পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গ্যাস সঙ্কটে দিশেহারা গ্রাহক। সমস্যা নিরসনে কার্যত কোন উদ্যোগ না থাকায় সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে দিন কাটাচ্ছে। গ্যাস সঙ্কটের কারণে একদিকে গ্রাহকদের গ্যাসের দাম দিতে হচ্ছে, অন্যদিকে রান্না করতে না পেরে বেশি দামে বাইরের খাবার খেতে হচ্ছে। ফলে তাদের বাড়তি খরচ যোগাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি নিরসনে গ্রাহকরা তিতাস গ্যাস অফিসে ধর্ণা দিলে সেখান থেকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, তাদের কিছু করার নেই। এক্ষেত্রে তারা ভোগান্তি এড়াতে রান্নার কাজে সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহারের জন্য গ্রাহকদের পরামর্শ দেন। এদিকে এলপিজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন নীতিমালা না থাকায় এ সংক্রান্ত কোম্পানীগুলো খেয়ালখুশি মত সিলিন্ডারের দাম হাঁকাচ্ছে। গ্যাস সংকটের ব্যাপারে পেট্রোবাংলা দৈনিক ইনকিলাবকে জানিয়েছে, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কমে গেছে, তাছাড়া সার উৎপাদন কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখা হয়েছে। অন্যদিকে শীতে পাইপলাইনে গ্যাস জমে যাবার বিষয়টি তো রয়েছেই। প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিয়মানুযায়ী পরিষ্কার না করার ফলে গ্যাস পাইপলাইনে ময়লা এবং গ্যাস জমাট বেঁধে রয়েছে।
গ্যাস সংকটের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। অনেকদিন থেকেই এটা চলে আসছে। এই সংকট কতটা স্বাভাবিক কতটা কৃত্রিম সে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া যাবেনা। বলতে দ্বিধা নেই, দেশে বা রাজধানীর সর্বত্র এক ধরনের সংকট বিরাজমান নয়। বিশেষ বিশেষ অঞ্চল বলে পরিচিত এলাকায় গ্যাসের সংকটের বদলে গ্যাসের প্রচ- চাপ রয়েছে। মূলত সংকটে রয়েছেন দেশের সাধারণ গ্রাহকরা। সংশ্লিষ্টরা স্বীকার করুক বা না করুক সংকটের আরেকটি কারণ অবৈধ সংযোগ। অবৈধ সংযোগের সাথে বণ্টনের সমস্যা রয়েছে। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে অবৈধ সংযোগের সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে গ্যাস নিয়ে বর্তমান সময়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি রয়েছে। শিল্প কল-কারখানা থেকে শুরু করে গৃহস্থালিতে গ্যাসের কোন বিকল্প নেই। দেশে গ্যাসের মজুদ নিয়ে যেসব খবর প্রকাশিত হচ্ছে তাতেও হিসাবের গরমিল রয়েছে। আমাদের সমুদ্রের গ্যাস অনুসন্ধানের ব্যাপারটিও অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশের সাথে গ্যাস নিয়ে যেসব চুক্তি হচ্ছে তা থেকে আমাদের উপকৃত হবার সুযোগ থাকলেও সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কোন আগ্রহ-উৎসাহ রয়েছে বলে মনে হয় না। বলা দরকার, অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ইউরোপীয় বিশ্বের দেশগুলোও এক দেশ খেকে অন্য দেশে গ্যাস রফতানি করছে। অথচ আমদের প্রতিবেশী ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এবং মিয়ানমারে অতিরিক্ত গ্যাসের মজুদ থাকার পরেও আমরা তা আমদানি করতে পারছি না। আমাদের পাইপলাইনসহ সকল ধরনের ব্যবস্থাপনা রয়েছে। কেবল সংযোগ হলেই আমরা উপকৃত হতে পারি। সেদিকে নজর না দিয়ে এলপিজি চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা কেন এবং কোনযুক্তি তারও বিশদ বিবরণ থাকা দরকার।
গ্রাহকদের নিরুৎসাহিত করতে একদিকে দামবাড়ানোর পাঁয়তারা অন্যদিকে সরবরাহে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি অনভিপ্রেত। দেশে যে পরিমাণ গ্যাসের মজুদ রয়েছে তার যেমন সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা দরকার তেমনি ভবিষ্যত বিবেচনা থেকে গ্যাস আমদানির ব্যাপারে আগে থেকেই যতœবান হওয়া জরুরি। টালবাহানা না করে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া আবশ্যক। গ্যাসের উপর চাপ কমাতে অবশ্যই তেলের দামের যুক্তিসংগত সামঞ্জস্য বিধান করা সংগত। বিশ্বব্যাংকও বলছে তেলের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে এলে তার ইতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বে। অথচ সেদিকে সংশ্লিষ্টদের কোন নজর নেই। ভাবখানা এমন যে সাধারণ মানুষ যে সুবিধাটুকু পাচ্ছে তা থেকে তাদের বঞ্চিত করাই যেন সংশ্লিষ্টদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। প্রকৃত প্রস্তাবে গ্যাসলাইনগুলের সংস্কার করে বিদ্যমান সরবরাহের সংকটের লাঘব এবং আগামীর বিবেচনাতে গ্যাস আমদানির কার্যকর চিন্তা করা প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।