Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ক্রেডিট কার্ড ভোগান্তি

সম্পাদকীয়-২

| প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সুবিধা দেয়ার কথা বলে ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ড এক নতুন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ক্রেডিট কার্ড  ইস্যুকারী ব্যাংকগুলোর প্রকাশ্য সুদের হার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। তার ওপর রয়েছে, ২০ থেকে ৩০ রকম হিডেন চার্জ। সব মিলিয়ে সুদ নিচ্ছে, ৩০ থেকে ১৫০ শতাংশ। গড়ে সুদ নিচ্ছে ৪০ শতাংশ হারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২৫ টির ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। বিদেশি নয়টি ব্যাংকের মধ্যে ক্রেডিট কার্ড রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার ব্যাংক, এইচএসবিবিসি ও ব্যাংক আল ফালার। এসব ব্যাংকের সুদের হার ১৮ থেকে ৩৬ শতাংশ। গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন, শর্ত প্রযোজ্য লিখেই দেশের ব্যাংকগুলো এই প্রতারণা করছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেছেন, ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদশ ব্যাংক ফ্লোটিংরেট চালু করেছে। সেকারণে একই দিনে একেকটি ব্যাংকে একেক রেট হতে পারে। তবে এই পার্থক্য খুব বেশি হয়না। ক্রেডিট কার্ডের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারকারী যেদিন অর্থ ফেরত দিতে যাবেন, ওই দিনের ওই ব্যাংকের যে বিনিময় হার থাকবে সেই হারেই জমা দেবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইনান্সিয়াল এন্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হিসাবের ভুলের জন্য এমনটা হচ্ছে।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে বর্তমান সময়ে যেক’টি অনিয়মের বিষয় আলোচনায় উঠে আসছে তার মধ্যে ক্রেডিট কার্ড প্রতারণার বিষয়টি অন্যতম। এটি মূলত কার্ডধারীদের কাছে শুভঙ্করের ফাঁকি হিসেবে পরিচিত। একথা যথার্থই বলা হচ্ছে, অনেকের কাছেই নগদ অর্থ রাখার চেয়ে ক্রেডিট কার্ড রাখা পছন্দনীয়। বাস্তবতা হচ্ছে, এপর্যন্ত এনিয়ে গ্রাহক ভোগান্তি কম হয়নি। ব্যাংকগুলো প্রকৃত সত্য আড়াল করে এই ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের মাঝে বিতরণ করে। সাধারণত যারা একবার এসব কার্ড ব্যবহার করেছে আর দ্বিতীয়বার তারা সে মুখো হচ্ছেন না। তবে ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতেও রয়েছে সমস্যা। হিসাবের ভুল ব্যাপারটি নিয়ে অবশ্যই ভাববার রয়েছে। এই ভুল কতটা ইচ্ছাকৃত কতটা অনিচ্ছাকৃত তা সাধারণের পক্ষে বোঝা কষ্টকর। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তার মতে, যদি তাদের মনে হয় ইচ্ছাকৃত ভুল তাহলে তদন্তের পর তারা ব্যবস্থা নেন। এটিও এক ধরনের দায়সারা ব্যাপার মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এর পিছনে কোন একটি চক্র রয়েছে যারা কথিত হিসাবের ভুলের টাকা মেরে দিচ্ছে। এর আগে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে সধারণ গ্রাহকদের টাকা মেরে দেয়ার পিছনেও কোন কোন  ব্যাংক কর্মকর্তার কারসাজির খবর বেরিয়েছিল। এখানে অবশ্যই বিবেচনার দাবি রাখে যে, অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলো মূলত ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। সেসব দেশে এ ধরনের অভিযোগ বলতে গেলে নেইই। এ থেকে  এ প্রসঙ্গ কোন বিবেচনাতেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না যে, অবশ্যই এমন একটি মহল থাকতে পারে যারা সামগ্রিক দুর্বৃত্তায়নের সাথে জড়িত।
ক্রেডিট কার্ড ব্যাংকিং সিস্টেমেরই অংশ। প্রয়োজন না হলে কেউ এসব কার্ড ব্যবহার করে না। সে বিবেচনায় ব্যবহারকারীদের সুযোগ-সুবিধা নির্বিঘœ করাই সংশ্লিষ্টদের প্রধান দায়িত্ব। তার পরিবর্তে যদি গ্রাহক ভোগান্তি বাড়তে থাকে তাহলে গ্রাহকরা এর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এক্ষেত্রে সততা, নৈতিকতা বজায় রাখা দরকার। যেসব প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে এবং হচ্ছে এগুলো নতুন কিছু নয়। যেহেতু সমাধান হচ্ছে না তাই এটা বলা যায়, হয় প্রয়োজনীয় মনিটরিং অনুপস্থিত নয়ত আইনের দুর্বলতা রয়েছে। সেকারণে কোথায় কোন দুর্বলতা রয়েছে তা যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে  গ্রাহক সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি। সংশ্লিষ্ট সকলে এ ব্যাপারে যত্মবান হবেন- এটাই প্রত্যাশিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন