Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশে দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছে বিরোধীরা : এইচআরডব্লিউ

| প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যমকর্মীরা দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করতে আইন প্রণয়নের জন্য প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিরোধীদের ওপর ধরপাকড় এবং নিরাপত্তা হেফাজতে রেখে নির্যাতনের পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের ঘটনা ঘটছে এবং এক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনী দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। ব্লগার, শিক্ষাবিদ, সমকামী অধিকার কর্মী, বিদেশি নাগরিক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া, উপসাগরীয় দেশগুলোতে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকরা নানা বঞ্চনার শিকার হলেও তাদের অধিকারের সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি। গত বৃহস্পতিবার সংগঠনটির ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের বিশ্বের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনার ভিত্তিতে ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট-২০১৭ নামের এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (ওইচআরডব্লিউ)।
ওই প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে বলা হয়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ব্লগার, শিক্ষাবিদ, সমকামী অধিকার কর্মী, বিদেশি নাগরিক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর বেশ কিছু হামলা হয়েছে। বেশিরভাগ হামলার ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করা হলেও বাংলাদেশ সরকার অভ্যন্তরীণ জঙ্গি গোষ্ঠীকে এর জন্য দায়ী করছে। এদের কারও কারও সঙ্গে বিরোধী রাজনীতিবিদদের সংযোগ রয়েছে বলেও দাবি করেছে সরকার। জঙ্গি সংগঠনগুলোর সন্দেহভাজন সদস্য কিংবা সমর্থকরা বিভিন্ন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে এবং হাজারো মানুষকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ ইচ্ছে করেই বিরোধী দলের সদস্য ও সমর্থকদের পায়ে গুলি চালাচ্ছে। গুলিবিদ্ধরা অভিযোগ করে থাকেন যে, পুলিশি হেফাজতে তাদেরকে গুলি করা হয় এবং পুলিশ একে আত্মরক্ষামূলক উল্লেখ করে মিথ্যা ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। রাজনৈতিক বিরোধী দলগুলোর অনেক সমর্থক ও সদস্য আত্মগোপনে চলে গেছেন। অনেককে অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ কারাভোগ করছেন কিংবা গুম হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিধিবহির্ভূত গ্রেফতার, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- চালানোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। লেখক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা এবং অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর হামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ২০১৬ সালের জুন মাসে প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করেছে। জুলাইয়ে হলি আর্টিজানে হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনী বিধিবহির্ভূতভাবে অনেককে আটক করেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হত্যা করেছে। প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকার বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিলেও এক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নের ব্যাপারে স্বচ্ছ তথ্য ছিল না। তাছাড়া মিডিয়াগুলোর ওপর দমন-পীড়ন চলায় নিহত ও গ্রেফতারকৃতদের স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
এইচআরডব্লিউ’র ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, ২০১৬ সালে সুশীল সমাজ, মিডিয়া ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপরও সরকারি দমন-পীড়ন জোরালো হয়েছে। দুটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের সম্পাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। এনজিওগুলোর কর্মকান্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য বিশেষ আইন পাস করা হয়েছে। ওই আইনের আওতায় এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর অনুমোদন ছাড়া বিদেশি তহবিল গ্রহণ নিয়ে এনজিওগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ আরোপের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি আইন পাসের প্রস্তাব করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে হাজারিবাগ ট্যানারিতে কর্মরত শ্রমিকদের কথা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, সেখানকার শ্রমিকরা প্রচ-রকমের বিষাক্ত ও বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করছেন। আশেপাশের বস্তির বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, ট্যানারির কারণে সৃষ্ট দূষণে তারা নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। অথচ এ ব্যাপারে সরকার কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে এইচআরডব্লিউ। ট্যানারিগুলোকে সাভারে সরিয়ে নিতে ২০০১ সালে হাইকোর্টের দেয়া আদেশও উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উপসাগরীয় দেশগুলোতে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকরা বিভিন্ন সময়ে নির্যাতিত ও বঞ্চনার শিকার হওয়ার অভিযোগ করে আসছেন। এমনকি অনেকে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ারও অভিযোগ করে থাকেন। কিন্তু প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকারের সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। উপসাগরীয় দেশগুলোতে বাংলাদেশী গৃহকর্মীদের জন্য বাংলাদেশ ন্যূনতম ২০০ ডলার নির্ধারণ করে দিয়েছে। অথচ, অন্য দেশ থেকে এসব দেশে পাঠানো গৃহকর্মীদের ন্যূনতম মজুরির মধ্যে এটি সর্বনিম্ন।
এইচআরডব্লিউ’র ৬৮৭ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে ৯০টিরও বেশি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য সুপারিশ করে বলা হয়েছে, উগ্রবাদী সহিংসতার বিরুদ্ধে অভিযানের সময়ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানানো উচিত।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ৭:৪৩ এএম says : 0
    আমি এখানে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সংগঠনের সাথে একমত নই। এখানে যা বলা হয় সেটা এক তরফাভাবে বলা হয়েছে বলে আমি মনে করি। পূর্বেও এধরনের আনেক লিখা আমি প্রতিবাদ করে আসছি কিন্তু এসব মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাংলাদেশের প্রকৃত দৃশ্যের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেনা বলে মন্তব্য করে আসছি। আমার মন্তব্য যদিও পত্রিকায় আসছে কিন্তু এর উপর কোন রকম প্রতিক্রিয়া আমি দেখতে পাইনি। এতে আমার মনে হচ্ছে এসব বিদেশী সংগঠনের সদর দপ্তর কিংবা স্থানীয় দূতাবাসে আমার লিখা যাচ্ছে না বা গেলেও সেখানকার কর্তা ব্যাক্তিরা আমার লিখা পাচ্ছেন না। যাই হোক আমি আবারও বিদেশী সংস্থাগুলোকে বলতে চাই আপনাদের স্থানীয় (বাংলাদেশে) দপ্তর যারা নিয়ন্ত্রন করছেন তারা একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করছে। তাই আমি আপনাদের (বিদেশী সংস্থা) বলতে চাই যে, আপনাদের তদন্ত প্রতিবেদন এটা বাংলাদেশের সঠিক চিত্র নয়। এখানে যা বলা হয় সেটা সত্য হলেও যাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে সেটা সঠিক নয় আমার ধারনা। তাছাড়া যাদের কথা বলা হয়েছে প্রকৃত পক্ষে তারা কারা সত্যই কি তারা রাজনৈতিক কর্মী নাকি রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসী??? পুলিশ হাতে কখন, কেন এবং কোন অবস্থায় গঠনাগুলো ঘটেছে এর কোন ব্যাখা সংবাদে পাওয়া যায়নি। হয়ত রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে কিন্তু সেটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য এবং যাদের মন্তব্যের উপর প্রতিবেদন দাঁড় করা হয়েছে তারা কারা, তাদের রাজনৈতিক কোন পরিচয় আছে কিনা থাকলে কোন দলের এসব অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাই আমি বার বার বলে আসছিলাম এসব সংস্থায় নিরপেক্ষ লোকের প্রয়োজন অথবা দুই পক্ষ থেকেই লোক নেয়া প্রয়োজন।
    Total Reply(0) Reply
  • Arifur Rahman ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:০৫ এএম says : 0
    এই প্রতিবেদনকে সরকার অবস্যই প্রত্যাখ্যান করবে!!!
    Total Reply(0) Reply
  • রিয়াল আহমেদ ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:০৬ এএম says : 0
    একদম সত্যি কথা প্রকাশ করেছে হিউম্যন রাইটস্।
    Total Reply(0) Reply
  • M A Hasan ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:০৬ এএম says : 0
    Exactly right
    Total Reply(0) Reply
  • Mahiuddin Khan ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:০৭ এএম says : 0
    right
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ৫:০০ পিএম says : 0
    একদম সত্যি কথা প্রকাশ করেছে হিউম্যন রাইটস্।
    Total Reply(0) Reply
  • taleb ullah swapon ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ৬:১৮ পিএম says : 0
    100% Right
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এইচআরডব্লিউ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ