Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রামপাল বিরোধীদের পেটালো পুলিশ

| প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী হরতালের সময় শাহবাগ এলাকায় বিক্ষোভ ঠেকাতে হরতাল সমর্থক বেশকিছু বিক্ষোভকারীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এদিকে শাহবাগ থানার সামনে দুই সাংবাদিককে মারধর করার ঘটনায় গতকাল বিকালেই তাৎক্ষণিকভাবে এএসআই এরশাদ মন্ডলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। হরতাল শেষে জানানো হয়, আগামী শনিবার প্রতিবাদ ও সমাবেশ, ২৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচি এবং ২১ মার্চ খুলনা মহানগরসহ উপকূলীয় অঞ্চলে মহাসমাবেশ।
গতকাল সকালে হরতালের শুরুতেই তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সমর্থকদের উপর চড়াও হয় পুলিশ। হরতালের সমর্থনে সকালে একটি মিছিল বের করে তারা। মিছিল শেষে তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিতে গেলে পুলিশ সদস্যদের সাথে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামান থেকে পানি নিক্ষেপ করে তাদের সরিয়ে দিলে তারা পিছু হটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দিকে চলে যায়। এসময় পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলের আঘাতে আহত হয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি লাকি আক্তার, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির ও ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি কাঁকন বিশ্বাসসহ ৫ জন তারা বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পরে হরতাল সমর্থনকারীরা আবারও শাহবাগে অবস্থান নিতে চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সকালে কয়েক দফায় পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়েছিল। নেতা-কর্মীরা জানান, বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ আট দফা টিয়ার শেল ছুড়েছে, বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেটও ছুড়েছে। পরে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে হরতাল সমর্থনকারীরা।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, শাহবাগের আশপাশে কয়েকটি হাসপাতাল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকায় এবং ঢামেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চলাচল নির্বিঘœ করতে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়।
এদিকে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা অর্ধদিবস হরতালের শেষ মুহূর্তে মারধরের শিকার হয়েছেন এটিএন নিউজের সাংবাদিক কাজী এহসান বিন দিদার ও তার ক্যামেরাম্যান আ. আলিম। রাজধানীর শাহবাগ থানার সামনে আটক ব্যক্তিদের ফুটেজ নিতে গিয়ে তারা এ হামলার শিকার হন। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলায় ক্যামেরা ম্যানের চোখের উপরের অংশ কেটে গেছে। ক্যামেরা ভেঙে গেছে ও মারধরের শিকার সাংবাদিকের পা ভেঙে গেছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, হরতালের শেষ মুহূর্তে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে। আটকদের ছবি তুলতে গেলে পুলিশ তেড়ে এসে মারধর করে। এ ঘটনায় শাহবাগ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এরশাদ মন্ডলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার জানান, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে এএসআই এরশাদ ম-লকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিন সদস্যের কমিটিতে রয়েছেনÑ রমনা বিভাগের এডিসি (এডমিন) নাবিদ কামাল শৈবাল, এডিসি (রমনা বিভাগ) আজিমুল হক ও এসি (রমনা বিভাগ) ইহসানুল হক। তাদেরকে আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দীক জানান, বিষয়টি আমি অভিযোগ আকারে শুনেছি। ঘটনার সময় আমি ওই স্থানে ছিলাম না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সমাবেশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের ক্ষতি করবে নাÑ সরকারের এমন দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলে দাবি করেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, রামপালের পক্ষে কিছু মন্ত্রী আর সুবিধাভোগীরা ছাড়া কেউ কথা বলছে না। সারা বাংলাদেশের মানুষ চায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্র যেন না হয়। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি করবেÑ সরকারের এমন যুক্তিতে তিনি বলেন ‘যদি এই কর্মসংস্থান হয়ও তারপরও তা হবে সর্বোচ্চ ২০ হাজার কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হবে উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ।’ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে বিজ্ঞাপন নির্মাণের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের পক্ষে কেউ কথা বলতে চায় না বলে আপনারা বিজ্ঞাপন প্রচার করছেন। কিন্তু জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এই বিজ্ঞাপন আপনারা তৈরি করতে পারেন না।’
রামপালে পরিবেশ রক্ষায় সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবেÑ সরকার এমন কথা যে রাখতে পারবে না তা ঢাকা শহরের আশপাশের নদী দেখেই বোঝা যায় বলে মন্তব্য করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘সরকার ঢাকার পাশের নদীতে ড্রেন করে ফেলেছে। সেখানে রামপালে কী হবে সেটা বোঝাই যায়। সেখানে নদী দূষণ হবে, বায়ু দূষণ হবে, পরিবেশের ক্ষতি হবে যার জন্য মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকাই দায় হবে।’



 

Show all comments
  • Harun ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:১৯ পিএম says : 0
    Police ato sahos pay kothay
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রামপাল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ