পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলার উপর দিয়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। তীব্র শীতে কাঁপছে গোটা দেশ। গ্রামগঞ্জের মানুষ হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানারোগ। প্রতিদিন জেলা হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে এসব রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত রোববার পর্যন্ত শীতজনিত রোগে সারাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ হাজারেরও বেশি। এ মধ্যে ১২ জন মারা গেছে। এটি সরকারি হিসাব হলেও প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে বেসরকারি হিসাবে এসংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে। এদিকে প্রচন্ড শীত ও ঘনকুয়াশার কারণে সারাদেশে স্বাভাবিক প্রত্যাহিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। অনেক অঞ্চলে শিশু ও বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ শীতে কাবু হয়ে ঘর থেকে বেরুতে পারছে না। হাড় কাঁপানো শীতে ছন্নছাড়া শিশুরা গরম কাপড়হীন অবস্থায় পড়ে আছে বিভিন্ন স্টেশনে পার্কে। আগে সরকার, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, সমাজসেবক, দানশীল ব্যক্তি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবি প্রতিষ্ঠান গরীবদুঃখীর মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও এবারে তারা অনুপস্থিত।
প্রকৃতিতে শীতের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। শীতের সাথে সম্পর্ক রয়েছে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের। শীতের কারণে অনেক ভাইরাসের স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। শীতের সাথে সম্পর্ক রয়েছে বরফ জমার অর্থাৎ শীত না হলে পাহাড়ে যথেষ্ট বরফ জমে না। আর বরফ না জমলে গরমে পানি পাওয়া যায় না। এটি হচ্ছে প্রকৃতিক নিয়মের অংশ। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্যি, প্রতিবেশির বৈরি পানিনীতি কারণে আমাদের দেশের নদ-নদীতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শীতের বেলাতেও। নদ-নদীতে পানি না থাকায় খাল-বিলগুলোও পানিশূন্য। প্রাকৃতিক রুক্ষতার বিরূপ প্রভাব হিসেবেই আমাদের দেশে শীতও যেন অনেকটা বৈশিস্ট্য। শীত মওসুমের শুরুটা অনেক আগে হলেও মাত্র সেদিনই শীত পড়তে শুরু করছে। আর শুরুতেই জেঁকে বসেছে। ফলে শীতের জন্য স্বাভাবিক যে প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন তাতে ব্যত্যয় ঘটেছে। অর্থনৈতিকভাবে যারা অসমর্থ শীতের প্রকোপ তাদের উপরই বেশি। আগে সাধারণ মানুষসহ সর্বশ্রেণীর নাগরিক যেভাবে শীতার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসতেন এবারে এবং বলা যায় গত কয়েকবছর থেকে সে অবস্থা বিরাজমান নেই। এই বাস্তবতায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরো চরমে উঠেছে। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, খোদ রাজধানীতেও শীতার্ত মানুষের কষ্ট দুর্বিষহ।
শীত যে আসছে একথা কয়েকদিক থেকেই পত্র-পত্রিকা মারফত জানা গেছে। অনেকটা আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ীই শীত এসেছে। শীত এলে কোথায় কি অবস্থা হবে এটিও কোন নতুন বিষয় নয়। শীতের কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির ব্যাপারটিও কারো অজানা নয়। তা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কোন প্রস্তুতি আছে এমনটা মনে হচ্ছে না। এটা সত্যিই দুঃখজনক। শীতের কারণে যে সবরোগ-বালাই দেখা দেয় সেগুলোও নতুন কিছু নয়। সারাদেশের স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালগুলোতে এর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকাটাই সঙ্গত ছিল। এসময়ে শিশু-বৃদ্ধদের যে করুণ হাল হয় তাতেও নতুনত্ব কিছু নেই। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যমতে, এবারের শীত আরো কদিন থাকতে পারে। এটাই যে বছরের শেষ শীত তা নাও হতে পারে, তাই সাধারণ মানুষের শীতের কষ্ট নিবারণে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক হওয়া জরুরি। রাজনৈতিক অস্বাভাবিকতার কারণে রাজনীতিবীদরা যেভাবনাতেই থাকুন না কেন শীতার্ত সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো আবশ্যক। সামর্থবানরা কেবল নিজেদের শীতনিবারনের কথা না ভেবে সাধারনের দিকেও একটু তাকাবেন -এটাই প্রত্যাশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।