Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধানসিঁড়ি নদী খনন হচ্ছে খালের মতো

মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, ঝালকাঠি থেকে | প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে -এই বাংলায়/ হয়তো মানুষ -নয় হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ এক সময়ের প্রমত্তা ধানসিঁড়ি নদীর তীরে ভিন্ন রূপে বার বার ফিরে আসার সংকল্প করেছিলেন। কিন্তু সেই ধানসিঁড়ি নদী আজ মরা খালে রূপান্তর করা হয়েছে। বার বার এ নদী খননের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে। তবুও ফিরে পায়নি এ নদী তার যৌবনের খড় গ্রোতা রূপ। সম্প্রতি ঝালকাঠির এই ঐতিহ্যবাহী ধানসিঁড়ি নদী পুনঃখননেও অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
১৯১০ সালের সিএস নকশা অনুযায়ী ৩৬০ দাগে রাজাপুরের বাঘরী অংশে এ নদীর মোহনার প্রসস্ততা ছিল ৫৬৭ ফুট। তখন এই নদীতে বড় বড় জাহাজ চলত। এই ধানসিঁড়ি নদীর মোহনায় তখন ছিল দক্ষিণ বঙ্গের সবচেয়ে বড় বন্দর। এখানে কলকাতা থেকে সরাসরি জাহাজ এসে ভিড়ত। এরপর ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ১৯৫০ সালে পাকিস্তান সরকারের জরিপে এক নম্বর দাগে ধানসিঁড়ি নদীর মোহনার প্রসস্ততা পাওয়া যায় ২০০ ফুট। এই জরিপের নকশা ২০২২ সালে এখনও চলমান। অথচ ২০০ ফুট প্রসস্ত এই নদীর বর্তমানে অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ডেল্টাপ্লান অনুযায়ী ৬৪ জেলার অভ্যন্তরে ছোট নদী, খাল খনন প্রকল্পের আওতায় রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের প্রিয় ঝালকাঠি জেলার ধানসিঁড়ি নদীটি ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দুই বছর মেয়াদে দুই কিস্তিতে সাড়ে ৮ কিলোমিটার পুনঃখননের জন্য প্রায় ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ ঐতিহ্যবাহী নদীটি ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান নদীর মোহনা থেকে দেড় কিলোমিটার বাদ দিয়ে রাজাপুর উপজেলার বাঘরি বাজারের জাঙ্গালিয়া নদীর মোহনা পর্যন্ত মোট সাড়ে ৮ কিলোমিটার খনন শুরু হয়। প্রকল্পের কার্যাদেশে নদীর ওপরে প্রস্থ ৮০ ফুট ও সমতল থেকে নদীর গভীরতা ১৫ ফুট এবং নদীর তলদেশে প্রস্থ ২০ ফুট করা হয়। কার্যাদেশে আরও উল্লেখ করা হয়, নদীর তলদেশ থেকে মাটি কেটে পাড় থেকে দূরে সরিয়ে নিতে হবে। কিন্তু তখন খনন কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঠিক তদারকি না থাকায় নদী খননে বাস্তবে এর সাথে মিল না রেখে ঠিকাদার কাজ শেষ করলে খনন কালেই ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয়রা।
পরবর্তীতে বর্ষা মৌসুমে খনন করে নদীর পাড়ে রাখা মাটি আবার ধানসিঁড়ি নদীতে পড়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেলে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ধানসিঁড়ি খননের জন্য পুনরায় পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রস্তাব পাঠালে নতুন করে নদীর তলদেশ খননের জন্য এক কোটি নিরানব্বই লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। এবার কাজ পায় পটুয়াখালীর ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ। এবং তিনি ধানসিঁড়ি নদীর তলদেশ খননের কাজ শুরু করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধানসিঁড়ি নদী সঠিকভাবে খননের অভাবে নদীতে পানির প্রবাহ না থাকায় দুই পাড়ে কয়েক হাজার হেক্টর জমি অনাবাদী পড়ে আছে। পানির অভাবে শুকনো মৌসুমে কৃষকরা জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না তেমনি বর্ষা মৌসুমেও জমিতে আটকেপড়া পানি নিস্কাশনের ব্যাবস্থা না থাকায় আমন ও ইরি ধান চাষে কৃষকদের বিঘ্ন ঘটছে ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত দুই বছর আগেও যে নদীর প্রসস্ততা ৮০ ফুট রেখে খনন করা হয়েছিল সেই নদীর প্রসস্ততা এবার খননে ৪৯ থেকে ৫৫ফুট রাখা হয়েছে। যা একটি খালের সমান। এবার নদীর তলদেশের মাটি উঠিয়ে নদীর পাড়ে ফেলে প্রস্ততা কমিয়ে ফেলা হয়েছে। স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করে বলেন, আমরা লোক দেখানো এ খনন চাই না । এসএ নকশা অনুযায়ী এ নদীর খনন চাই আমরা।
নদীতীরের বাসিন্দা রফিক হাওলাদার বলেন, নদীর তলদেশ খনন করে মাটি দূরে সরানোর কথা থাকলেও ঠিকাদাররা ইচ্ছে করেই মাটি না সরিয়ে নদীর পাড়ে রাখে। যা বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেই মাটি নদীতে পড়ে আবার ভরাট হয়ে যায়। এভাবে বছর বছর টেন্ডারে কোন কাজ তো হচ্ছেই না বরং প্রতি বছর কোটি কোটি সরকারি টাকার তসরুপ করছে একটি চক্র। ২০১০-১১ অর্থবছরেও প্রায় ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ধানসিড়ি নদীটি খনন করা হয়েছিল। যা পরবর্তীতে কোন কাজে আসেনি। আসলে ধানসিঁড়ি নদীটি এখন সোনার ডিম পাড়া হাঁসে পরিনত হয়েছে।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী রাকিব হাসান বলেন, ধানসিঁড়ি নদীর শুধুমাত্র তলায় চার ফুট খনন করা হচ্ছে। ওপরের প্রসস্ততা এর আগে যেমন ছিল তেমনই থাকবে। খননে ঠিকাদার কিছু কিছু যায়গায় ভুল করেছিল স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সেগুলো ঠিক করতে বলা হয়েছে। খননকৃত মাটিগুলো এখন নদীর পাড়ে রাখলেও কাজ শেষে মাটিগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হবে।



 

Show all comments
  • ash ১ মে, ২০২২, ৭:২৫ এএম says : 0
    KHAL TO TAO AKTU CHOWRA HOY, GOVIR HOY ATO AKDOM NORDHOMA !! CHURI KAHAKE BOLE R KI
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধানসিঁড়ি নদী খনন হচ্ছে খালের মতো
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->