পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে চীন, জাপান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের পর বাংলাদেশের বাজারে নতুন প্রতিযোগী হিসেবে যোগ দিয়েছে সউদী আরব। দেশটির শীর্ষব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সরকারি কর্তাব্যক্তিরা ঘনঘন আসা যাওয়া করছেন বিনিয়োগের প্রক্রিয়া করতে। বলা যায়, একপ্রকার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে। বন্ধুপ্রতীম দেশটির সাথে বাংলাদেশের বর্তমানে যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ৫ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ সেখানে থেকে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সংক্রান্ত দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, সউদী আরবের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানী আল-রাজী থেকে শুরু করে শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপ আল-জামাল, আল-বাওয়ানী, আল-ফানারসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের গন্তব্য এখন বাংলাদেশ। কোম্পানীগুলোর কর্তাব্যক্তিরা এখন নিয়মিত ঢাকা সফর করছেন। স্বাক্ষর করছেন একের পর এক সমঝোতা স্মারক। এ প্রসঙ্গে ইনকিলাবের সাথে ফোনালাপে সউদী আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেছেন, সউদী উদ্যোক্তারা চট্টগ্রামে একটি সারারখানা চালু করতে আলোচনা চালাচ্ছে। এতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকায় বিশেষ শিল্প জোন চালু হলে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার সউদী বিনিয়োগ হবে।
বাংলাদেশ-সউদী আরব সম্পর্ক ধর্ম ও ঐতিহ্যের বন্ধনে আবদ্ধ। দু’দেশের মধ্যেই রয়েছে ভ্রাতৃপ্রতিম এক গভীর সম্পর্ক। সউদীতে রয়েছে বাংলাদেশের বিশাল শ্রম বাজার। রেমিট্যান্সের অন্যতম প্রধান সউদী আরব। অন্যদিকে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে যথাযথ পরিবেশ বিরাজ করছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, বিগত ৪০ বছরেও বাংলাদেশে সউদী আরবের কোন বিনিয়োগ আসেনি। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সউদী আরবের যে টানাপোড়েন চলছে সেই প্রেক্ষাপটে দেশটি বিনিয়োগ স্থানান্তরের কথা ভাবছে। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে সউদী আরব অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেছেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়াতে সউদী আরব অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে চায়। বাংলদেশের দ্রুতগতির উন্নয়ন তার নজর কেড়েছে। তাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার প্রথম পছন্দ। বাংলাদেশের ১০টি অগ্রাধিকার খাতে সউদী আরব কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের হিসেবে সউদী আরব সম্প্রতি দেশের চলমান পাঁচটি প্রকল্পে ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার ঋণ দিয়েছে। এগুলো হলো: মগবাজার ফ্লাইওভার, শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র, শীতলক্ষ্যা সেতু, তিস্তা সেতু ও চক্ষু হাসপাতাল। সউদী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেছেন, সউদী বিনিয়োগকারিরা বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কর অবকাশ সুবিধা, যন্ত্রপাতি আমদানিতে কর রেয়াত, লভ্যাংশ ও পুঁজি দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াসহ সব ধরনের সুবিধা পাবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সউদী ব্যবসায়িদের জন্য বাংলাদেশ অচিরেই সেকেন্ড হোম হতে যাচ্ছে।
সউদী বিনিয়োগকে অমরা স্বাগত জানাই। এ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোন অন্তরায় যাতে সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও আমরা বিশ্বাস করি। যে কোন বিনিয়োগের সাথে কবল আর্থিক যোগ সূত্রই বড় কথা নয়, তার সাথে আর্থসামাজিক সম্পর্কের বিষয়টিও জড়িত। সে অর্থে সউদী বিনিয়োগ আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যেকোন বিনিয়োগের বেলাতেই এটা বলা দরকার যে, যারা বিনিয়োগ করতে চান তাদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। এসব বিনিয়োগ থেকে দেশের মানুষের যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় সেদিকেও নজর রাখা দরকার। এ বিবেচনায় সউদী আরবের বিনিয়োগ আমাদের জনগণের অনুকূলে যাবে, এ আশা করা যায়। একথাও বলা দরকার, সউদী আরবের জনগণের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের এমনিতেই গভীর আস্থা ও ভালোবাসা রয়েছে। ফলে তাদের বিনিয়োগের নিশ্চয়তা রয়েছে। প্রকৃত বিবেচনায় আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও আর্থসামাজিক বাস্তবতার সাথে মিল রেখে সবধরনের বিনিয়োগকেই আমাদের সাদর আমন্ত্রণ জানানো এবং এর জন্য পরিবেশ ও অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করা উচিৎ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।