২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
বাংলাদেশের মোট আয়তন ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার বা ৫৬,৯৭৭ বর্গমাইল। আর জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটির বেশি। প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা বসবাস করে ৯৯৩ জন। যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এত বিপুল জনগোষ্ঠীর দানা জাতীয় খাদ্যের চাহিদা, শাক-সবজি, ফল এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। আমাদের দেশে শীতকালে নানা প্রকার শাক-সবজি উৎপন্ন হয়। এদের মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, টমেটো, আলু, গাজর, বেগুন, মূলা, লাউ, শিম, ধনেশাক, লালশাক প্রভৃতি অন্যতম। শীতকালীন শাক-সবজি অতি প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাদ্য। এতে মানব দেহের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি এবং ক্যালসিয়াম, লৌহ, আয়োডিন প্রভৃতি অতি প্রয়োজনীয় খনিজ লবণ রয়েছে। তাছাড়া শাক-সবজি থেকে কিছু পরিমাণে লৌহ পদার্থ এবং যথেষ্ট পরিমাণে শর্করা জাতীয় পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। বিভিন্ন শিম জাতীয় সবজিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে এবং অন্যান্য শাক-সবজিতে প্রোটিনের পরিমাণ কম থাকলেও লাইসিন ও ট্রিফটোফেন নামক অপরিহার্য এ্যামাইনো এসিড বেশি আছে। তাছাড়া গাঢ় সবুজ ও হলুদ রঙের শীতকালীন শাক-সবজি বিশেষ করে গাজর, টমেটো, বাঁধাকপি, মূলাশাক, লালশাক ও পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন থাকে। এ ক্যারোটিন হতে আমাদের দেহে ভিটামিন ‘এ’ উৎপন্ন হয়।
পুষ্টির দিক থেকে শীতকালীন শাক-সবজির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করার পাশাপাশি শাক-সবজি দেহের রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই শরীরের চাহিদা মতো শাক-সবজি খেলে নানা রকম রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং শরীর সুস্থ থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, শাক-সবজি খাওয়ার ফলে ক্যান্সার, কিডনী রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম। গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, যারা পর্যাপ্ত পরিমাণে শাক-সবজি খেয়ে থাকে তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কাও কমে যায়। শীতকালীন শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে। এই আঁশ খাদ্য দ্রব্য হজম, পরিপাক ও বিপাক প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। শাক-সবজিতে বিদ্যমান আঁশ মলাশয়ের ক্যান্সার, বহুমূত্র, স্থুলকায়ত্ব, হৃদপি-, রক্তচাপ, মূত্রনালীর পাথর ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করে দেহকে সুস্থ ও সতেজ রাখে। তাছাড়া শীতকালীন শাক-সবজি শিশুদের অপুষ্টিজনিত রাতকানা, অন্ধত্ব, রিকেট, বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ, স্কার্ভি, মুখ ও ঠোঁটের কোণে ঘা, রক্তশূন্যতা দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখে। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, অপুষ্টি ও দেহের রোগ প্রতিরোধে শীতকালীন শাক-সবজির ভূমিকা অপরিসীম।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, একজন শিশুর প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ গ্রাম ও একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের জন্য দৈনিক ২০০ গ্রাম শাক-সবজি খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে একজন পূর্ণ বয়স্ক লোক গড়ে ৩০ গ্রাম সবজি খায়। এর সাথে আলু ও মিষ্টি আলু যোগ করলেও প্রতিদিন গড় পরিমাণ ৭০ গ্রামের বেশি হয় না। অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় আমরা খুব অল্প পরিমাণ শাক-সবজি খাই। পৃথিবীর আর কোন দেশের মানুষ সম্ভবত এত কম পরিমাণ শাক-সবজি খায় না। বস্তুত আমাদের খাদ্য তালিকায় ভাত জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সে তুলনায় শাক-সবজির কদর একেবারেই কম। শীতকালীন অধিকাংশ শাক-সবজি বিশেষ করে পাতা জাতীয় সবজি ভিটামিন ‘সি’-তে ভরপুর। ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ লালশাক, পালংশাক, মূলাশাক কিংবা দেশিয় যে কোন শাকের মাত্র ৫০ গ্রাম আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু শাক-সবজি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগি। শাক-সবজি আবাদের সুবিধা হলো ফসলি মাঠে যেমন শাক-সবজি চাষ করা যায়, তেমনি জমির আইল বা রাস্তার ধারে, পুকুর পাড়ে এক টুকরো জায়গায়, বসতবাড়ির আঙিনায়, ঘরের চালে, দালানের ছাদে, বারান্দার টবে, টিন বা মাটির পাত্রেও অনেক শাক-সবজি আবাদ করা যায়। বাংলাদেশের মানুষের জন্য অপুষ্টি একটি মারাত্মক জাতীয় সমস্যা। এদেশের নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর-কিশোরী অধিকাংশ মানুষই অপুষ্টির শিকার। তবে শিশু, কিশোর-কিশোরী ও মহিলারাই বেশি অপুষ্টিতে ভুগছে। ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শীত মৌসুম অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ও গুরুত্বপূর্ণ। এ মৌসুমে উজ্জ্বল সূর্যকিরণ পাওয়া যায় এবং বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে ফলে ফসল ফলানোর বিভিন্ন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে চলে। এতে ফসল ভালো জন্মে এবং আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। কাজেই আসুন এ সময় অধিক পরিমাণে পুষ্টিসমৃদ্ধ শীতকালীন শাক-সবজির চাষ করে তা পরিমাণমতো খাওয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক তথা জাতীয় সমস্যা দূরীকরণে সচেষ্ট হই এবং আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ-সবল ও অপুষ্টিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
ষ ডা: মাওলানা লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিষ্ট
মোবা: ০১৭১৬২৭০১২০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।