পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
স. ম. জাহাঙ্গীর আলম, ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা : টাঙ্গাইলের বহুমুখী পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের নারী উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরম হতাশায় ব্যবসায়িক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবা কেন্দ্র (জেইএসসি) টাঙ্গাইল এর কার্যালয় স্থানান্তর নিয়ে ধূ¤্রজাল সৃষ্টি হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে তাদের বিনিয়োগ।
টাঙ্গাইল বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবাকেন্দ্র (জেইএসসি) সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রচলিত পাট পণ্যের চাহিদা ও দ্রæত মূল্য হ্রাসের প্রেক্ষাপটে পাট শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রচলিত পাট পণ্য সামগ্রীর পাশাপাশি উচ্চমূল্য সংযোজিত বহুমুখী পাট পণ্য উৎপাদনসহ দেশে-বিদেশে ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০২ সালে ইউরোপীয় কমিশনের অর্থায়নে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে “জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার” (জেডিপিসি) গড়ে তোলা হয়।
সে প্রেক্ষিতে জেডিপিসি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ, উদ্যোক্তা তৈরি, প্রযুক্তি সরবরাহ ও বিপণনে সহায়তা দিচ্ছে। পাটের বহুমাত্রিক ব্যবহার ও বহুমুখীকরণের মাধ্যমে পাট শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত সকলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম বিস্তৃতির অংশ হিসেবে ২০১২ সালে টাঙ্গাইল শহরের আকুর টাকুর পাড়ায় বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবাকেন্দ্র (জেইএসসি) প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেবা কেন্দ্রটি চালুর পর থেকে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জামালপুর ও শেরপুর এর ২৫০জন বেসরকারী উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে এই উদ্যোক্তারা পাট পণ্যে তৈরি ও বাজারজাত করতে বিনিয়োগ শুরু করে লাভবানও হচ্ছে।
দীর্ঘ চার বছর ধরে বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবাকেন্দ্র (জেইএসসি) টাঙ্গাইলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় উদ্যোক্তারা ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়ায় এই শিল্পে সুনাম অর্জনের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে ব্যাপক সম্ভাবনাও।
কিন্তু হঠাৎ করেই টাঙ্গাইল কেন্দ্রটি জামালপুরে স্থানান্তর করার খবরে চরম হতাশা আর ব্যবসায়িক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে এ শিল্পের সাথে জড়িত উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। উদ্যোক্তাদের মাঝে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে তারা কেন্দ্রটি স্থানান্তর না করার জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে।
বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবাকেন্দ্র (জেইএসসি) টাঙ্গাইল কার্যালয় নিয়ে ধূ¤্রজাল সৃষ্টি হওয়ায় হুমকির মুখেও পড়েছে তাদের বিনিয়োগ। ব্যাপক সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবাকেন্দ্র (জেইএসসি) টাঙ্গাইল-এর কেন্দ্রটি স্থানান্তর না করার দাবি জানিয়েছে উদ্যোক্তারা। পারমিতা উইমেন্স ওয়ার্ল্ডের পরিচালক ও বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা ডা. সাহিদা আক্তার বলেন, এই কেন্দ্রটি আমাদের টাঙ্গাইলের সম্পদ। এটা চলে গেলে আর হবে না।
টাঙ্গাইলের নারী উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই পাট পণ্য নিয়ে কাজ করছে। তারা পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে এই কেন্দ্রটি থেকে নানা ধরনের ডিজাইন সংগ্রহ করছে। কিন্তু কেন্দ্রটি স্থানান্তরিত হলে টাঙ্গাইলের সকল নারী উদ্যেক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা নতুন কোন ডিজাইনের পণ্য তৈরি করতে পারবে না। এই পণ্যের শো-রুমগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে এক দিকে এই শিল্পের সাথে জড়িতরা আর্থিক ও ব্যবসায়িক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে সম্ভাবনাময় এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে নারী উদ্যোক্তারা।
অন্যান্য উদ্যোক্তারা বলেন, জেইএসসি টাঙ্গাইল থেকে বহুমুখী পাটপণ্য বিষয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মশালা, দক্ষতা ও উচ্চ দক্ষতার প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে বিভিন্ন ডিজাইন ও ফ্যাশনের শপিং ব্যাগ, লেডিজ ব্যাগসহ অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যবহার্য পাটপণ্য তৈরি ও বিক্রয় করে আসছি। কিন্তু এই মুহূর্তে টাঙ্গাইল সেবাকেন্দ্রটি স্থানান্তÍর করা হলে এ শিল্পের সাথে জড়িত সকলকেই চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। সেই সাথে সম্ভাবনাময় এ শিল্পটিও ধ্বংসের মুখে।
এই কেন্দ্রটি চলে গেলে নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে প্রযুক্তি সরবরাহ ও পণ্য বিপণন সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে ফ্যাশনের শপিং ব্যাগ, লেডিজ ব্যাগসহ অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যবহার্য পাট পণ্য তৈরি হলেও আর আগের মত দেশ-বিদেশের মেলাগুলোতে অংশ নিতে পারবো না। এই শিল্প ও নারী উদ্যোক্তাদের বাঁচাতে তিনি এই কেন্দ্রটি স্থানান্তর বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
টাঙ্গাইল কেন্দ্রের ইনচার্জ দিদারুল হক জানান, প্রধান কার্যালয়ে চিঠির মাধ্যমে টাঙ্গাইল কেন্দ্রের সকল তথ্য জানিয়েছি। কিন্তু বিষয়টি এখন প্রধান কার্যালয়ের অধীনে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অর্থমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, “আগে পাট রপ্তানী করে বিদেশী মুদ্রা অর্জন করতাম। এটিই ছিল প্রধান রপ্তানীকারক ফসল। অনেক অতীত থেকেই টাঙ্গাইল পাট উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। এসব কারণেই টাঙ্গাইলে বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবাকেন্দ্র (জেইএসসি) করা হয়েছিল। জানতে পেরেছি অফিসটি টাঙ্গাইল থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় নেয়া হবে। এটি কোনভাবেই সমর্থন যোগ্য না। আমরা কোনক্রমেই এটি হতে দিব না। জেইএসসি’র মাধ্যমে অনেক নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। তাদের জীবিকা-জীবন এর উপর নির্ভরশীল। এটি টাঙ্গাইল থেকে স্থানান্তর হলে পাট শিল্পের অনেক ক্ষতি হবে। নারী উদ্যোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাট মন্ত্রীকে অনুরোধ করবো জাতে এই অফিসটি টাঙ্গাইল থেকে স্থানান্তর না হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।