Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আমেরিকা চলে যাওয়ায় চীনকে চাইছে টিপিপি সদস্যরা

| প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জার্মানির জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে
ইনকিলাব ডেস্ক : বাণিজ্যবিষয়ক ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি চুক্তি থেকে আমেরিকা নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার পর এ চুক্তির কয়েকটি সদস্য দেশ এখন চীনকে পাশে পেতে চাইছে। গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এ চুক্তি থেকে আমেরিকাকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। টিপিপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্য দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড গতকাল বলেছে, তারা চীন ও এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশকে এ জোটে যোগ দেয়ার জন্য উৎসাহিত করছে। তবে চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ জাপান বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না। চুক্তির অন্যতম সদস্য চিলি বলেছে, তারা চুক্তিটিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। দেশটি জানিয়েছে, আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে উঁচু মাত্রার ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে চিলি।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্য টিপিপি ছিল এশিয়া বিষয়ক নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি চুক্তি। ২০১৫ সালে এটি সই হয়; তবে এখনো বেশিরভাগ দেশের সংসদে চুক্তিটি অনুমোদন পায়নি। চীনকে অর্থনৈতিকভাবে মোকাবেলার জন্য ওবামা উদ্যোগী হয়ে এ চুক্তি করেছিলেন।
টিপিপি থেকে আমেরিকার সরে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল জানিয়েছেন, আমেরিকা ছাড়া টিপিপি এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে তিনি জাপান, সিঙ্গাপুর ও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি জানান, এ চুক্তি থেকে আমেরিকার সরে যাওয়া বড় ধরনের ক্ষতি তবে ওয়াশিংটন চলে গেলেও চুক্তিটিকে বাতিল করার কথা তিনি ভাবছেন না।
জার্মানির জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে
এদিকে জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর সিগমার গ্যাব্রিয়েল বলেছেন, ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিয়েছেন তা জার্মানির অর্থনীতির জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।
তিনি জার্মানির হ্যান্ডেলসব্লাড সংবাদ মাধ্যমকে আরো বলেন, এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিরুদ্ধে যদি ট্রাম্প বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেন তবে তা জার্মানির জন্য সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এছাড়া, জার্মানির গাড়ি আমেরিকায় রফতানি করা হলে তার ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের যে সিদ্ধান্ত ট্রাম্প নিয়েছেন তারও কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। টিপিপি চুক্তি থেকে আমেরিকাকে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য গত সোমবার নির্বাহী আদেশ জারি করেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রসহ এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশ বহুল বিতর্কিত টিপিপি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। চুক্তিতে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিনা শুল্ক সুবিধার কথা উল্লেখ রয়েছে। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী আমেরিকা ছাড়া অন্য দেশগুলো হলোÑ অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ব্রুনাই, কানাডা, চিলি, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম।  এসব দেশ বর্তমান বিশ্ববাণিজ্যের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। সূত্র : পার্স টুডে।
টিপিপি বাতিলের পর নিম্নমুখী মার্কিন পুঁজিবাজার
ওদিকে ওয়াল স্ট্রিট ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ার পরপরই নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান পুঁজিবাজার ওয়াল স্ট্রিটের সূচক।  সোমবার নির্বাহী আদেশে ১২টি দেশের এ অংশীদারত্বের চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এ ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে বিনিয়োগের আগে দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা। বিশ্ববাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
বিনিয়োগকারীদের ভয়ের কারণ শুধু টিপিপি বাতিলই নয়, এরইমধ্যে নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (নাফটা) পর্যালোচনারও ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো’কে নিয়ে এ সংগঠন যাত্রা শুরু করেছিল। তবে ট্রাম্পের অভিষেকের পর অবশ্য হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প আরেকটি চুক্তিতে আবদ্ধ হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যেসব দেশ বাণিজ্য চুক্তি ভঙ্গ করছে এবং আমেরিকান কর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক গ্লোবাল মার্কেটস অ্যাডভাইজরি গ্রুপের বিশেষজ্ঞ পিটার কেনি বলেন, ‘বাণিজ্য, অর্থনীতি, কর এবং প্রবিধানের মতো বিষয়গুলোতে ট্রাম্পের যে দৃষ্টিভঙ্গি তার সম্ভাব্য প্রভাব বা বিপর্যয় সম্পর্কে অনুধাবন  করতে চাইছেন।’
সোমবার হোয়াইট হাউজে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় ডজনখানেক উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি ব্যবসায়ীদের প্রতি নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর চাপ কমানোর প্রতিশ্রুতি দেন। দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে করপোরেট কর কমানোর কথাও বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠকের পরিকল্পনাও রয়েছে আলোচিত এই রাজনীতিক কাম ব্যবসায়ীর। দুই মাস ডলারের দর বৃদ্ধি পেলেও সাত সপ্তাহের মধ্যে এটি এখন সর্বনি¤œ। প্রতিযোগিতা বাড়ছে অন্যান্য মুদ্রার সঙ্গেও।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে দিনে গড়ে ৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন শেয়ারের হাতবদল হয়। সূত্র : রয়টার্স। (এ সংক্রান্ত আগের খবর পৃষ্ঠা-৬)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ