পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যানজট, দুর্ঘটনা জনদুর্ভোগ বন্ধে নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণের পরও ব্যর্থ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এহেন বাস্তবতায় মহাসড়কে নসিমন-করিমনসহ ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধ করতে সরকারের প্রতি আবারো রুল জারি করে নতুন নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। মূলত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার সড়ক-মহাসড়কে জনদুর্ভোগ ও নিরাপত্তার স্বার্থে শ্যালো ইঞ্জিন চালিত, অনিবন্ধিত, নসিমন-করিমন ও ভটভটির মত আনফিট গাড়ি চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞার জন্য হাইকোর্টে করা একটি রিট শুনানি অন্তে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী এবং বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের দ্বৈত বেঞ্চের দেয়া আগের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় নতুন রুল জারি করেন। তবে বৃহস্পতিবার জারিকৃত এই রুলের আওতায় কথিত ১০ জেলার পাশাপাশি দেশের বাকি সব জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি, সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারদের প্রতি নির্দেশনা বাস্তবায়নের আদেশ প্রদান করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিবকে এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করতে নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি আগামী ৬ মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়নের পর হলফনামা আকারে আদালতে পেশ করতে বলা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মহাসড়কে এ ধরনের গাড়ী চালালে সংশ্লিষ্ট গাড়ির মালিক ও চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন আদালত।
সড়ক-মহাসড়কে যত্রতত্র দুর্ঘটনা ও যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে শ্যালো ইঞ্জিন চালিত অনিবন্ধিত নসিমন-করিমন, ভটভটি ও তিনচাকার গাড়ী চলাচলে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠনের রীট আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী এবং বিচারপতি হাবিবুল গণির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব আনফিট ও অনিবন্ধিত যানবাহন স্থায়ীভাবে বন্ধে কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না মর্মে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার সংশ্লিষ্টদের প্রতি জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন। প্রথম রুলে সড়ক-মহাসড়কে মোটরযান চলাচলের অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে কেন মোটরযান অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হবে না তা’ জানতে চাওয়া হয়েছিল এবং ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে জারি করা হাইকোর্টের আরেকটি নির্দেশনায় সংশ্লিষ্ট ১০টি জেলা প্রশাসকদের কাছে এ সংক্রান্ত কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট প্রতি ৩ মাস অন্তর আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছিল। তবে রুলের সন্তোষজনক কোন জবাব দিতে ব্যর্থ হওয়া এবং অবস্থার কোন পরিবর্তন না হওয়ায় নতুনভাবে সুস্পষ্ট নির্দেশনা জারি করলো হাইকোর্ট।
বিশ্বের সব দেশেই মহাসড়কে দূরপাল্লার দ্রুতগামী গাড়ি চলাচল নির্বিঘœ ও নিরাপদ রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা ও নীতিমালা অনুসরণ করা হয়। কিন্তু আমাদের সড়ক-মহাসড়গুলোতে নিয়ম-শৃঙ্খলার কোনো বালাই নেই। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোতে গাড়ির শ্লথগতি এবং দীর্ঘযানজটে নাকাল হচ্ছে যাত্রীরা। মহাসড়কে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা এবং মোটরযান আইনের লঙ্ঘন জনদুর্ভোগের পাশাপাশি দেশের আমদানি-রফতানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। মূলত: আমাদের সমুদ্রবন্দর থেকে শুরু করে সড়ক-মহাসড়কের যান চলাচল, হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক সিস্টেমসহ কোন ক্ষেত্রেই নিয়ম-শৃঙ্খলা মানা হচ্ছে না। মোটরযান অধ্যাদেশ অমান্য করে মহাসড়কে নসিমন-করিমন, ভটভটি চালানোর কারণে দূরপাল্লার গাড়িগুলো দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিদিনই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। হাইওয়ে পুলিশ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্য চাঁদাবাজির সুযোগ অব্যাহত রাখতেই অবৈধভাবে চলাচলকারি এসব গাড়ির বন্ধে মোটরযান আইনানুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। অথচ ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে খোদ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র হয়রানির শিকার হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকরা। যখন তখন রেকার ডেকে মোটা অংকের জরিমানা অথবা চাঁদাবাজির অভিযোগও পাওয়া যায়। হাইকোর্টের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুসারে এবার সড়ক মহাসড়কে নসিমন-করিমন, ভটভটির মত অবৈধ ও আনফিট গাড়ি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে বলে সকলে আশাবাদী। সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য অব্যাহত রাখলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানার পাশাপাশি অবৈধ গাড়িগুলো আটক ও বাজেয়াপ্ত করারও ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। পাশাপাশি সড়ক মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।