Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নিউজিল্যান্ডই সাকিবের প্রিয় প্রতিপক্ষ!

| প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ কিংবা নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনই বলুন, অথবা প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড সাকিবের জন্য নিউজিল্যান্ড মানেই পয়মন্ত প্রতিপক্ষ! তথ্যটি আশ্চর্য হলেও সত্য। টেস্টে অল রাউন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রথম চিনিয়েছেন কার বিপক্ষে, জানেন? ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। চট্টগ্রাম টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭১ রানের ইনিংসের পাশে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে (৭/৩৬) সেই যে শুরু। ঘুরে ফিরে টেস্টে যতোবার প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড, ততোবারই ছড়িয়েছেন আলো। ভারতের বিপক্ষে ২০০৭ এ টেস্ট অভিষেকের পর টেস্ট একাদশে অপরিহার্য হতে লেগেছে সময়। স্কোয়াডে থেকেও প্রথম ৬টি টেস্টের মধ্যে খেলার সুযোগ পেয়েছেন ৩টি। বাঁ হাতি স্পিন কোটায় মোহাম্মদ রফিক অপরিহার্য বলে টেস্টে সেরা একাদশে সুযোগ পেতে ভাগ্যের উপর তাকিয়ে থাকতে হতো সাকিবকে! ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে ডানেডিনে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে তামীম, জুনায়েদ, সাজেদুলের অভিষেক হলেও ড্রেসিংরুমে কাটাতে হয়েছে সাকিবকে! ওয়েলিংটন টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৩ রানের মধ্যে লড়াকু ৪১ এ কোচ জেমি সিডন্সের চোখে অপরিহার্য হয়ে ওঠা সাকিব, সেই থেকে টেস্ট একাদশে অটোমেটিক চয়েস এই বাঁ হাতি স্পিন অল রাউন্ডার।
টেস্ট, কিংবা ওয়ানডেÑ দুই ফরমেটে সেরা অল রাউন্ডারের সিংহাসনে সাকিবের উঠে আসার গল্প রচনায় সাকিব অগ্রভাগে রাখতে পারেন প্রিয় প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডকে। নিউজিল্যান্ডকে পেলে কতোটা ভয়ংকর রূপ ছড়ানÑ ১৬ ওয়ানডে ম্যাচে ৪৮৯ রানের পাশে ৩৩ উইকেট, ৭ টেস্টে সেখানে ৬৯৬ রানের পাশে ২০ উইকেট তার আদর্শ দৃষ্টান্ত। ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে ৯ বছর আগে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে চিনিয়েছেন, ৯ বছর পর সেই ওয়েলিংটনে ক্যারিয়ার সেরা এবং প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি (২১৭ রান) যে স্কোরে ছাড়িয়ে গেছেন বাংলাদেশের সবাইকে। জানেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৭তম টেস্ট পর্যন্তÑ সেই অপেক্ষার অবসানেও প্রিয় প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড! ২০১০ সালের ফেব্রæয়ারীতে হ্যামিল্টন টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে তার সেঞ্চুরিতেই (১০০) বাংলাদেশ খেলা টেনে নিতে পেরেছে ৫ম দিনে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কিউইদের বিপক্ষে ফিরতি দেখায় সেঞ্চুরিকে ডাবল সেঞ্চুরিতে করেছেন পরিণত, ৫ম উইকেট জুটিতে মুশফিকুরকে নিয়ে ৩৫৯ রানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পার্টনারশিপে নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বপ্নকে ছাড়িয়ে যাওয়া পারফরমেন্সে সাকিব। তার এই একটি ইনিংসেই রেকর্ডের ছড়াছড়ি। তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে ৩ হাজারী ক্লাবের সদস্যপদ, টেস্ট ইতিহাসে দেড়শ’ উইকেট এবং ৩ হাজার রানে বিরল কৃতিত্বে থাকা ১৪ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় নাম খোদাই হয়ে গেছে তার ওয়েলিংটনে। ওয়েলিংটনের অনার্স বোর্ডে নামের পাশে সাফল্যগাঁথা।
টেস্টের প্রথম দিন ৪ রানের মাথায় জীবন পাওয়াটাই নাকি ছিল তার টার্নিং পয়েন্ট। সঙ্গে থাকা স্ত্রী শিশিরের প্রেরণাও এই সাফল্যের রহস্য বলে জানিয়েছেন সাকিবÑ ‘গতকাল (গত পরশু) যখন ওরা আমার ক্যাচ মিস করার পর সন্ধ্যায় হোটেলের রুমে কথা হলো স্ত্রীর সঙ্গে। ও ইদানিং ক্রিকেট বোঝা শুরু করেছে, অনেক কথা হলো। বড় খেলোয়াড়রা সুযোগ পেলে বড় বড় ইনিংস খেলে। তাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলাম। রাতে যখন কথা হলো ওর সঙ্গে, বললাম কেন যেন মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে। মন বলছে আমারও ভাগ্যে কিছু একটা অপেক্ষা করছে।’
ক্রাইস্টচার্চে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ৫৯ রানের ইনিংসেও পাননি হাততালি, ওয়ানডে এবং টি-২০ সিরিজের অবশিষ্ট ম্যাচগুলো করেছেন হতাশ। প্রতিবারই বিলিয়ে দিয়েছেন নিজের উইকেট। এই অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পেতে নিজেকে টেস্টে মেলে ধরতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন বলে জানিয়েছেন সাকিবÑ ‘যে করেই হোক আমাকে ভালো খেলতে হবে, রান করা জরুরি। উইকেট ফ্ল্যাট না হলেও ভাল। আমি চেষ্টা করেছি ভালো খেলতে।’ প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে নেই কোন ডাবল সেঞ্চুরি, ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪৪ রানের ইনিংসের স্মৃতিই এতোদিন রোমন্থন করেছেন। সেই সাকিবই কি না ডাবল সেঞ্চুরি পেলেন, তাও আবার ডাবল সেঞ্চুরিকে (২১৭) রূপ দিলেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসে এবং তা প্রতিকূল এবং অনভ্যস্ত কন্ডিশনে। অথচ গ্র্যান্ডহোমকে স্কোয়ার কাটে বাউন্ডারি শট দিয়ে ২শ’ পূর্ণ করেও উৎসব উদযাপনে ছিলেন স্বাভাবিক! তার কারণটা জানিয়েছেন সাকিবÑ ‘দল এবং নিজের জন্য ভালো খেলা জরুরী ছিল। মুশফিক ভাই’র সঙ্গে অনেক টেস্ট ম্যাচে ব্যাটিং করেছি। দু’দলে চেষ্টা করেছি দলকে কিছু দিতে। তাই ২০০ হয়ে গেলে তেমন কিছু মনে হয়নি। ভেবেছিলাম তামীমের সেরা ইনিংস বুঝি ২১৪। কিন্তু যখন দেখলাম তামিম তালি দিচ্ছে তখন ভাবলাম, ঠিক আছে।’ একটার পর একটা রেকর্ড মাইক্রোফোনে ভেসে আসায় নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে হয়েছেন অনুপ্রাণিত, তা মনে করছেন সাকিবÑ ‘মাইকে নানা রেকর্ডের ঘোষণা আসছিল। অত রেকর্ডের কথা জানাও ছিল না। ঘোষণা শুনে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি। আরও সামনে এগোনোর চেষ্টা করেছি।’
৪ বছর আগে গল টেস্টে আশরাফুলকে নিয়ে ৫ম উইকেট জুটিতে ২৬৭ রানের রেকর্ডে দিয়েছেন নেতৃত্ব মুশফিকুর রহিম। গতকাল সাকিবকে নিয়ে ৩৫৯ রানে ভাঙ্গলেন ৫ম জুটির সেই রেকর্ড। এই রেকর্ডটি আবার ভেঙ্গে ফেলেছে ২০১৫ সালে খুলনা টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে তামীম-ইমরুলের ৩১২ রানের পার্টনারশিপকে। অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে একসঙ্গে বেড়ে ওঠা সাকিবকের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন মুশফিকুর রহিমÑ ‘ও যেভাবে ব্যাটিং করেছে তাতে আমার কখনও মনে হয়নি ও কোনো সমস্যায় আছে। ওদের বোলারদের উপর পাল্টা আক্রমণ করেছে। দেখে মনে হয়নি একশ’, দুইশ’ রান করছে। এতো বড় ইনিংসের পরও কোনো ইমোশন দেখিনি। একদম নরম্যাল, ব্যাট তুলে অভিবাদনের জবাব দিতে পর্যন্ত চায়নি। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বড় রানের ইনিংস খেলেছে, ওকে অভিনন্দন।’

টেস্টে সেরা অলরাউন্ডার
ম্যাচ রান সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড় সেঞ্চুরি উইকেট ইনি.সেরা বোলিং গড় ৫ উই. ক্যাচ
জ্যাক ক্যালিস (দ.আফ্রিকা) ১৬৬ ১৩২৮৯ ২২৪ ৫৫.৩৭ ৪৫ ২৯২ ৬/৫৪ ৩২/৬৫ ৫ ২০০
শেন ওয়ার্ন (অস্ট্রেলিয়া) ১৪৫ ৩১৪৫ ৯৯ ১৭.৩২ ০ ৭০৮ ৮/৭১ ২৫.৪১ ৩৭ ১২৫
কপিল দেব (ভারত) ১৩১ ৫২৮৪ ১৬৩ ৩১.০৫ ৮ ৪৩৪ ৯/৮৩ ২৯.৬৪ ২৩ ৬৪
ডেনিয়েল ভেট্টোরি (নিউজিল্যান্ড) ১১৩ ৪৫৩১ ১৪০ ৩০.০০ ৬ ৩৬২ ৭/৮৭ ৩৪.৩৬ ২০ ৫৮
চামিন্দা ভাস (শ্রীলঙ্কা) ১১১ ৩০৮৯ ১০০* ২৪.৩২ ১ ৩৫৫ ৭/৭১ ২৯.৫৮ ১২ ৩১
শন পোলক (দ.আফ্রিকা) ১০৮ ৩৭৮১ ১১১ ৩২.৩১ ২ ৪২১ ৭/৮৭ ২৩.১১ ১৬ ৭২
ইয়ান বোথাম (ইংল্যান্ড) ১০২ ৫২০০ ২০৮ ৩৩.৫৪ ১৪ ৩৮৩ ৮/৩৪ ২৮.৪০ ২৭ ১২০
গ্যারি সোবার্স (উইন্ডিজ) ৯৩ ৮০৩২ ৩৬৫* ৫৭.৮৭ ২৬ ২৩৫ ৬/৭৩ ৩৪.০৩ ৬ ১০৯
ইমরান খান (পাকিস্তান) ৮৮ ৩৮০৭ ১৩৬ ৩৭.৬৯ ৬ ৩৬২ ৮/৫৮ ২২.৮১ ২৩ ২৮
রিচার্ড হ্যাডলি (নিউজিল্যান্ড) ৮৬ ৩১২৪ ১৫১* ২৭.১৬ ২ ৪৩১ ৯/৫২ ২২.২৯ ৩৬ ৩৯
রবি শাস্ত্রী (ভারত) ৮০ ৩৮৩০ ২০৬ ৩৫.৭৯ ১১ ১৫১ ৫/৭৫ ৪০.৯৬ ২ ৩৬
অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ (ইংল্যান্ড) ৭৯ ৩৮৪৫ ১৬৭ ৩১.৭৭ ৫ ২২৬ ৫/৫৮ ৩২.৭৮ ৩ ৫২
ক্রিস কেয়ার্নস (নিউজিল্যান্ড) ৬২ ৩৩২০ ১৫৮ ৩৩.৫৩ ৫ ২১৮ ৭/২৭ ২৯.৪০ ১৩ ১৪
সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ) ৪৫ ৩১৪৬ ২১৭ ৪১.৩৯ ৪ ১৫৯ ৭/৩৬ ৩২.১৮ ১৫ ১৯

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ম উইকেটে সেরা জুটি
জুটি রান ইনিংস ভেন্যু সাল
মুশফিক-সাকিব (বাংলাদেশ) ৩৫৯ ১ম ওয়েলিংটন ১২ জানু.২০১৭
আসিফ-মিয়াঁদাদ (পাকিস্তান) ২৮১ ১ম লাহোর ৯ অক্টো.১৯৭৬
ইনজামাম-মালেক (পাকিস্তান) ২৫৮ ২য় ওয়েলিংটন ১৭ ফেব্রæ.১৯৯৪
ক্লার্ক-নর্থ (অস্ট্রেলিয়া) ২৫৩ ১ম ওয়েলিংটন ১৯ মার্চ ২০১০
আমেস-হ্যামোন্ড (ইংল্যান্ড) ২৪২ ১ম ক্রাইস্টচার্চ ২৪ মার্চ ১৯৩৩

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সেরা জুটি
জুটি উইকেট রান ইনিংস প্রতিপক্ষ ভেন্যু সাল
ক্রো-জোন্স (নিউজিল্যান্ড) ৩য় ৪৬৭ ৩য় শ্রীলঙ্কা ওয়েলিংটন ৩১ জানু.১৯৯১
ওয়াটলিং-উইলিয়ামসন (নিউজিল্যান্ড) ৬ষ্ঠ ৩৬৫* ৩য় শ্রীলঙ্কা ওয়েলিংটন ৩ জানু.২০১৫
মুশফিক-সাকিব (বাংলাদেশ) ৫ম ৩৫৯ ১ম নিউজিল্যান্ড ওয়েলিংটন ১২ জানু.২০১৭
ম্যাককালাম-ওয়াটলিং (নিউজিল্যান্ড) ৬ষ্ঠ ৩৫২ ৩য় ভারত ওয়েলিংটন ১৪ ফেব্রæ.২০১৪
আসিফ-মুস্তাক (পাকিস্তান) ৪র্থ ৩৫০ ১ম নিউজিল্যান্ড ডানেডিন ৭ ফেব্রæ.১৯৭৩



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিউজিল্যান্ড


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ