Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঝিনাইদহের যে পরিবারে কোনো ছেলে সন্তান বাঁচে না!

| প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোস্তফা মাজেদ, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের একটি পরিবারে কোন ছেলে সন্তান বাঁচে না। ১৮ বছর পার হওয়ার আগেই ওই পরিবারের ছেলে সন্তানরা মৃত্যুবরণ করে। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন এমন একটি পরিবারের সন্ধান মিলেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ভেন্নতলা গোপিনাথপুর গ্রামে। এই গ্রামের মজিবর রহমান স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করলেও তার দুই সন্তান বাবু ও আব্দুল সাত্তার ১৫ বছর বয়সে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। মজিবর রহমানের একমাত্র মেয়ে মঞ্জু বেগমের তিন ছেলে সন্তানের অবস্থাও করুণ। এর মধ্যে তার বড় ছেলে মনিরুল ইসলাম ১৮ বছর পূর্তির আগেই মৃত্যুবরণ করেছে। এখন বাকি দুই সন্তান আনারুল ইসলাম (১০) ও সাবিকুল ইসলাম (৮) প্রতিবন্ধী হয়ে বিছানায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে। মজিবর রহমানের স্ত্রী সিতা বেগম জানান, তার তিন সন্তানের মধ্যে দুইটি ছেলে ও একটি মেয়ে। বড় ছেলে বাবু ১৮ বছরে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর ছেলে, ছেলের বয়স ১৬ বছর হলেও সেও মারা যান। সিতা বেগম আরো জানান, একমাত্র মেয়ে মঞ্জু বেগমকে রফিকুল ইসলামের সাথে বিয়ে দিয়ে ঘরজামাই রাখা হয়েছে। জামাই রাজমিস্ত্রির কাজ করে। সিতা বেগমের ভাষ্যমতে তার দুই ছেলের বয়স যখন ৬ বছর, তখন থেকেই তাদের দুই পা অবশ হয়ে ন্যাংড়া হয়ে যায়। এরপর আস্তে আস্তে দুই হাত অকেজো হয়ে বিছানাগত হয়ে পড়ে। ছেলেদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়েও কোন ফল পাননি বলে সিতা বেগম জানান। ভারতের কৃষ্ণনগর, ঢাকার পঙ্গু এবং সর্বশেষ ঝিনাইদহ ও যশোরের কুইন্স হাসপাতালে ছেলেদের চিকিৎসা দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
সিতা বেগমের মেয়ে মঞ্জু বেগম জানান, ভাইদের মতোই এখন তার নিজ তিন সন্তানের অবস্থা করুন। তিনি বলেন, তার বড় ছেলে মনিরুল ইসলাম ১৮ বছর পূর্তির আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন বাকি দুই ছেলে সন্তান আনারুল ইসলাম (১০) ও সাবিকুল ইসলাম (৮) প্রতিবন্ধী হয়ে বিছানায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে। চিকিৎসকরা তাদের জানিয়েছেন, এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই। এটা জন্ম ব্যাধি। মঞ্জু বেগম জানিয়েছেন, তাদের বংশে মেয়ে সন্তানরা এই রোগে আক্রান্ত হন না। তিনি ও তার দুই মেয়ে রাবিনা খাতুন (১৪) ও সাবিনা খাতুন (৯) সুস্থ আছেন। রাবিনা ক্লাস নাইনে ও সাবিনা ক্লাস থ্রিতে পড়াশোনা করছে। কেবল পুরুষরাই এই রোগে আক্রান্ত হন বলে মঞ্জু বেগম জানান। এ বিষয়ে এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার মহিউদ্দীন জানান, আমি পরিবারটিকে চিনি। এই পরিবারে কোন ছেলে সন্তান বাঁচে না। অজ্ঞাত রোগটির চিকিৎসা করতে গিয়ে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এখন ভিটেবাড়ি ছাড়া তাদের কিছুই নেই। ভেন্নতলা গ্রামের লতাফৎ হোসেন জানান, মজিবর রহমানের দুই ছেলে ও তার মেয়ের তিন ছেলের চিকিৎসার জন্য তিনি নিজে দুইবার ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু রোগটির উপযুক্ত কোন চিকিৎসা মেলেনি। তিনি পরিবারটির উপযুক্ত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এলাকাবাসি নাসির উদ্দীন, আব্দুল্লাহ শেখ, শ্রী বিকাশ কুমার বিশ্বাস ও আব্দুল খালেক জানান, ভেন্নাতলা গ্রামের মজিবরের দুই ছেলে ও তার তিন নাতির চিকিৎসার জন্য ১০ বছর ধরে চিকিৎসা ব্যয় চালিয়ে এখন নিঃস্ব।
তাদের সাহায্যে সবর এগিয়ে আসা দরকার বলে তারা মনে করেন। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ শহরের ক্রিসেন্ট প্যাথলজির প্রাইভেট প্রাকটিশনার ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ নাজমুল হুদা জানান, ৬ মাস আগে আমি চিকিৎসা দিয়েছি ঠিকই, কিন্তু এখন রোগটি সম্পর্কে আমার সুস্পষ্ট ধারণা নেই। তবে প্রকৃত রোগ নির্ণয়ে আমি তাদের ঢাকার পিজি হাসপাতালে রেফার্ড করেছিলাম। মঞ্জু বেগমের স্বামী রফিকুল ইসলাম জানান, আমার দুই সন্তান আনারুল ইসলাম ও সাবিকুল ইসলামকে ঢাকার পিজিতে ভর্তির জন্য ডাঃ নাজমুল হুদা পরামর্শ দিলেও টাকার অভাবে আমরা যেতে পারিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঝিনাইদহ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ