Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জলবায়ু : ঝুঁকি মোকাবিলার প্রয়াস জোরালো করতে হবে

সম্পাদকীয়-১

| প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব শিশুদের ওপরই বেশি পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত রোগ-ব্যাধিতে যত লোক আক্রান্ত হচ্ছে তার মধ্যে ৮০ শতাংশই শিশু। এ দিক দিয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন। ‘পরবর্তনশীল জলবায়ুতে বাঁচতে শেখা : বাংলাদেশের শিশুদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ শীর্ষক ইউনিসেফ বাংলাদেশের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত অবক্ষয় শিশুদের অধিকার খর্ব করে। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের। দুর্যোগ মওসুমে উপকূলবাসী নানা ঝুঁকি নিয়ে তটস্থ থাকলেও তাদের সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা হয় পরিবারের শিশুদের নিয়ে। তারা খাদ্য, বস্ত্র, থাকার জায়গা ইত্যাদি সমস্যার সবচেয়ে বেশি সম্মুখীন হয়। রোগ-ব্যাধির শিকার হয় আরো ভয়াবহভাবে। জাতিসংঘ ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালকের ভাষায়, বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন কারণে যেসব মৃত্যু ঘটছে তার ৯০ শতাংশই ঘটছে উন্নয়নশীল দেশে এবং এসব মৃত্যুর ৮০ শতাংশই শিশু। তার মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যতই চরম রূপ লাভ করছে এবং দৃশ্যমান হচ্ছে ততই তার বিরূপ প্রভাব শিশু ও কিশোরদের ওপর পড়ছে।  কথিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিশুদের মধ্যে পানি ও বাতাসবাহিত রোগ-ব্যাধি, অপুষ্টি, দুর্যোগকালীন মৃত্যু ও আঘাতের হার বাড়ছে। বন্যার কারণে শিশুদের স্কুল বন্ধ থাকছে। পরিবারগুলো জীবিকা হারিয়ে শহরের বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছে এবং সেখানে সহিংসতা, শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশুরা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। বাংলাদেশ বরাবরই প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত দেশ হিসেবে চিহ্নিত। বান-বন্যা-ঝড়-জলোচ্ছ্বাস প্রতি বছরেরই সাধারণ ঘটনা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় এভাবে বাড়ার প্রধান কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়া। সিডর ও আইলার কথা আমরা জানি। দেশের উপকূলভাগ সিডর ও আইলায় রীতিমতো তছনছ হয়ে যায়। অসংখ্য মানুষ ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পদ হারিয়ে স্থানচ্যুত ও বিপন্ন হয়ে পড়ে। তাদের এখনও পুনর্বাসন করা সম্ভব হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আগামীতে এ ধরনের ঝড়-জলোচ্ছ্বাস আরো হতে পারে, হতে পারে বন্যা, লবণাক্ততার বিস্তার এমনকি অনাবৃষ্টি এবং খরাও। এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আরো মানুষ ক্ষতির শিকার হতে পারে। উপকূলীয় এলাকার কয়েক কোটি মানুষ এখনই ভয়াবহ ঝুঁকিতে আছে। একই কারণে অন্যান্য এলাকার মানুষও কম ঝুঁকিতে নেই। বিশেষজ্ঞ-বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে এমন একটা সময় আসতে পারে যখন উপকূলীয় এলাকার বিরাট অংশ সমুদ্রে হারিয়ে যাবে এবং তখন ব্যাপক হারে মানুষের স্থানচ্যুতি ঘটবে। আমাদের দেশটা এত বড় নয় যে, বিপুল সংখ্যক জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষকে পুনর্বাসন করা সম্ভব হবে। তখন দেশে একটা মহা বিপর্যয়কর অবস্থা দেখা দেবে। আশঙ্কার এই দিকটি মোটেই এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়।
কারো অজানা নেই, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ বা তার মতো দেশগুলো দায়ী নয়, দায়ী ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলো। কিন্তু এর খেসারত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকেই বেশি দিতে হচ্ছে। ইউনিসেফের প্রতিবেদনেও তার আংশিক উল্লেখ আছে। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও ক্ষতি মোকাবিলায় ধনী ও উন্নত দেশগুলো তেমন কোনো সহযোগিতা করছে না। এ নিয়ে বহু আলোচনা-বৈঠক হয়েছে। ফলাফল আশাব্যঞ্জক বলে প্রতীয়মান হয়নি। জলবায়ু তহবিল নিয়ে অনেক আশাবাদ উচ্চারিত হলেও সে আশাবাদ এখন অনেকটা ধূসর হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের নয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায়। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত সমস্যা একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। সুতরাং তার সমাধানে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ-পদক্ষেপ অত্যাবশ্যক। এ ব্যাপারে ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোরই অগ্রবর্তী ভূমিকা রাখা দরকার। এ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সকল আলোচনা ও বৈঠকে বাংলাদেশ বৈশ্বিক উদ্যোগ-পদক্ষেপের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। সদ্য সমাপ্ত ডাভোস সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় ফের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের তাকিদ দিয়েছেন। প্রসঙ্গত তিনি বলেছেন, আমাদের কৃষক, জেলে, কারুশিল্পী ও নারীরা দিনকে দিন অধিকতর ঝুঁকিতে পড়ছে। তাদের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। ইউনিসেফের প্রতিবেদন ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, আমাদের সমস্যা কতটা ব্যাপক ও প্রকট। কিন্তু সমস্যার কথা বলে, সহায়তার কথা বলে বসে থাকার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। জাতীয় উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় যতটা সম্ভব ঝুঁকি মোকাবিলার চেষ্টা করতে হবে। এ দিকে সরকারকে আরো নজর দিতে হবে। আমাদের কৃষক, জেলে, কারুশিল্পী, শিশু, নারী- সবাইকে সম্ভবপর সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।



 

Show all comments
  • selina ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১০:৩৯ এএম says : 0
    too late out of 54 river 30 already natural water flow tied up and rest 20 river within short time natural water totally shut up . so internal all river looks like a huge dune . the Padda river is a fossil river .
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন