বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা : ফরিদপুর জেলার প্রধান ক্রাইমজোন এখন জেলার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। দিনের বেলা যেখানে শুধু টাকা উড়ে। এ অঞ্চলের মানুষের মুখে এখন, একটি কথাই উচ্চারিত হচ্ছে, ‘পাসপোর্ট অফিসটি এখন হরিলুটের কারখানা, টাকা ছাড়া কারো ভাগ্যে পাসপোর্ট মিলে না। পাশাপাশি এ কথাটি শোনা যায় এডির চেয়ে ইউডিএ বড়, ইউডির চেয়ে পিয়ন বড়। মোট কথা এই পাসপোর্ট অফিসটির রন্ধে-রণেন্ধ দুর্নীতির রয়েছে। এই অফিসটির মেইন গেট থেকে শুরু করে পরিচালক পর্যন্ত তথা (দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত) ঘুষ বাণিজ্যের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটির এমন সিস্টেম একজন পাসপোর্ট গ্রাহকও যদি অফিসে প্রবেশ না করে, তার পরেও দিন শেষে একশত থেকে দেড়শত লোকের ফাইল জমা নেয়া হয়।
প্রশ্ন উঠছে তাহলে ফাইল জমা দিলো কে? এখানেই মজার ব্যাপার। কিভাবে ফাইল অফিসে ঢোকে? প্রতি বৃহস্পতিবার, সাপ্তাহিক অফিসের শেষ কর্মদিবসে দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত অফিসের কাজ চলে। ঘুষের টাকা ভাগবাটোয়ারা করে ৪টার দিকে ১ দিনের ছুটি কাটাতে ছুটে যে যার নিজ বাড়িতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উক্ত অফিসের এক কর্মচারী সূত্রে জানা যায়, দিন শেষে এই অফিসের হিসাব সহকারীর নেতৃত্বে পাসপোর্ট ফাইলের যাবতীয় টাকা একত্রিত করে সহকারী পরিচালকের কাছে নিয়ে যায়। আর সেখানেই হয় ভাগবাটোয়ারা। প্রতি বৃহস্পতিবারে ভাগবাটোয়ারা শেষে পিওন পায় ১০ হাজার টাকা, হিসাব সহকারী পায় ৩০ হাজার টাকা এবং প্রতিদিন ১২০-১৫০ টি ফাইলের প্রতিটির জন্য ৯০০/= টাকা করে সহকারী পরিচালকে দিতে হয়। সে হিসেব মোতাবেক দেখা যায় সপ্তাহ শেষে সহকারী পরিচালকের একার ভাগেই প্রায় ৪ লক্ষ টাকার উপরে আসে এবং অন্যান্যদের ভাগে প্রায় ১ লক্ষ টাকা । এই অফিসের ১০ জন আনছার ও ৬ জন কম্পিউটার অপারেটরদের এবং ৬-৭ জন অফিস স্টাফের রয়েছে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ১৫-২০টি পাসপোর্ট ফাইল। আর এই ফাইলগুলো যার যার প্যান্টের পকেটে থাকে। সর্বশেষে, অফিসে জমা পড়ে অফিসের সহকারী পরিচালকের টেবিলে। ঘুরে কাগজপাতি যাচাইপূর্বক কর্মকর্তা স্বাক্ষর করে কাক্সিক্ষত ব্যক্তি/মহিলাকে ফিংগারিং করাতে বসায়। পরে ওই গ্রাহককে একটি রিসিভ/¯িøপ দেয়া হয়। আর এখানেই হয় ঘুষের কারবার।
এই জমাকৃত ফাইলগুলো শুধুমাত্র অফিস কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আইন রক্ষায় নিয়োজিত আনসারদের। তথা অফিস স্টাফদের পকেট ফাইল। প্রতি পাসপোর্ট বাবদ সরকারি জমা এবং ঘুষ কত? সরকারি নিয়মানুযায়ী অতি জরুরি একটি পাসর্পোট করতে ব্যাংক জমা (৬৯০০ ছয় হাজার নয় শত ) টাকা + পরিচালক স্বাক্ষর ফি ৯০০ টাকা + পুট আপ ফি ১০০+ অতিরিক্ত খরচ ২০০ টাকা মোট ৮২১০/- টাকা। সাধারণ পাসপোর্ট ব্যাংক জমা ৩৪৫০+পরিচালক খরচ ৯০০ + পুট আপ ফি ১০০+ অতিরিক্ত খরচ ২০০) ৪৬৫৫/- টাকা অভ্যান্তরীণ জরুরি ও অতিজরুরি এবং গোপনীয় পাসপোর্ট রয়েছে আলাদা আলাদা খরচ। অভ্যন্তরীণ পাসাপোর্ট হলো, শুধুমাত্র কাক্সিক্ষত পাসপোর্ট গ্রাহক মাত্র ২ কপি ছবি নিয়ে আসবেন। ফরমপূরণ করা, চেয়ারম্যান/ বা নোটারি পাবলিক অথবা সরকারি গেজেটেট কর্মকর্তার সত্যায়িত সিল ও সইসহ ফিংঙ্গারিং মাত্র ৩০ মিনিটে কমপ্লিট হয়ে যাবে, দরকার শুধু চাহিদা মোতাবেক টাকা। এসব পরিচালনার জন্য অফিস এডি ও অফিস পিয়নের আলাদা লোক রাখা আছে, প্রয়োজন শুধু ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এই ফাইলটির ডিএসবি রিপোর্টও এডি দায়িত্ব নিয়ে করিয়ে দেন।
কম্পিউটারের কাজ শেষে গ্রাহকদের একটি ডেলিভারি ¯িøপ দেয়া হয়। এখানেও আবার পুটআপ ঝামেলা। টাকা দিলে রিপোর্ট আগে যায়, না দিলে ফাইল ও রিপোর্ট পরে থাকে দীর্ঘদিন। বর্তমানে পাসপোর্ট অফিসটির চিত্র একটু ভিন্নতর। প্রতিদিন হাতে গোনা ১০-১২ টি ফাইল জমা পড়ে কাউন্টারে অথচ ফিঙ্গরিং করার জন্য ওয়েটিং রুমে দেখা যায় অর্ধশতাধিক নারী/পুরুষ ফাইল হাতে নিয়ে বসে আছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, রোব থেকে বুধবার পর্যন্ত অফিস কম্পিউটার চেক করলে দেখা যাবে দিনে ১৩০টি থেকে ১৫০টি ফিঙ্গারিং এর ডেলিভারি ¯িøপ বিতরণ করা হয়েছে অথচ লাইনে ফাইল জমা পড়ছে মাত্র ১৫-২৫ টি, বাকি ফাইল কি ভাবে জমা পড়ল এ প্রশ্ন থেকেই যায়। অথচ যারা গরিব এবং কাক্সিক্ষত ব্যক্তির পাসপোর্ট করা খুব প্রয়োজন কিন্তু তাদের হয়রানির কোন অন্ত নাই। এছাড়াও সহকারী পরিচালক নিজে পাসপোর্ট রি-ইস্যুর জন্য নেন ২০০০/-টাক্ াও ডিমো করার জন্য নেন ৫০০০/-টাকা।
এলাকার সচেতন মহলের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে পাসপোর্ট অফিসতো নয় যেন নগদ টাকার হাট। কাঁচা টাকার জন্য প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে উঠতি বয়সী যুবকরা দ্রæত পাসপোর্ট করাতে এসে স্থানীয় যুবকদের সাথে টাকার ভাগা ভাগি নিয়ে অফিস কর্মচরী ও আনছারদের সাথে অহরহ ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। সব মিলিয়ে এই পাসপোর্ট অফিস নিয়ে ঘটতে পারে একাধিক হতাহতের ঘটনা। এ জন্য প্রয়োজন কঠোর নিরাপত্তা ও নজরদারি। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা জেলার মন্ত্রী, জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এ ব্যাপারে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আজমলের সাথে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।