পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু নদীর উন্নয়নের শত শত অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে নদীগুলো রক্ষায় গ্রহণ করা হয় নদী সংরক্ষণ প্রকল্প। তবে ২০১৪ সাল থেকে এ প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে কচ্ছপ গতিতে। কিছু অংশে দৃশ্যমান হয়েছে ওয়াকওয়ে, কী ওয়াল, জেটিসহ নদীরে পার সংরক্ষণ বাঁধ। সাড়ে সাত হাজারের মধ্যে নদীর সীমানা পিলার দৃশ্যমান মাত্র চার হাজার। ওয়াকওয়ে মাত্র ৬ কিলোমিটার। তবে এখনও বাধায় থমকে আছে প্রকল্পের অনেক কাজ। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ৩০ জুনের মধ্যে হওয়ার কথা থাকলেও তা আবারো প্রকল্পের সময় বৃদ্ধি করে আগামী বছর ৩০ জুন করা হয়েছে।
ঢাকা রেলওয়ে, পোস্তগোলা ক্যান্টনমেন্ট আইলবহর মৌজা, ভূমি মন্ত্রণালয়ের তহশিল অফিসসহ ছয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কেরানীগঞ্জের বসিলা সেতুসংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীর ৪-৫টি খাল ভরাট করে বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে তুলেছে মধু সিটি নামে এ আবাসিক এলাকা। শারমিন গ্রুপ, অলিম্পিক সিমেন্টের সঙ্গেও আইনগত জটিলতা চলছে। টঙ্গী নদী বন্দরে জাবের-জুবায়ের ও জেরিন টেক্সটাইলের কারণে প্রকল্পের কাজ চালু করতে পারছে না। নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দরে বড় বাধা আদমজী ইপিজেড। চার নদীর জায়গা দখলে রাখা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে। বিআইডব্লিউটিএ এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বছরজুড়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও তা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকার চার নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। আদি বুড়িগঙ্গাকে ঘিরে পর্যটন এলাকা গড়ে তুলতে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। আবারো প্রকল্পের সময় বৃদ্ধি করে আগামী বছর ৩০ জুন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রাজধানী ঢাকাকে বেষ্টিত করে রাখা চারটি নদীর তীরভূমিতে অবৈধ দখল রোধ, পরিবেশগত উন্নয়ন সাধন, সৌন্দর্য বর্ধন ও জনসাধারণের চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) ও প্রকল্প পরিচালক আবু জাফর মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ কবির ইনকিলাবকে বলেন, গত বছর বন্যা পরিস্থিতির কারণে নদীর পানি দীর্ঘদিন বিপদসীমার ওপরে থাকায় দরপত্র যথাসময়ে আহ্বান করা সম্ভব করা হয়নি, তাই প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ সালের জুলাই থেকে বৃদ্ধি করে আগামী ২০২৩ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও আমরা কাজ করতে পারছি না। পদে পদে বাধা পাচ্ছি। সাবেক এমপি আসলামের মাইসা গ্রুপ এবং মধু সিটির অবৈধ দখলে বুড়িগঙ্গা নদীর ৪-৫টি খাল উদ্ধার করা হবে। এখন ঈদ শেষ যে কোনো সময় অভিযান পরিচালনা করা হবে।
জানা গেছে, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পরের বছর বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধারে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ভুল পরিকল্পনার কারণে দশ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়নি। যেসব কাজ করা হয়েছিল, সেগুলোও দৃশ্যমান নয়। বুড়িগঙ্গা নদীর পানির প্রবাহ দৃশ্যমান করার জন্য যেভাবে নদী খননের কথা ছিল, সেই নকশায় ছিল ভুল। জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে কী ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো সমীক্ষা করা হয়নি। বুড়িগঙ্গা নদী উদ্ধার করতে গিয়ে ২২টি সেতু ক্ষতির মুখে পড়তে পারেÑসে বিষয়েও কোনো ধারণা ছিল না কর্মকর্তাদের। ফলে হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের ব্যয় প্রায় এক হাজার ২০০ কোটিতে গিয়ে পড়ে।
বুড়িগঙ্গা নদীর কাজ চলমান অবস্থার মধ্যেই ঢাকার চার পাশের চারটি নদীর অবৈধ দখল বন্ধ করতে তিন বছর আগে আলাদা একটি প্রকল্পের মাধ্যমে আরো ৮৫০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছিল। ৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীর রক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করা। কিন্তু এই প্রকল্পেও ভুল পরিকল্পনার কারণে পদে পদে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)-কে। ব্যয় বাড়ছে চার নদীর তীরভূমি রক্ষা প্রকল্পে। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সেখান থেকে ৩৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বেড়ে মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ১৮১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে ৩৯ দশমিক ২১ শতাংশ। সেই সঙ্গে মেয়াদও বাড়ছে এক বছর।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। ওই সভায় দেয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। প্রকল্পের উদ্দেশ্য, এসব নদীর তীরভূমির অবৈধ দখল রোধ এবং দখলমুক্ত অংশের সৌন্দর্য বর্ধন করা। এছাড়াও নদীর উভয় তীরের পরিবেশগত উন্নয়ন, নদীর দখলমুক্ত তীরভূমিতে অবকাঠামো, নদীর নাব্যতা, গভীরতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি এবং নদীর পানি দূষণ হ্রাস করা। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে।
এটি শেষ হলে আরো ১৪৮ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করার প্রকল্পের কাজ শুরু হবে ২০২৪ সাল থেকে। প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ওয়াকওয়ে সংলগ্ন ৩৫ দশমিক ৩৫৮ কিলোমিটার বুল্ডার প্রোটেকশন ফর সিকোর ২ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার জেটির জন্য পার্কিং ইয়ার্ড ২১ কিলোমিটার তৈরি এবং সদরঘাট ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় যাত্রীসেবার জন্য চারটি ঘাট নির্মাণ করা হবে।
যেসব স্থানে বড় আকারে স্থাপনা নদীর জমিতে রয়েছে, সেগুলো বহাল রেখেই সীমানা পিলার বসানোর কাজ প্রায় শেষ করছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। ওই সব প্রতিষ্ঠানকে সীমানা পিলার পর্যন্ত স্থাপনা সরিয়ে নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যারা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে বাধা দিচ্ছে, শুধু তাদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএ-এর এক কর্মকর্তা বলেন, অভিযান চালালে বড় বড় শিল্পকারখানা ও আবাসন প্রকল্পের সুনাম ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হবে। এ কারণে তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
সাড়ে সাত হাজারের মধ্যে নদীর সীমানা পিলার দৃশ্যমান মাত্র চার হাজার। ওয়াকওয়ে মাত্র ৬ কিলোমিটার। কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার কারণে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে প্রকল্পের কাজ। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়াও হাজির হয়েছে নতুন সমস্যা হিসেবে। নদীর পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে পরিবেশবিদদের অভিযোগ থাকলেও এলাকাবাসী বলছেন, অন্তত হাঁটার পথটি তৈরি হয়েছে নদীর পাড়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।