পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা : ফারাক্কার হিংস্র ছোবলে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার এক সময়ের প্রবাহমান প্রমত্তা গড়াই, চন্দনা, হড়াই, চত্রা ও পুষস্বলী নদী এখন নাব্যতা হারিয়ে ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। প্রতিবেশী দেশের ইচ্ছামত পানি প্রত্যাহার, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আর অবৈধ দখল ও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের মহোৎসবের কারণে দিন দিন গ্রাস করছে এই পাঁচটি নদী। এখন নদীগুলো শুধুই ইতিহাসে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গড়াই নদীতে মাইলের পর মাইল জেগে উঠেছে বিশাল বালুচর। নদীতে নেই কোনো স্রোত, নেই কোনো গভীরতা। অনেক জায়গায় নদীগুলোর বুক দিয়ে বয়ে চলছে বালুবোঝাই ট্রাক ও ট্রলি। অনেক কৃষক আবার জেগে ওঠা চরে ইরি-বোরো ধান রোপণ করছে। শুধু দেখা মেলেনি নদীতে মাছ ধরার সারিসারি নৌকা ও জেলেদের জাল। নদীগুলো মরে যাওয়ায় আজ এ অঞ্চলের কৃষি, বাণিজ্য, মৎস্য সম্পদ ও পরিবেশ বিপন্ন হয়েছে। হারিয়ে গেছে দেশীয় প্রজাতির অর্ধ শতাধিক মাছ। এসব নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের কারণ হিসেবে এলাকাবাসী আন্তর্জাতিক নদীগুলোর সুষ্ঠু পানিবণ্টন ব্যবস্থাপনা না থাকা এবং ফারাক্কা বাঁধের নেতিবাচক প্রভাবকেই দায়ী করছেন।
১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল ভারত ফারাক্কা ব্যারেজ চালু করার পর এই নদীগুলোর মরণদশা শুরু হয়েছে। নদী আছে, পানি নেই। প্রতি বছর বালু জমতে জমতে এখন পুরো গড়াই বিশাল বালুচরে পরিণত হয়েছে। এবারের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। বিগত বছরগুলোয় গড়াই নদীতে একটা ক্ষীণ স্রোতধারা থাকলেও এবার পানি কমে যাওয়ার আগেই তা নেই। এসব নদী বিল কিংবা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের পরিবেশ এবং কৃষক ও জেলেদের জীবন-জীবিকায় নেমে এসেছে ভয়াবহ বিপর্যয়। এ অঞ্চলের মানুষের জীবনে অভিশাপ বয়ে এনেছে মরণবাঁধ ফারাক্কা। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে ফারাক্কা ব্যারেজ এ অঞ্চলের মানুষের জন্য রীতিমত অভিশাপ বয়ে এনেছে। একতরফা পানি প্রত্যাহার করে ভারত তাদের বন্দর, কৃষি, সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা সচল রাখলেও এদেশের কৃষি, বন্দর, নৌ-যোগাযোগ, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকায় নেমে এসেছে ভয়াবহ বিপর্যয়। বালিয়াকান্দির এ নদীগুলোর উৎসমুখ পদ্মা নদীতে হওয়ায় আজ বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে পদ্মার সঙ্গে সঙ্গে এর শাখা নদী গড়াই, চন্দনা, হড়াই, চত্রা ও পুষস্বলী নদী হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। বর্ষাকালে এসব নদীতে কিছুদিনের জন্য পানি থাকলেও প্রায় সারা বছরই থাকে পানিশূন্য। আর এসব নদী মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দু’পাশ দখল করে নিয়েছে একশ্রেণির দখলবাজরা।
মহাজোট সরকার চন্দনা-বারাশিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে খনন কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছে। তবে পানির উৎসমুখ বন্ধ থাকার কারণে এর সুফল পাচ্ছে না কৃষকরা। তাদের দাবি পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা। এক সময় চন্দনা নদী দিয়ে নৌকাযোগে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। তবে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে নৌকার যোগাযোগ।
পল্লী বন্ধু সংস্থার পরিচালক রুহুল আমিন বুলু জানান, নদীতে পানি না থাকার কারণে ভুগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে নদীর তীরবর্তী এলাকার টিউবয়েল গুলোতে পানি উত্তোলন করা দুষ্কর হয়ে পড়ে। এতে মানুষ নানা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুরের ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সরকার গঙ্গা ব্যারেজ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পটি চালু হলেই পদ্মার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব শাখা নদী ফিরে পাবে তাদের অতীত যৌবন।
গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানান, এই প্রকল্পটি চালু হলে পদ্মাসহ এর শাখা নদীগুলো আবার পানিতে ভরে উঠবে এবং মৃত নদীগুলো আবার পুনরুজ্জীবিত হবে। এ অঞ্চলের মৎস্য ও কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়ন হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।