতে হবে, নৌপথ পুনরুদ্ধার করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।