Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চালের দাম বাড়ছে কেন?

| প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চালের দাম ফের বাড়তে শুরু করেছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাড়ার এ ধারা অব্যাহত আছে। কবে নাগাদ এবং কোথায় গিয়ে থামবে, বলার উপায় নেই। ধানের এ ভরা মওসুমে চালের দাম বাড়ার কথা নয়। অথচ বাড়ছে এবং তা নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কয়েক মাস আগে হঠাৎই চালের দাম বাড়তে শুরু করে এবং দফায় দফায় বেড়ে মোটা চালের দাম প্রতি কেজি ৩২ টাকা থেকে ৪২ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। চিকন চালের দামও প্রায় এই হারে বাড়ে। আশা করা গিয়েছিল, আমনের চাল বাজারে আসলে দাম কমবে। কিন্তু কমেনি। বরং নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে। কথায় বলে, কারণ ছাড়া কার্যের উৎপত্তি হয় না। চালের দাম বাড়ারও কোনো না কোনো কারণ আছে। সেটা কি? ব্যবসায়ীদের দাবি ও বক্তব্য, আমন ধানের বড় অংশই কৃষকের কাছ থেকে কিনে নিয়েছে ফড়িয়া ও মিলাররা। তাদের চাল করে বাজারে ছাড়ার কথা। তারা তা না করে গুদামে আটকে রেখেছে। মিলারদের কাছ থেকে চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ বাজারে আসছে না। এ কারণে চালের সংকট ও দাম দুই বেড়েছে বা বাড়ছে। খুচরা, পাইকারি ও মিলারদের একে অপরকে দোষারোপ করার একটা প্রবণতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছে, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে তারা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। আবার পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছে, মিলাররা চাল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, দামও বাড়িয়েছে। ফলে তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। মিলারদের বক্তব্য, গ্রামে ধান পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন কোম্পানি ধান কিনে আটকে রেখেছে। ধান সংকটের কারণে ধান ও চালের দাম বেড়েছে।
এভাবে পরস্পর দোষারোপের ব্যাপারটি বহু পুরনো। চালের দাম যখন বাড়ে তখন সংশ্লিষ্ট কেউই দায় নিতে রাজি হয় না। একে অপরকে দায়ী করে গা বাঁচানোর চেষ্টা করে। মাঝখান থেকে ক্রেতা-ভোক্তার পকেট কাটা যায়। তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার কেউ নেই। চাল বা খাদ্যশস্যের বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বাজার ব্যবস্থাপনা বলতে যা বুঝায়, তারও কোনো বালাই নেই। চালের দাম বাড়লে, কেন বাড়ছে তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খোঁজ-খবর করে না। কোথাও কোনো বিভ্রাট, সংকট বা ঘোঁট থাকলে তার মীমাংসার চেষ্টা করে না। সেই অতি পুরনো পন্থা অনুসরণ করে স্বল্পমূল্যে খোলাবাজারের চাল বিক্রির ব্যবস্থা নেয়। এই কার্যক্রম হয়তো কিছুদিন থাকে, তাও গ্রামে-গঞ্জে নয়, শহরাঞ্চলে; তারপর এই কর্মসূচি এক সময় হাওয়া হয়ে যায়। এভাবেই চলছে। সরকারের তরফে সব সময় বড়-গলা করে বলা হয়, দেশে খাদ্যশস্যের কোনো সঙ্কট নেই, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ কথা ন্যায়সঙ্গত মূল্য নিশ্চিত করার পক্ষে যথেষ্ট হতে পারে না। সত্য বটে, দেশে ধান-চালের অভাব নেই। প্রয়োজনে আমদানির ব্যবস্থাও আছে এবং আমদানিও হয়ে থাকে। তারপরও চালের বাজারে অস্থিরতা-অস্থিতিশীলতা কেন তার কোনো জবাব খুঁজে দেখা হয় না। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, মিলার ও ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে এবং ক্রেতা-ভোক্তাদের সেই বাড়তি দামেই চাল কিনতে হয়েছে। কৃষক থেকে মিলার-ব্যবসায়ী ও সেখান থেকে প্রান্তিক ক্রেতা পর্যন্ত চাল আসার যে চেইন, তাতে কোনো সমস্যা হলে বাজারে তার প্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য। মিলার ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে অতি মুনাফা শিকারের প্রবণতা বরাবরই লক্ষ্য করা যায়। কখনো চাল বা ধান মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা হয় এবং সেই সঙ্কটের উসিলা ধরে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। এটা অসৎ মিলার-ব্যবসায়ীদের অতি পরিচিত কৌশল হলেও তা প্রতিহত করার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। বরাবরই তারা অধরা থেকে যায়।
চালের দাম বাড়লে সব শ্রেণির ক্রেতাকেই সেই বাড়তি দামে চাল কিনতে হয়। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়ে নি¤œবিত্তের মানুষ এবং যাদের আয় সুনির্দিষ্ট। আয়-রোজগারের উপায় এমনিতেই সীমিত। যাদের নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা নেই এবং যারা মাস-মাইনের চাকুরে তারাই বেশি নাজুক অবস্থায় পড়ে। সংসার চালাতে গেলে খরচের কোনো শেষ নেই। পণ্য, সেবা ইত্যাদির মূল্য বৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। নিরুপায় হয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো খরচ কমানো যায়, প্রয়োজন পূরণের ব্যাপারটি প্রলম্বিতও করা যায়, কিন্তু চালের খরচ কমানো যায় না। যত দামই হোক, জীবন বাঁচাতে চাল কিনতেই হয়। এ কারণে চালের দাম পড়ার ব্যাপারটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ইস্যু হিসেবে বিবেচিত। চালের দাম বাড়লে মানুষ ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট হয়। চালের দামের সঙ্গে রাজনীতিরও একক সম্পর্ক রয়েছে। এ জন্য সরকার চালের দামের বিষয়টিকে সব সময়ই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আমরা আশা করি, সরকার চালের দাম বাড়ার এই প্রবণতা রোধে অবিলম্বে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে। এর পেছনে কোনো কারসাজি থাকলে তা ভেঙে দিতে হবে এবং দায়ীপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এই সঙ্গে বাজার ব্যবস্থাপনাকে সময়োপযোগী, শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে।



 

Show all comments
  • Md.nuruzzaman ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ২:০৩ পিএম says : 0
    এবার কৃষক খুব খুশি,কারন ধানের ন্যায্য মূল্য পেয়েছে।গ্রামের লোকজন বর্তমান সরকারের প্রশংসা করছে।কৃষি পেশার প্রতি মানুষের একটা নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিয়েছিলো,,, বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা গ্রামে এখন ব্যাপক,,, কারণ ,,,,কৃষকের ধানের দাম পেয়েছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন