পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারাক্কার খড়গে মরছে পদ্মা
রেজাউল করিম রাজু : ভরা বর্ষায় প্রমত্ত হয়ে ওঠা পদ্মা এখন বিশাল বালিচরের নিচে ঘুমিয়ে পড়ছে। বর্ষায় কটাদিনের জন্য জেগে ওঠে। দু’কূল ছাপিয়ে ছুটে চলে তা-ব দেখায়। দু’পাড়ের মানুষকে কাঁদায়। মধ্যচরের বাসিন্দাদের ভাসিয়ে নেয়। এমনটি চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরং এবার দাপটটা ছিল বেশী। সীমান্তের ওপারে বিহারে বন্যার চাপ সামাল দিতে মরণ বাঁধ ফারাক্কার সবকটি গেইট খুলে দিয়ে একসাথে বিপুল পরিমাণ পানি ঠেলে দেয়ায় পদ্মা হয়ে উঠেছিল ভয়ঙ্কারী। বেশ ক’বছর পদ্মার পানি বিপদ সীমা অতিক্রম না করায় ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে এবার। বিপদ সীমার উপর দিয়ে বয়ে গেছে। বুকে কাঁপন ধরিয়েছে পদ্মা তীরবর্তী মানুষদের। শহর রক্ষা বাঁধে ফাটল ধরায়। পাড়ের ভাঙন হয় তীব্র। বিশেষ করে দক্ষিণের চরাঞ্চলের বিপুল পরিমাণ জমি জিরাত ঘরবাড়ি সাজানো সংসার সবি গেছে পদ্মার পেটে। পদ্মার মাঝ বরাবর কয়েক কিলোমিটার লম্বা যা মধ্যচর নামে পরিচিত। দক্ষিণের নদী তার নিঃস্ব মানুষগুলো এ চরে বাসা বেঁধে ছিল। চর উঁচু থাকায় বেশ ক’বছর এটি ডুবে না গেলেও এবার যেমন সেটি তলিয়েছে তেমনি ভেঙ্গেছেও। এতে করে নিঃস্ব মানুষ গুলো আরো নিঃস্ব হয়েছে। ক্ষণিকের জন্য যৌবনবর্তী হওয়া পদ্মা আবার নিরব হওয়ায় নিঃস্ব মানুষগুলো ফের চরের মধ্যে ঘর বসতি গড়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে।
শুষ্ক মওসুম আসতে দেরী হলেও এখনি পদ্মা চরের যে বিস্তৃতি তা আগামী দিনের শংকা জাগায়। গত দু’দিন পদ্মার তীর ধরে ছুটে চলে। বিশাল বালিচরে ঘুরে দেখা যায় এখনি বালিচরের বিশালত্ব। এবার নগরীর উত্তর তীর থেকে নদীর ধারা সরে গেছে অনেক দুরে। যেটুকু পানি আছে তাও দ্রুত কমে যাচ্ছে। শুষ্ক মওসুম শুরুর আগেই শুরু হয়ে গেছে শুষ্ক মওসুমের অবস্থা। যেসব স্থানে পানি আছে তার গভীরতাও কম। ডুবো চরে নৌকা আটকে যাচ্ছে। সপ্তাহ খানেক আগে যেখান দিয়ে নৌকা চলেছে। সে পথে এখন আর যাওয়া যাচ্ছে না। বিশাল পদ্মার বালিচরে যেখানে একটু পলি পড়েছে। সেখানে চলছে চাষাবাদের চেষ্টা। সরিষার হলুদ ফুলের বিছানা। কিংবা মশুর, কালাই আর গমের সবুজ চাদরে মোড়া। চলছে বোরো আবাদের প্রস্তুতি। সেচ দেবার জন্য নদীর মধ্যখানে চরের বুক ফুড়ে বসানো হয়েছে সেচ মেশিন। নদীর মধ্যেও স্তর না পাওয়ায় কোথাও কোথাও গর্ত করে সেখানে সেচ মেশিন বসানো হয়েছে। বোরোর বীজতলায় সবুজতা নজর এড়ায়না। পদ্মা মরে যাবার কারণে এর শাখা ও প্রশাখাগুলোর পরিণতি আরো ভয়াবহ হয়েছে। শাখা নদী বড়াল, মরা বড়াল নাগর নারদ, ইছামতি, মুছাখান, ধলাই, হুরাসাগর, গড়াই, চিকনাই, মাথাভাঙ্গা, ভৈরব, নবগঙ্গা, চিত্রা, বেতাল, হরিহর, কালিকুমার, কালিগঙ্গা, কাজলা, হিসনা, সাগর খালি, কপোতাক্ষ, চন্দনা, বেগবতি প্রায় পানি শূন্য। এসব নদীর বুকে চাষাবাদ চলছে। যেগুলোতে এখনো সামান্য পানি আছে তা জানান দিচ্ছে নর্দমার কথা। শুষ্ক মওসুম শুরুর আগেই ঐ পানিটুকু আর থাকবে না। পদ্মার উপনদী মহানন্দা। সেই মহানন্দার বুকে শুরু হয়েছে চাষাবাদ। মূল নদী পদ্মার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে দেখা যায় সকাল বিকেল প্রচুর মানুষ ভিড় জমাচ্ছে মরা পদ্মার বুকে। সকালের দিকে কড়া মিঠে রোদ্র গায়ে মেখে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়ারা জুটি বেঁধে হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দূরে ক্ষীণ ধরায় প্রবাহমান পদ্মার পানিতে পা চুবিয়ে হাঁটছে। যেন সমুদ্রের বীচে হাঁটার স্বাদ মেটানোর মত। বসে নেই দুরন্ত বালকের দল। কেউ ফুটবল কেউ ক্রিকেট নিয়ে মেতে উঠেছে। মরা পদ্মার চরে আসা ভ্রমণ পিয়াসীদের পিছু ছাড়েনি ফুচকা, চটপটি, পেয়ারা, আমড়া চিপসের টোকাইরা। কেউ কেউ সাগর পাড়ের আদলে বড় বড় ছাতা টানিয়ে চেয়ার বিছিয়েছে। বেচাকেনা মন্দ নয়। শিক্ষা নগরী রাজশাহী হওয়ায় এখানে বিভিন্নস্থান থেকে পড়তে আসে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। তাদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি মরা পদ্মার চরে যেন প্রাণের স্পন্দন জাগায়। তাদের খুঁনসুটি নজর এড়ায় না। আর প্রযুক্তির যুগে সেলফির আধিপত্ত কম নয়। নদীর তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখা যায় বালি খেকোর দল দিনরাত ড্রেজার দিয়ে একেবারে তীর থেকে বালি তুলছে। নগরীর পশ্চিমে গোদাগাড়ী থেকে পূর্বে চারঘাট উপজেলা পর্যন্ত পদ্মার বুক থেকে বালি তোলা হচ্ছে। নগরীর সাহাপুর, শ্যামপুর পাড়ের উঁচু বালির স্তূপ। সেখান থেকে পানি গড়িয়ে নামার ফলে পাড়ের বিভিন্নস্থানে ভাঙন দেখা যায়। বাঁধের উপর দিয়ে বালিবহন করা হচ্ছে। এলাকাবাসী জানান, ওরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না। কিন্তু ভরা বর্ষায় পাড়ের এসব মানুষকে শংকায় দিন কাটাতে হয়। মরা পদ্মার বালিচরে যেখানে পলি পড়েছে সেখানে ভূমি দস্যুরা হামলে পড়েছে। তাদের বসত ঘরের পাশের চরটুকুতে তাদের কোন অধিকার নেই। ওদের কামলা হয়ে খাটতে হচ্ছে। অথচ এসব নদী কেন্দ্রীক মানুষ একদিন ভরা পদ্মায় তার বাপ দাদাদের ডিঙ্গী নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে দেখেছে। মালামাল নিয়ে বড় বড় নৌকায় পাল তুলে ছুটিয়েছে। এখন সবি অতীত। বাপ-দাদার পেশা বদলে এখন বাধ্য হয়ে পেশা বদল করেছে। নৌকার হাল আর পাল ছেড়ে লাঙ্গল, কাস্তে, কোদাল হাতে নিয়েছে। সামান্য কজন এখনো বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখে মরা গাঙ্গে মাছ ধরার চেষ্টা চালায়। নদী মরে যাবার সাথে সাথে মাছও উধাও হয়েছে। এরপর রয়েছে ভারতীয় বিএসএফ ও জেলেদের হঠাৎ অত্যাচার। দক্ষিণের বাংলাদেশের চর ভেঙ্গে তলিয়ে যাওয়ায় এখন সেখানে বিএসএফ ভাগ বসিয়েছে। সারদা ক্যাডেট কলেজের সামনে নদীর অদূরের তীর দেখিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা সতর্ক করে বললেন ভুল করে ওচরে যাবে না না। বিএসএফ ধরে নিয়ে যাবে। এখন ওটা ওদের দখলে। মাছ ধরা নৌকাগুলো প্রায়শই তাদের হামলার শিকার হয়। ভারতীয় জেলেরা এসে বাংলাদেশীদের মাছ কেড়ে নেয়। এমন অবস্থা গোদাগাড়ী হতে বাঘা উপজেলা পর্যন্ত নদীর দক্ষিণপাড়ের মানুষের। পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভারতের পানি জল্লাদরা গঙ্গা পদ্মার বুকে ‘ফারাক্কা’ নামক খড়গ বসিয়ে পদ্মাকে মেরে ফেলেছে। তাদের পানি শোষণ নীতি আরো আঁটোসাটো করেছে। বর্ষার সময় ওপারের বন্যার চাপ সামলাতে ফারাক্কার সবগেট খুলে দিয়ে এপারের মানুষ ডুবিয়ে মারা। আবার ওপারের পানির চাপ কমে গেলে বন্ধ করে এপারে শুকিয়ে মারা। গঙ্গা চুক্তির ব্যাপারে নদী পাড়ের মানুষের ক্ষুব্ধ মন্তব্য চুক্তি আছে পানি নাই। তবু ওদের লজ্জা নাই। বিশেষজ্ঞদের অভিমত পদ্মার উৎস গঙ্গায় ভারত যে লংকাকা- শুরু করেছে। তাতে অদূর ভবিষ্যতে পদ্মায় হয়তো আর পানি দেখা যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।