পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : গুলশান হলি আর্টিজান হামলার মাস্টারমাইন্ড ও নব্য জেএমবির নেতা নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান (২৩) ও তার সহযোগী সাদ্দাম হোসেন (২৫) পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত দুজনের লাশ অজ্ঞাত হিসেবে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া জানান, মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ রাত ৩টা ৪০ মিনিটে লাশ দুটি ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসে।
পুলিশ জানায়, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) একটি টিম বৃহস্পতিবার রাতে বেড়িবাঁধ এলাকায় একটি চেকপোস্ট বসায়। রাত ৩টার দিকে মারজান ও তার সহযোগী সাদ্দাম মোটরসাইকেলে মোহাম্মদপুরের ভেড়িবাঁধ এলাকা দিয়ে রায়েরবাজারের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সদস্যরা তাদের চ্যালেঞ্জ করে। কিন্তু তারা মোটরসাইকেল না থামিয়ে পুলিশের দিকে গুলি ছুঁড়ে ও গ্রেনেড হামলা চালায়। আত্মরক্ষায় পুলিশও গুলি চালায়। এতে তারা গুলিবিদ্ধ হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, একটি ছুরি, একটি মোটরসাইকেল ও বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের চার সদস্যও আহত হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত বছর জুলাই মাসে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার ঘটনার তদন্তে জঙ্গি কমান্ডার মারজানের নাম আসে। গুলশান হামলার ঘটনায় মারজানের সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর থেকেই তাকে খুঁজছিল গোয়েন্দারা। তাকে ধরতে না পারলেও গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয় মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি। কয়েকদিন আগে কারাবন্দি প্রিয়তি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। আর সাদ্দামের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট থানার চর বিদ্যানন্দ গ্রামে। তার বাবার নাম পাচু আলম ও মা জোবেদা খাতুন বলে জানা গেছে। সাদ্দামের বিরুদ্ধে রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি, কাউনিয়ায় মাজারের খাদেম রহমত আলী, পঞ্চগড়ের মঠ অধ্যক্ষসহ ৫টিসহ ১০টি মামলা রয়েছে।
গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড মারজানের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম নিজাম উদ্দিন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলো। দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হবার আগেই নিখোঁজ হয় সে। তার পরিবারের ভাষ্য, গত বছরের জানুয়ারিতে বিয়ে করে মারজান। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে নিখোঁজ হয়। একটি গোয়েন্দা সূত্রের ভাষ্য মতে, গত বছরের এপ্রিলে মারজান নব্য জেএমবির বিভিন্ন হামলা সমন্বয় করার দায়িত্ব পায়। তার সঙ্গে গত বছরের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশের অভিযানে নিহত নব্য জেএমবির নেতা তামিম চৌধুরী ও অন্যদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। মেডিকেল সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মারজান ও সাদ্দামের লাশের খবর নিতে আসেনি কেউ। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে।
মারজানের লাশ নিতে চায় পরিবার
পাবনা জেলা সংবাদদাতা জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন গুলশান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামে জঙ্গি নুরুল ইসলাম মারজান। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় মারজানসহ দুইজন।
পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামের মারজান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের ছাত্র ছিলেন। দশ ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় সম্পৃক্ততা নিয়ে আলোচনায় আসে মারজানের নাম। গত আগস্ট মাসে তার ছবি প্রকাশ করে নাম পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানতে চায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সেখানে মারজানকে নব্য জেএমবির সামরিক কমান্ডার হিসেবে দাবি করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এরপর ১৫ আগস্ট তার পরিচয় উদ্ঘাটিত হয়।
শুক্রবার সকালে টিভিতে মারজানের নিহত হওয়ার খবর জানতে পারেন তার স্বজনরা ও এলাকাবাসী।
শুক্রবার এই খবর জানার পর নিহত মারজানের বাড়িতে সাধারণ মানুষের ভিড় করেন। মারজানের মা সালমা খাতুন দেখা গেলো ঘরের একপাশে বসে কাঁদছেন। তাকে সান্ত¦না দিচ্ছেন প্রতিবেশিরা। মারজানের বাবা নিজাম উদ্দিন শোকাচ্ছন্ন ছিলেন।
এলাকার কয়েকজনের সাথে আলাপকালে তারা জানান, মারজান এলাকায় থাকার সময় ভাল ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু কিভাবে সে জঙ্গির পথে পা বাড়িয়েছে তা কেউ বুঝতে পারেনি। এলাকাবাসীর দাবি, আর যেন কেউ এভাবে জঙ্গি সন্ত্রাসের পথে পা না বাড়ায়। সরকার জঙ্গি উৎখাতের মাধ্যমে দেশে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকে।
অপরদিকে মারজানের বাবা নিজাম উদ্দিন জানান, সকাল ৮টার দিকে প্রতিবেশিদের মাধ্যমে ছেলে নিহত হওয়ার খবর জানতে পারেন। সরকার যদি আমার ছেলের লাশ বাড়িতে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করে তাহলে দাফনের ব্যবস্থা করবেন বলে জানান। ‘আর না দিলে আমার সামর্থ্য নেই যে ঢাকায় গিয়ে ছেলের লাশ নিয়ে আসবো।’
‘মারজানের মা সালমা খাতুন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলের মতো ছেলে এলাকায় নেই, আমার ছেলে অপরাধ করছে, তাই তার শাস্তি হইছে, আমার কিছু বলার নাই। আমার কোনো দাবি বা চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। আমিতো আগেই বলেছিলাম, মারজান যদি অপরাধী হয় তাহলে তার সাজা হোক।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।