পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
চলতি অর্থবছরের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, অর্থনীতিতে ভারসাম্য রাখতে দ্রুত তিনটি পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এগুলো হলো: সঞ্চয়পত্রের সুদহার সমন্বয় করা, মুদ্রা বিনিময় হার সামঞ্জস্যপূর্ণ করা এবং জ্বালানি তেলের দাম কমানো। এ উপলক্ষে গত শনিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওই তিনটি পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সিপিডি ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ টেকসই করতে ব্যাংকিং খাতের সংস্কার ও এ বিষয়ে একটি কমিশন গঠন, রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় সরকার পর্যায়ে সংস্কার সাধনের তাকিদ দিয়েছে। সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, রাজস্ব বাজেটের ২৫ শতাংশ খরচ করতে হচ্ছে ঋণ পরিশোধে। এই ঋণের বেশির ভাগই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া। তাই সঞ্চয়পত্রের সুদহার সমন্বয় করা উচিত। সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে মাত্রা নির্ধারণের পাশাপাশি যারা কিনছেন তাদের আয়কর বিবরণীতে নজর দেয়া উচিত। এছাড়া ডলারের বিপরীতে নগদ ও এলসিতে মুদ্রা বিনিময় খাতে সামঞ্জস্য আনা দরকার। এই পার্থক্য এখন ৩-৪ টাকা। পার্থক্য সমন্বয় করা হলে প্রবাসী আয় যেমন বাড়বে তেমনি রফতানি আয়ও বাড়তে পারে। তার মতে, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে জ্বালানি তেলের দাম কমানো দরকার। তাছাড়া ব্যাংকিং খাতে দুর্বল অবস্থানের কারণে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ পর্যুদস্ত হচ্ছে।
রাজস্ব আদায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন, সরকারি ব্যাংকের সুশাসন এবং রফতানি খাত সম্পর্কে কিছু স্পষ্ট বক্তব্য রেখেছে সিপিডি। অর্থনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মূল নিবন্ধে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাজেটে বড় ধরনের সংশোধনীর প্রয়োজন হবে। রাজস্ব আদায়ে বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছর ৪০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। রাজস্ব আদায়ে যে গতি দরকার, তা নেই। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার সন্তোষজনক নয়। সন্তোষজনক নয় অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নও। পদ্ম সেতু প্রকল্পে চার মাসে বরাদ্দের মাত্র ১০ দশমিক ৪ শতাংশ খরচ হয়েছে। সরকারি ব্যাংকের সুশাসন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এখনো এমন কিছু আর্থিক জালিয়াতি হচ্ছে, যা আগের আর্থিক জালিয়াতি থেকে ব্যতিক্রম নয়। আগের জালিয়াতিগুলোর যদি বিচার হতো, তাহলে জালিয়াত আরো কমানো যেত। রফতানি খাতে বিশেষ করে তৈরী পোশাক খাতে ২০২১ সালের মধ্যে যে রফতানি আয়লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে প্রতি বছর ১২ দশমিক ২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হওয়া দরকার। কিন্তু বর্তমান প্রবৃদ্ধির ধারা তা সমর্থন করে না। বলা বাহুল্য, সামষ্টিক অর্থনীতি সম্পর্কে সিপিডির এই পর্যবেক্ষণ, গবেষণা, মূল্যায়ন ও সুপারিশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য। একথা কে না জানে, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ মোটেই টেকসই নয়। এ কারণে বেসরকারি বিনিয়োগে কার্যত অচলাবস্থা নেমে এসেছে। বিদেশি বিনিয়োগও সে রকম আসছে না। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান পূর্বশর্ত ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ। বিনিয়োগবন্ধত্বের কারণে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, বাণিজ্য-বিস্তার ও রফতানি বৃদ্ধি কোনোটাই ঠিকমতো হচ্ছে না। রাজনৈতিক অনিয়শ্চয়তা, নিরাপত্তার অভাব, লালফিতার দৌরাত্ম্য, ব্যাংকের অসহযোগিতা, অবকাঠামো দুর্বলতা, গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কট ইত্যাদি কারণে বিনিয়োগ উৎসাহিত হচ্ছে না। ব্যাংকে টাকার পাহাড় জমেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে; কিন্তু বিনিয়োগের খবর নেই। অন্যদিকে টাকা পাচার হচ্ছে, বিদেশে বিনিয়োগ হচ্ছে। উৎপাদন ক্ষেত্রে যেমন তেমনি রফতানি ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রবণতা লক্ষণীয়। প্রবাসী আয়েও ভাটার টান দেখা দিয়েছে। এটা অর্থনীতির জন্য মোটেই সুলক্ষণ নয়।
ক’দিন আগে আরেকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষা তার বার্ষিক প্রতিবেদনে নতুন বছরে অর্থনীতির জন্য পাঁচটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছে। চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিনিয়োগ বাড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাজস্ব আয়ে গতি বাড়ানো, রফতানি বহুমুখী করা, অর্থপাচার রোধ এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০১৬ অর্থবছর ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ ০৪ শতাংশ হারে কমছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেও বেসরকারি বিনিয়োগ কয়েক বছর ধরে কমছে। অর্থ পাচার বাড়ছে। সরকারি বিনিয়োগ কিছুটা বাড়ছে বটে তবে প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতায় তাও তেমন সুফলদায়ী হচ্ছে না। স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, সিপিডি ও উন্নয়ন অন্বেষা অর্থনীতি নিয়ে যে বিবেচনা ও মতামত দিয়েছে, তার মধ্যে মিল রয়েছে। আমাদের স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে মধ্যম আয়ের দেশের বাসিন্দা হওয়ার। অথচ সেই মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানো যে সহজ নয়, সেটা এই দুই সংস্থার অভিমত থেকে অনুধাবন করতে মোটেই কষ্ট হয়না। আদৌ যদি উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি লক্ষ্য হয়, লক্ষ্য হয় দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা, তাহলে অর্থনীতির প্রতিটি দিক বা বিভাগের ওপর নজর দিতে হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি যেখানে যতটুকু পরিবর্তন ও সংস্কার দরকার, তা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।