Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্যানারি বর্জ্যরে ভয়াবহ দূষণ

সম্পাদকীয়-১

প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১৫ এএম, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

হাজারীবাগ থেকে সাভার শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তর নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে এক ধরনের ইঁদুর-বেড়াল খেলা চলছে। আদালত থেকে একের পর এক আল্টিমেটাম দেয়া এবং অবশেষে দিন ভিত্তিতে জরিমানা করা হলেও পরিপূর্ণভাবে ট্যানারি স্থানান্তরে এক ধরনের গড়িমসি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সর্বশেষ আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ট্যানারি স্থানান্তরের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ১৯৯ একর জমিতে ২০৫টি প্লটে মোট ১৫৫টি ট্যানারি স্থানান্তরের কথা থাকলেও সিংহভাগ ট্যানারি এখন পর্যন্ত স্থানান্তর করা হয়নি। মাত্র ১০টি ট্যানারিতে যন্ত্রপাতি স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বাকি ট্যানারি স্থানান্তর হবে কিনা, এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, যে লক্ষ্যে হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা এখনও পূরণ হয়নি। হাজারীবাগের ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য যুগের পর যুগ ধরে বুড়িগঙ্গা ও আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ দূষণ সৃষ্টি করে আসছে। এতে পরিবেশ যেমন বিষাক্ত হয়ে উঠেছে, তেমনি জীব-বৈচিত্র্যসহ আশপাশের এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নদী ও পরিবেশকে এই বিষাক্ত দূষণ থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যেই সাভারে আধুনিক শোধনাগারসহ পরিবেশ বান্ধব শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০৩ সালে এই উদ্যোগ নেয়া হলেও বিগত ১৪ বছরেও তা পরিপূর্ণ হয়ে উঠেনি। ট্যানারি মালিকদের নানা টালবাহানার মধ্যে যখন কচ্ছপ গতিতে একটি-দু’টি করে স্থানান্তর শুরু হয়, তখনই দেখা গেল ঐসব ট্যানারির বর্জ্য শোধন ছাড়াই নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে শিল্পনগরীর আশপাশে বহমান ধলেশ্বরীসহ বংশী ও তুরাগ নদী তো বটেই আশপাশের বিল, জলাশয় দূষিত হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে যদি সবগুলো ট্যানারি সেখানে স্থানান্তরিত হয়, তবে কী দশা হবে, তা বোধকরি বলার অপেক্ষা রাখে না।
যে সরকারি উদ্যোগে এক সময় রাজধানীর বাইরে হাজারীবাগে ট্যানারি স্থাপন করা হয়েছিল, কালক্রমে নগরায়নের ফলে তা রাজধানীর ভেতর চলে আসে। কেন্দ্রীয় রাসায়নিক বর্জ্য শোধনাগার চালু করা ছাড়াই ট্যানারি স্থাপনের ফলে বুড়িগঙ্গাসহ আশপাশের পরিবেশ কী ভয়াবহ বিষাক্ত হয়ে পড়েছে, তা চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে হাজারীবাগের ট্যানারি সরকারিভাবেই সাভারে বর্জ্য শোধনাগারসহ পরিবেশ বান্ধব প্রক্রিয়ায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। দেখা যাচ্ছে, তা অসম্পূর্ণ অবস্থায়ই রয়ে গেছে। বর্জ্য শোধনাগার পরিপূর্ণভাবে স্থাপন না করে শিল্পনগরী চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকারি উদ্যোগেই এক জায়গার পরিবেশ রক্ষার জন্য অন্য জায়গার পরিবেশ বিনষ্টের কাজ চলছে। বলা যায়, হাজারীবাগ ও বুড়িগঙ্গার দুঃখ হয়ে থাকা ট্যানারি শিল্পের বিষাক্ত বর্জ্য এখন সাভারের শিল্প নগরী ও আশপাশের নদী এবং পরিবেশের দুঃখ হয়ে উঠছে। এক জায়গার দুঃখ আরেক জায়গায় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেবল বলছে, শিঘ্রই শোধনাগার হয়ে যাচ্ছে, অচিরেই চালু হবে। অথচ বাস্তবে তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাদের এই করব, করছির মধ্যেই শিল্পনগরীর আশপাশের নদী ও পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে বলা হয়েছিল, ট্যানারি বর্জ্য এমনভাবে শোধন করা হবে এবং এ থেকে নিঃসরিত তরল এতটাই স্বচ্ছ হবে যে তা পানের উপযোগী হবে। নদীতে মৎস্য প্রজনন বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষের কর্মসংস্থানও হবে। তাদের এসব কথা যে অন্তঃসার শূন্য ছিল, তা এখন বাস্তবে দেখা যাচ্ছে। বলা বাহুল্য, শুধু ট্যানারির বর্জ্যই নয়, রাজধানী ও এর আশপাশে গড়ে উঠা শিল্প-কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যালের বর্জ্যে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যাসহ অন্যান্য নদী বহু আগেই বৃহৎ ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব নদীতে মাছ দূরে থাক, কোনো ধরনের জলজ উদ্ভিদও জন্মায় না। যেন দুই নদীতে বিষের প্রবাহ বয়ে চলছে। এই প্রবাহ এখন দেশের অন্যান্য নদ-নদীতেও ছড়িয়ে পড়ছে। প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনাসহ গোমতি, আড়িয়াল খাঁ, ধলেশ্বরী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। চাঁদপুরের যেখানে পদ্মা ও মেঘনা মিলিত হয়েছে সেখানেও এখন এই বিষাক্ত প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। এর উপর অপরিকল্পিতভাবেই নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপিত হচ্ছে, সেগুলোর বিষাক্ত বর্জ্যও এসব নদীতে পড়ছে। বর্জ্য যদি শোধন ছাড়াই এভাবে নদ-নদীতে পড়তে থাকে, তবে আগামী এক দশকে বাংলাদেশের নদ-নদী ও এর আশপাশের এলাকার কী পরিস্থিতি হবে, তা অনুমান করা কঠিন নয়। এক ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্যইে আশপাশের নদ-নদী এবং জমিজমা ও বিল-জলাশয় জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। এর সাথে অন্যান্য শিল্পকারখানার বর্জ্য যুক্ত হয়ে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হবে, তা ব্যাখ্যা করার অবকাশ নেই।
বহুদিন ধরেই পরিবেশবিদরা বলে আসছেন পরিপূর্ণ বর্জ্য শোধনাগার এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা ছাড়া ট্যানারি স্থানান্তর করা উচিত হবে না। এ নিয়ে তারা বিভিন্ন সভা-সেমিনার এমনকি মানববন্ধন পর্যন্ত করে আসছেন। সরকার তাদের এসব কথায় কর্ণপাত করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। বর্জ্য শোধনাগার ছাড়াই ট্যানারি স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পরিবেশ ও প্রতিবেশের উপর এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। নদী দূষণসহ বিশাল একটি এলাকা বিষময় হয়ে উঠেছে। যদিও প্রকল্প কর্মকর্তা বলেছেন, বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে, তবে সাড়ে পাঁচ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য ছাড়া প্রকল্প চালু করা যাবে না। তার অর্থ হচ্ছে, সব ট্যানারি স্থানান্তরিত হয়ে এলে এ পরিমাণ বর্জ্য পাওয়া যাবে, তারপর শোধনাগার চালু হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, শোধনাগার এমন করে স্থাপন করা হবে কেন, যা একটি ট্যানারির বর্জ্য শোধন করতে পারবে না? এটা নিশ্চিতভাবেই পরিকল্পনার ত্রুটি। অন্যদিকে ট্যানারি স্থানান্তর নিয়ে যে ধরনের ঢিমেতালা ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে স্থানান্তর হবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। ইতোমধ্যে এই স্থানান্তর নিয়ে আমরা ট্যানারি মালিকদের অনীহা দেখেছি। এ প্রেক্ষিতে, যদি আরও ছয় মাস বা এক বছর লেগে যায়, তবে যে অল্পসংখ্যক ট্যানারি স্থানান্তরিত হয়েছে, সেগুলোর বিষাক্ত বর্জ্য ততদিন পর্যন্ত নদী ও পরিবেশ দূষিত করতে থাকবে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা মনে করি, নদী ও স্থানীয় পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে সব ট্যানারি স্থানান্তর না হওয়া পর্যন্ত সেখানের ট্যানারি বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ রাখতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->