Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে

সম্পাদকীয়-২

| প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজধানীর মহাখালীতে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে পারাপার হওয়া পথচারীদের গত মঙ্গলবার ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেছে বলে একটি সচিত্র খবর বেরিয়েছে দৈনিক ইনকিলাবে। এ ধরনের খবর আগেও বেরিয়েছে। বিশেষ বিশেষ দিনে দেখা গেছে, রাজধানীর কোন কোন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত হঠাৎ করেই এরকম তৎপরতা চালিয়েছে। এরপর আর কোন খোঁজ-খবর পাওয়া যায়নি। এর ফলে বাস্তবে যে সুফল পাবার কথা তা পাওয়া যায় না। যে কারণে ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে তার ব্যত্যয় ঘটছে। রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা, যানজট কমিয়ে আনা এবং একটি সুন্দর-সুশৃঙ্খল পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তোলার নিমিত্তেই ফুটওভার ব্রিজগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। এজন্য বিপুল অর্থও ব্যয় করতে হয়েছে। এখন যদি এর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না যায় তাহলে এসব বানানোর কোনো অর্থই থাকে না। তাই ভ্রাম্যমাণ আদালতের কর্মকা-ের ধারাবাহিকতা জরুরি।
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, অনেকদিন থেকেই রাজধানীতে পথ চলাচলে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা চলছে। প্রথমদিকে একে নিয়মে আনতে জেব্রা ক্রসিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তখনও দেখা গেছে, মাঝে-মধ্যেই জেব্রা ক্রসিং দিয়ে মানুষ পারাপার না হলে সাজা দেয়া হোত। এরপর রাজধানীর সড়ক ব্যবস্থাপনায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পথচারীদের চলাচলের সুবিধার জন্য ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাসসহ আরো অনেক ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং করার আয়োজন অব্যাহত আছে। রাস্তার দু’পাশে উঁচু গ্রীল তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এমনকি কোন কোন এলাকায় বিকেলে যাতে মানুষজন প্রধান সড়কে নামতে না পারে সেজন্য এক সময়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করত। এখনো ফুটপাথজুড়ে এসব গ্রীল রয়েছে। মাঝে-মধ্যেই গ্রীল পরিবর্তন ও রং করা হচ্ছে। সড়ক মুক্ত রাখতে ফুটপাথের কোথাও কোথাও দেয়ালও তৈরি করে দেয়া হয়েছে। অনেক দিন পরে আজো দেখা যাচ্ছে সেই পুরনো অভ্যেসের কোন পরিবর্তন হয়নি। মানুষ যথারীতি আগের মতোই চলাচল করছে। সঙ্গত প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমনটা হচ্ছে বা হতে পারছে? খুব সহজভাবে এটা বলা যায়, এযাবৎকাল যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা যথেষ্ট বা পর্যাপ্ত নয়। এর প্রধান কারণ মানুষকে অভ্যস্ত করে তোলা যায়নি। এটা লক্ষণীয় যে, যেসব বড় বড় গ্রীল রয়েছে তার মধ্যেই ফাক-ফোঁকর রয়েছে। রাজধানীতে রাতদিন প্রহরা রয়েছে অথচ এসব গ্রীল যারা কেটে ফেলছে তাদের কেউ কখনো ধরা পড়ে না। প্রায় সকলেই প্রত্যক্ষ করছে এসব ফাক-ফোঁকর দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্যও পার হচ্ছে। ফলে পথচারীদের মধ্যেও এব্যাপারে উৎসাহে কোন ভাটা পড়ছে না। অন্যদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এখন যত ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে তা দিয়ে পথচারীদের চলাচলের সংখ্যা অনেক বাড়লেও অনেককেই দেখা যায় সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। এমনকি অনেক স্থানে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশও এভাবে চলাচলে তাদের সহায়তা দান করছে, সবমিলে একথা বলা যায় ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের অভ্যাস এখনো এখানে গড়ে ওঠেনি। এ একটি জনশৃঙ্খলার চিহ্ন। এ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, অব্যাহত রাখতে হবে। রাজধানীতে পথচারীদের চলাচল বিশৃঙ্খল দৃশ্য বিদেশি মেহমানরা দেখলে সেটি আদৌ আমাদের সম্পর্কে কোন ভাল ধারণার জন্ম দেয় না। অবশ্য সড়ক ব্যবস্থাপনায় এখনো এমন কিছু ত্রুটি রয়েছে যার অবসান না হলে ফুট ওভারব্রিজের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিশ্চিত করা অসম্ভব। বিশেষ করে সিটিবাসের যাতায়াত এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সর্বোপরি জন সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।
সচেতনতা সৃষ্টিতে বছরব্যাপী মাইকিং, স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং উদ্বুদ্ধকরণের ব্যাপারটিতো রয়েছেই। তার পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিষয়টিকে হালকা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। এক্ষত্রে আরো কঠোর হতে হবে। সেই সাথে এধরনের কাজ কেবল বছরে বা কোন বিশেষ দিন বা সপ্তাহে নয় বরং বছরব্যাপী চালু রাখা দরকার। এধরনের অভিযান মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশ করা ও সচেতনা বৃদ্ধির সহায়ক হতে পারে। সেই সাথে কেবলমাত্র কোন একটি বা দুটি সড়কে নয় বরং নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সবগুলো সড়কেই এধরনের তৎপরতা থাকা প্রয়োজন। তবে যারা প্রতিবন্ধী বা শারীরিকভাবে দুর্বল তাদের ফুটওভার ব্রিজ পার হতে সহায়তা করতে হবে। প্রত্যেকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে হয়ত এ ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করার প্রয়োজন হতো না। তা সত্ত্বেও আমরা মনে করি, একটি পরিচ্ছন্ন সুশৃঙ্খল এবং কম দুর্ঘটনাপ্রবণ রাজধানী গড়তে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্ট সকলে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে সচেতন এবং সতর্ক হবে, এটাই প্রত্যাশিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন