পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
‘গ্যাং কালচার’ নামে দিনদিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে রাজধানীর কোন কোন এলাকার কিশোরদের একটি অংশ। নাইন স্টার ও ডিসকো বয়েজ ইত্যাদি নামে সক্রিয় এসব কিশোর শুরুতে পার্টি করা, হর্ণ বাজিয়ে প্রচ- গতিতে মোটরসাইকেল চালানো ও রাস্তায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার কাজে যুক্ত ছিল। বছর খানেক ধরে তারা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িত হয়েছে, যার সর্বশেষ শিকার উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্র আদনান কবির। এ সংক্রান্ত প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এসব কিশোর এতটাই বেপরোয়া যে হত্যার জন্য বের হবার আগে তারা ফেসবুকে গ্রুপ ছবি পোস্ট করে যায়। আদনানের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর এক কিশোর পাল্টা স্ট্যাটাস দিয়েছে, ‘ভাই তোর খুনিগো বাইর কইরা জবাই দিমু’। এ সংক্রান্ত অনুসন্ধানী এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান ও স্কুলছাত্র। নিম্ন মধ্যবিত্তের ও লেখাপড়া না করা কিশোর তরুণরাও রয়েছে। তবে আলোচ্য দুইদলের প্রধানের বয়স কুড়ি-বাইশ বছর। একটি গ্রুপের প্রধানের বয়স আনুমানিক ২০ বছর। তার বাবা একসময় তালাচাবি সারতো। সে নিজেও কিছুদিন এ কাজ করেছে। আরেক গ্রুপের প্রধান একটি কলেজে ভর্তি হয়ে রয়েছে। এলাকার লোকজন তাকে ছিনতাইকারী হিসেবে চেনে।
নিহত আদনানের খুনের ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আদনানের অন্যতম খুনি মেহরাব হাসাইন। সে বলেছে, নাইমুর রহমান অনিকের নেতৃত্বেই আদনানকে হত্যা করা হয়েছে। তার ভাষ্যমতে, এই কিলিং মিশনে অনিকের সাথ ১৮-২০ জনের একটি দল অংশ নেয়। তাদের প্রত্যেকের হাতেই ছিল লাঠিসোঁটা, রড। অনিকসহ কয়েকজনের হাতে ছিল হকিস্টিক ও চাপাতি। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই পাল্টাপাল্টি হামলার জের ধরে হত্যা করা হয় স্কুলছাত্র আদনানকে। উঠতি বয়সের কিশোরদের বখে যাওয়া সম্পর্কে একটি দৈনিককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনবিভাগের শিক্ষক শেখ হাফিজুর রহমান বলেছেন, নগরায়নের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দেশেই গ্যাং কালচার তৈরি হতে দেখা যায়। যাকে আইনের ভাষায় বলা হয় জুভেনাইলসাব কালচার। অনেক সময় বঞ্চনা থেকে কিশোরদের মধ্যে এমন প্রবণতার জন্ম হয়। অবার কোথাও কোথাও বীরত্ব দেখাতে ছেলেরা মাস্তানিতে যুক্ত হয়। আলোচ্য ঘটনাটিকে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে কেবলমাত্র শহরের মধ্যেই এর বিস্তৃতি তা মনে করার কারণ নেই। একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভাবার অবকাশও খুব কম। সাধারণভাবে হয়ত আগে একসময় খেলার মাঠে বা স্কুলে বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু মারামারি হতো, তবে এভাবে গ্যাং কালচার ছিল না। এ ধরনের গ্যাং কালচার আমাদের দেশে নতুন। এদের উত্থানের সাথে দেশের রাজনৈতিক কালচারের আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এর অন্যতম কারণ। বিশেষ করে কিশোরদের সংঘবদ্ধ হয়ে হত্যাকা- ঘটানো এবং ফেসবুকে ঘোষণা দেয়া ভয়াবহ ব্যাপার। এরা প্রশ্রয় বা মদদহীন নয়। এদের সাথে কোনো না কোনো প্রভাবশালী মহল রয়েছে। এভাবে বেড়ে ওঠার পেছনে এক ধরনের বড় ভাইয়ের প্রশ্রয় থাকতে পারে। তা না হলে এভাবে ঘোষণা দিয়ে হত্যাকা- ঘটানো সম্ভব নয়। আইন-শৃখলা বাহিনীর এক শ্রেণীর সদস্যের প্রশ্রয় ও ব্যর্থতাও এর জন্য দায়ী।
সামাজিক নিয়ম-কানুন, শাসন-বারণ এবং মূল্যবোধের যে চরম অবক্ষয় ঘটছে, তা এসব আলামত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। সমাজে মূল্যবোধের চর্চার পরিবর্তে এসব কিশোরদের নেশার জগতে ডুবিয়ে রাখা হচ্ছে অপকর্ম সাধনের জন্য। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও এসব উঠতি কিশোরদের উপর নজর রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। এসব কিশোরদের অভিভাবকরাও বল্গাহীন বেখেয়াল হয়ে পড়েছেন। সন্তান কোথায় সময় কাটায়, কী করে তার কোনো খোঁজ নেয় না। সমাজের মুরুব্বী শ্রেণীও উদাসীন হয়ে পড়েছে। ফলে এ ধরনের কিশোর ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। সমাজে ব্যাপকভাবে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে এবং ঘটছে। এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সকলের সচেষ্ট হওয়া এখন সময়ের দাবি। নয়ত সমাজ বাসযোগ্য থাকবে না। এসব অপরাধকে কেবলমাত্র আইনের দৃষ্টিতে দেখার কোন সুযোগ নেই বরং দেখতে হবে সামাজিক দৃষ্টিতে। কিশোর-তরুণরা দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের নষ্ট হওয়া থেকে ফেরাতে সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।