২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
এখন মিডিয়ার প্রভাব এতটাই সুদূরবিস্তৃত যে যাই তথ্য চান না কেন তা হাতের নাগালে পেতে বিন্দুমাত্র চেষ্টা করতে হয় না। আরএই মিডিয়ার দৌলতে সবাই মনে করেন যে রোগা হতে হলে, এতমাত্র উপায় ডায়েট থেকে কার্বোহাইড্রেট বাদ দেয়া। ‘কার্ব গিল্ট’ এখন আমাদের সমাজে প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় প্রত্যেক মোটা মহিলাই আমার কাছে এসে বলেন, “কার্ব খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছি কিন্তু ওজন কমাতে পারছি না”। ব্যাপারটা এমনই হয়ে গেছে যে সকলেই মনে করেন কার্ব খাওয়া না ছাড়লে রোগা হওয়া যাবে না। আর বাকি সব চেষ্টাই বিফলে। আর আমরা এতদিনে জেনে গেছি যে, কার্বোহাইড্রেট আমাদের রক্তে প্রবেশ করে ব্লাড গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। এই ইনসুলিন রক্তে সুগারের মাত্রা কমিয়ে দেয়। কিভাবে? ইনসুলিনের সাহায্যে ব্লাড গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ করে ফ্যাট রূপে জমা হয়। বিশেষ করে পেটের ফ্যাট সেলে। শুধু তাই নয়। ইনসুলিনের কারণে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ তো কমেই, সঙ্গে মস্তিস্কে এনার্জির পরিমাণও কমে। ব্রেনের হাঙ্গার সেন্টারে এর প্রভাব পড়ে এবং এনার্জি রিচ, সুগার লোডেড খাবার খেতে ইচ্ছে করে। ফল ফ্যাট ডিপোজিশন ও ডায়াবেটিস। প্রশ্ন করতেই পারেন ডায়াবেটিস কেন? কারণ একটা সময়ের পর ইনসুলিন কাজ করে না। তখন ব্লাড গ্লুকোজের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বেশি পরিমাণে ইনসুলিন প্রয়োজন পড়ে। প্যানক্রিয়াস পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন নিঃসরণ করতে পারে না। ব্লাড সুগারের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। এবার এত থিওরির মধ্যে যেতে যদি নাই বা চান, তা হলেও মোদ্দা কথা “কার্বস খান, মোটা হন, ডায়াবেটিসে ভোগুন। কার্ব বাদ দিন, রোগা হন, ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করুন”। বিজ্ঞান অবশ্য অন্য কথা বলে। লো কার্ব ডায়েট আর হাই কার্ব ডায়েটের মধ্যে সেরকম কোনও তফাৎ নেই। একটা যে অন্যটার থেকে ভাল তা কিন্তু হলফ করে বলা যায় না। বাস্তব জীবনে আপনি কতটা ক্যালরি খাচ্ছেন, সেটাই আসল কথা। আপনি যাই খান না কেন, (প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট), তা যদি বার্ন না করেন, তা হলে মোটা হবেনই। আর যদি যা খাচ্ছেন, তার চেয়ে বেশি ক্যালরি বার্ন করেন, তা হলে ওজন কমবে। তার মানে কি লো কর্ব ডায়েটের কোনও ফল নেই? তা নয়। শহুরে মানুষদের কথা যদি ধরি, তা হলে দেখবেন মেদবৃদ্ধিও মূল কারণ ডায়েটে অতিরিক্ত পরিমাণে রিফাইন্ড কার্ব ও ফ্যাট। তা হলে ডায়েট থেকে কোন কার্বোহাইড্রেট বাদ দেবেন? কলায় ২৬ গ্রাম মতো ক্যালরি থাকে। এক বাটি কর্নফ্লেক্সেও এই পরিমাণ ক্যালরি থাকে। কর্নফ্লেক্সের কার্ব হল রিফাইন্ড শুগার। ফলে তা তাড়াতাড়ি রক্তে অ্যাবজর্বড হয় এবং গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলের ক্ষেত্রে অবশ্য এটা প্রযোজ্য নয় কারণ ফলে কার্বের সঙ্গে ফাইবারও থাকে, যা শুগার অ্যাবজর্বশনের গতি কমিয়ে দেয়। আপনার যদি ডায়েট থেকে কার্ব বাদ দিতে হয়, তা হলে এমনভাবে প্লানিং করুণ যাতে ফ্যাট আর শুগার বাদ দিতে পারেন। ভাজাভুজি বা মিষ্টি খাওয়া ছেড়ে দিন। এতে ক্যালরি ইনটেক কমে যায়। সাধারণত যারা ডায়েট করেন, তারা সকলেই কলা আর ডিম খেতে বারণ করবেন। বাজে কথা। কখনও শুনেছেন কেউ ফল বা ডিম খেয়ে মোটা হন? এরাই কিন্তু আবার ব্রেকফাস্টে ৪টা টোস্ট আর জ্যাম খান, অফিসে ¯œ্যাক টাইমে কবিরাজি বা কাটলেটে মনোনিবেশ করেন। বেশিরভাগ মোটা মানুষরাই (ভারতীয়দের কথা বলছি) দিনে ৪০০-৫০০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট খান। আর তার মধ্যে আবার বেশিটাই আসে ময়দা আর চিনি থেকে। এবার তাদের ডায়েটকে ১০০ গ্রাম কার্বে বেঁধে ফেলা চাট্টিখানি কথা নয়। জাঙ্ক খাওয়া তো বন্ধ করতেই হবে। ভাত, রুটি খাওয়াও বাতিল করতে হবে। এত শুরুতে ব্যাপক হারে ওজন কমবে। এর সঙ্গে যদি এক্সারসাইজ করা যায় তা হলে তো সোনায় সোহাগা। সমস্যাটা অন্য জায়গায়। সারা জীবন লো কার্ব ডায়েটের ওপর থাকা সম্ভব নয়। অনেকেই পারেন না। সুতরাং লো কার্ব ডায়েটকে আপনার হেলথ প্রোগ্রামে ইনডাকশন ট্রেনিং মনে করুন। কয়েক মাস মেনে চলার পর, যখন দেখবেন ওজন কমে গেছে, তখন ডায়েট রিভিশন করা দরকার। এতে সারাক্ষণ আপনাকে ডায়েটের কড়া অনুশাসন মেনে চলতে হবে না। লো কার্ব ডায়েটের আরও একটা প্লাস পয়েন্ট আছে। শুধু রিফাইন্ড কার্ব বাদ দেয়াই নয়, সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। শরীরস্বাস্থ্য ভাল রাখতে এই অপশন দারণ। এর সঙ্গে বলে নেয়া ভাল, সবার পক্ষে রেসট্রিকটিভ ডায়েট ভাল নয়। যারা খুব মোটা বা যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা বেরিয়াট্রিক অপারেশনের কথা ভাবতে পারেন।
ষ ডাঃ শাহজাদা সেলিম
সহকারী অধ্যাপক, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
মোবাইল নং ০১৯১৯০০০০২২
ংবষরসংযধযলধফধ@মসধরষ.পড়স
কর্মফোর্ট ডক্টর’স চেম্বার, ১৬৫-১৬৬, গ্রীন রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা
ফোনঃ ৯১৩৫৯৪৭-৮, ০১৭৩১ ৯৫৬০৩৩
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।