Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সার্চ কমিটির বৈঠক : আশার আলো কি দেখা যাচ্ছে?

সম্পাদকীয়-১

| প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে ৩১টি রাজনৈতিক দলের কাছে তাদের পছন্দের নামের তালিকা চাওয়া এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক দলকে পাঁচজনের নামের তালিকা দিতে বলা হয়েছে। বিশিষ্ট ১২ নাগরিককেও এ ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছে। সোমবার তাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। অনেকেই এ দু’টি সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আশার আলো দেখছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চাওয়ার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত দলীয় ফোরামে হবে বলে জানানো হয়েছে। বিএনপি নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। দলের তরফে ‘নাম পাঠিয়ে কি হবে’, এমন মন্তব্যও করা হয়েছে। তারপরও বলা হয়েছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলীয় ফোরামে হবে। বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত সকল দল ও মহলের পক্ষ থেকেই স্বাগত জানানো হয়েছে। সার্চ কমিটি নিয়ে ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সার্চ কমিটি দলনিরপেক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়েই গঠন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে দলটি সন্তুষ্ট এবং তার কোনো আপত্তি নেই। বিএনপি দাবি করেছে, এটি সরকারের পছন্দের কমিটি। এর প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই এর সাধারণ গ্রহণযোগ্যতা নেই। তারপরও দলটি কমিটির কাজকর্ম দেখার অপেক্ষায় আছে।
সার্চ কমিটি নিয়ে এ ধরনের বিতর্ক না ওঠাই ছিল সঙ্গত ও উচিত। কিন্তু এখন এ নিয়ে কথা বলা নিরর্থক। অতীতে যেভাবে ও প্রক্রিয়ায় সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছিল এবারও সেভাবে ও প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়েছে। তখনও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আলোচনা করে সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন। এবারও তাই করা হয়েছে। আগের মতই এবারও ওই আলোচনার প্রভাব বা প্রতিফলন সার্চ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে পড়েনি। অতএব, এই সার্চ কমিটি কি করবে বা করতে পারে সে ব্যাপারে একটা ধারণা সব মহলেই তৈরি হয়েছে। আগেও সার্চ কমিটির পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নামের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। তখন কিছুদল নাম তালিকা দিয়েছিল, কিছুদল দেয়নি। আওয়ামী লীগ দিয়েছিল, বিএনপি দেয়নি। অতঃপর যথারীতি সার্চ কমিটির দেয়া নামের তালিকা থেকে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল। বিএনপি নাম দিলেও যে এর ব্যতিক্রম হতো সেটা মনে করে না পর্যবেক্ষক মহল। সম্ভবত সে কারণেই বিএনপি এবারও নাম-তালিকা দেয়ার প্রশ্নে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। গতবারের চেয়ে এবারের লক্ষণীয় ব্যতিক্রম হলো, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত। যে ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের নাম পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তারা সবাই সুপরিচিত এবং স্ব-স্ব ক্ষেত্রে স্বনামখ্যাত। তাদেরও বেশিরভাগের রাজনৈতিক মতামত সম্পর্কে দেশের মানুষ কম-বেশি অবহিত। তারপরও তাদের সকলের প্রতি মানুষের অগাধ সম্মান ও শ্রদ্ধা রয়েছে। তারা কি আসলে জাতিকে কোনো আলোর দিশা দিতে পারবেন? তাদের মতামত ও পরামর্শ কি আদৌ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে? আমরা এর কিছুই জানি না। তবে আশা করি, বিশিষ্ট নাগরিকেরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে তাদের মতামত ও পরামর্শ দেবেন। এটা যদি তারা দিতে পারেন তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তা একটা ভালো ভূমিকা রাখতেও পারে। বিশিষ্ট নাগরিকেরা জাতির পক্ষ থেকে জাতির প্রতিনিধি হিসেবে ভূমিকা রাখবেন, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
সার্চ কমিটি নিয়ে যতই বিতর্ক থাকুক, তার প্রথম বৈঠকের সিদ্ধান্ত দুটি, বিশেষত দ্বিতীয়টি সঙ্গতকারণেই অধিক গুরুত্ববহ। প্রথম সিদ্ধান্তটির ক্ষেত্রে অতীত অভিজ্ঞতা নেতিবাচক ধারণা দিলেও সার্চ কমিটি তার ভূমিকা ও সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তাকে ইতিবাচক ধারণায় রূপান্তর করতে পারে। আমরা আশা করি, সার্চ কমিটি সেটি করবে। বলা বাহুল্য, সার্চ কমিটির ওপর দেশ ও জাতির অনেক কিছুই নির্ভর করছে। কমিটি যদি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, দক্ষ, যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নামের তালিকা দিতে পারে এবং সেই তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ করা হয় তাহলে প্রত্যাশিত শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন পাওয়া সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা হতে হবে উদার ও আন্তরিক। এ কোনোরূপ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা থেকে সরকারকে সর্বতোভাবে বিরত থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশন গঠনের সাংবিধানিক দায়িত্ব প্রেসিডেন্টের ওপর অর্পিত। সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। হতাশার কথাও ব্যক্ত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে দেশের মানুষ অনুরূপ কোনো কথা শুনতে চায় না। হতাশাগ্রস্তও হতে চায় না। তারা অবিতর্কিত নির্বাচন কমিশন চায় এবং এর মাধ্যমে আলোর সন্ধান চায়Ñ প্রেসিডেন্ট তাদের বিমুখ করবেন না এটাই প্রত্যাশিত। জাতির অভিভাবক তিনি। দেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা অবসানে দেশ ও জাতি তার আন্তরিক ও দৃঢ় ভূমিকা দেখতে চায়।



 

Show all comments
  • Nizam Abbasi ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:২৪ এএম says : 0
    এগুলো আসলে কিছুই না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আশার আলো নিভে গেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahangir ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:২৫ এএম says : 0
    Na
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন