২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
নবজাতক ও শিশুদের মায়েরা প্রায়ই কিছু সমস্যা নিয়ে আসেন, যার একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে আশ্বস্ত করা। এই সমস্যাগুলো খুবই সাধারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওষুধ লাগে না, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভুল কিংবা অতিচিকিৎসার সম্মুখীন হতে হয়। মায়েদের সচেতনতার জন্য এমন কিছু আপাত ‘নিরীহ’ সমস্যার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।
১। নবজাতকের চামড়ায় লাল ছোপ : থমা টক্সিকাম। এই লাল ছোপ দাগ দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় দিন বয়সে দেখা যায়, প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়। কোন ওষুধের প্রয়োজন নেই। এছাড়া লালের মাঝে সাদা সাদা দানা, ঠোঁটে, আঙুলে, হাতে পানি দানা উঠতে পারে। এগুলোও কোন ওষুধ ছাড়াই ভালো হয়ে যায়।
২। দুধ বমি : দুধ খাওয়ার সময় বাতাস খেয়ে ফেলা, কাশি দেয়া, অতিরিক্ত কান্না এসবের জন্য নবজাতক শিশু দুধ বমি করতে পারে। এই বাচ্চাদের খাদ্যনালী এবং পাকস্থলীর সংযোগস্থল বড়দের চেয়ে আলগা হয়ে থাকে। শিশুর ওজন বৃদ্ধি এবং বিকাশ সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে চললে চিন্তার কিছু নেই। ছয় মাস থেকে দুই বছরের মধ্যে এই সমস্যা ওষুধ ছাড়াই সেরে যায়।
৩। পায়খানার তারতম্য : নবজাতক যদি শুধুমাত্র বুকের দুধ খায়, ওজন বৃদ্ধি এবং বিকাশ সঠিক থাকে তাহলে মলত্যাগের ধরণ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। সম্পূর্ণ সুস্থ বাচ্চা এমনকি দিনে কুড়ি পঁচিশবার পায়খানা করতে পারে, আবার চার পাঁচদিনে একবার করেও মলত্যাগ করতে পারে। দুটিই স্বাভাবিক বলে ধরা যায়।
৪। নাভির হার্নিয়া : অনেক শিশুর নাভির হার্নিয়া যদিও ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, কিন্তু এক বছরের মধ্যে বিনা ওষুধে মিলে যায়।
৫। গলায় আওয়াজ, বুক ঘরঘর করা : ‘ল্যারিন্গোম্যালাশিয়া’ সমস্যা হলে জন্মগতভাবে শিশুর গলার স্বরনালী নরম থাকে, নিঃশ্বাস নেয়ার সময় সরু হয়ে যায়, ঘরঘর শব্দ হয়। মা এসে বলে, বাচ্চা নাক ডাকে, কিংবা সারাক্ষণ ঠা-া (ঘরঘরকে বুকে কফ জমে থাকা ভেবে) লেগে থাকে। এই মায়েদের নিশ্চিন্ত করে বলা যায়, বারো থেকে আঠারো মাসের মধ্যে এই সমস্যা মিশে যাবে। কোন ওষুধের প্রয়োজন নেই।
৬। কান্না আর ঘুম নিয়ে উদ্বেগ : কান্না শিশুদের একমাত্র ভাষা। অনেক কারণেই এই নবজাতক শিশু কান্না করতে পারে। ক্ষুধা, বিরক্তি, ঘুম, পেশাব পায়খানা, অবস্থার পরিবর্তন, মায়ের সঙ্গলাভ অনেক কারণেই সম্পূর্ণ সুস্থ বাচ্চা অতিরিক্ত কান্না করতে পারে। এছাড়া অনেক মা বলে থাকেন বাচ্চা পেট মোচড় দিয়ে কান্না করে। এক্ষেত্রে বাচ্চাকে কাঁধে নিয়ে ঢেঁকুর তোলানো যেতে পারে। ওষুধের (যেমন- সিমিথিকন, গ্রাইপ ওয়াটার, ফেনোবারবিটন) কিংবা কৌটার দুধের কোন ভূমিকা নেই। চব্বিশ ঘণ্টায় কমপক্ষে পাঁচ ছয়বার পেশাব করলে পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে ধরে নেয়া যায়। ঘুমের ব্যাপারে বলা যায়, জন্মের পরপর নবজাতক শিশু দিনে আঠারো কুড়ি ঘণ্টা ঘুমাতে পারে, যা বয়স বাড়ার সাথে কমতে থাকে। আবার হালকা ঘুমের স্বাভাবিক বাচ্চাও প্রচুর পাওয়া যায়।
৭। মেয়ে নবজাতকের যোনি পথ দিয়ে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক কারণে রক্ত যেতে পারে। এতে ভয়ের কিছু নেই।
৮। অপরিপক্ব মস্তিষ্কের জন্য অনেক শিশুর পা কাঁপতে থাকে, যা ধরলে থেমে যায়। কোন ওষুধ লাগে না।
৯। জন্মের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় দিনের মধ্যে একধরনের জন্ডিস হয়, যা খুব বেশি মাত্রায় বাড়ে না, ধীরে ধীরে কমে যায়। বাচ্চা অন্য সবদিক দিয়ে ভালো থাকলে কিছুই করা লাগে না। বলে রাখা ভালো, নবজাতকের জন্ডিস কমাতে রোদের কোন ভূমিকা কোন গবেষণায় পাওয়া যায়নি।
১০। শিশু হাম : ছয় থেকে চব্বিশ মাসের বাচ্চাদের হালকা ভাইরাল জ্বরের তৃতীয় দিনের মাথায় শরীরে লাল দানা দেখা যায়, আবার খুব দ্রুত মিশে যায়। আমরা এগুলোকে বলে থাকি জঙঝঊঙখঅ ওঘঋঅঘঞটগ কিংবা ইঅইণ গঊঅঝখঊঝ। এক্ষেত্রেও কোন ওষুধের প্রয়োজন নেই।
আসলে মা’কে আশ্বস্ত করলেই অধিকাংশ নবজাতক ও শিশুর সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। শিশু চিকিৎসক আরেকটি ব্যাপার দেখবেন, এই লক্ষণগুলোর সাথে অন্য কোন গুরুতর সমস্যা লুকিয়ে আছে কিনা। যেমন-নাভির হার্নিয়ার সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য, কান্নার শব্দে অস্বাভাবিকত্ব থাকলে অন্য আরেকটি ভয়ানক অসুস্থতার লক্ষণ নির্দেশ করতে পারে। আশা করতে পারি, যে সমস্যায় কোন ওষুধ লাগে না, সে সমস্যাতেই শিশু যেন অতিরিক্ত, অপ্রয়োজনীয় ওষুধে অসুস্থ হয়ে না পড়ে।
ষ ডাঃ আহাদ আদনান,
সহকারি রেজিস্ট্রার, শিশু বিভাগ।
আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল, ঢাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।