Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেয়েলি রোগ লিউকোরিয়া

| প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শ্বেতপ্রদর বা লিউকেরিয়া সব মহিলার কাছে পরিচিত একটি রোগবিশেষ। ছোট শিশু থেকে বয়স্ক মহিলাদের এ উপসর্গ দেখা দিতে পারে। গ্রামবাংলার আঞ্চলিক ভাষায় এর বিভিন্ন নামকরণ হয়ে থাকে। এটি স্ত্রী-যোনি সংক্রান্ত একটি রোগ।
কোনো কারণবশত স্ত্রী-যোনি থেকে সাদা বর্ণের পাতলা বা গাঢ় স্রাব নিঃসৃত হওয়াকে লিউকোরিয়া বলা হয়। ঋতুবর্তী স্ত্রীলোকের ঋতুস্রাবের আগে বা পরে এর পরিমাণের তারতম্য হতে পারে। দীর্ঘ দিন এ রোগে ভুগলে স্রাব হলুদ ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে।
নি¤েœ উল্লেখিত অবস্থাগুলো এ রোগের কারণ হতে পারে :

*স্ত্রী হরমোনের তারতম্যের ফলে।
* স্ত্রী-যোনিপথের কোনো প্রদাহের কারণে।
* অনিয়মতান্ত্রিক জীবনযাত্রা ও অস্বাস্থ্যকর অবস্থার জন্য হতে পারে। উগ্র পানীয় ব্যবহারে এ রোগের সম্ভাবনা থেকে যায়।
* যোনিদ্বারে কোনো আঘাত বা প্রচ- চুলকানির ফলে হতে পারে।
* ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস, প্যারাসাইট, ইনফেকশনের জন্য হতে পারে। যৌন রোগের সংক্রমণে এ রোগ হতে দেখা যায়।
* অজীর্ণ ও উদরাময়, রক্তশূন্যতা, অতিরিকাত রজস্রাবের কারণে হতে পারে।
* উৎকণ্ঠা, দুঃসহ জীবন, অনিদ্রা, মানসিক চাপ।
* কপারটি ব্যবহার ও বিভিন্ন কৃত্রিম উপাদানে প্রস্তুত জেলির ব্যবহারে।
* কোনো রোগের সহযোগী রোগ হিসেবে এ রোগ হতে পারে। জরায়ুর স্থানচ্যুতি। ক্যান্সার, ডিম্বকোষ প্রদাহ ইত্যাদি
* অজানা কারণেও কারো মধ্যে এ রোগ দেখা যায়।
* সিফিলিস ও সাইকোসিস মিয়াজমের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগ নির্ণয়
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই এ রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।
প্রথমত, রোগীর সর্বদৈহিক অবস্থা জানা প্রয়োজন। কোনো রোগের সহযোগী অবস্থা হিসেবে এ শ্বেতপ্রদর হয়েছে কি না তা নির্ণয় করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, বাহ্যিকভাবে পরীক্ষণ দ্বারা এ রোগ নির্ণয় করা যায়।
তৃতীয়ত, যৌনমুখ ও পথ থেকে রস নিয়ে পরীক্ষা করা। প্রয়োজনবোধে বায়োপসি করা যেতে পারে।
চতুর্থ, মূত্র পরীক্ষণ, রক্ত পরীক্ষণ দ্বারা সংক্রমণের অবস্থা নির্ণয় করা যেতে পারে।
চিকিৎসা
সর্বপ্রথম যে কারণে এ রোগের সৃষ্টি হয়েছে তার প্রতিকার করতে হবে। মূল রোগটির চিকিৎসা হলে অনেক সময় শ্বেতপ্রদরের অতিরিক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। রোগীর জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ লক্ষ্য নিতে হবে। জন্মনিয়ন্ত্রণের কুফল থেকে সৃষ্টি হলে তা অবশ্যই বর্জন করতে হবে। অতিরিক্ত যৌনসঙ্গম পরিহার করতে হবে। রোগীকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিতে হবে।
ভাবী ফল
এ রোগের ভাবী ফল মারাত্মক নয়। শরীর বিধানের মধ্যে শীর্ণতা, চোখমুখ বসে যাওয়া ও মানসিক কিছু পরিবর্তন ছাড়া এ রোগে দেহের বিশেষ ক্ষতি সাধন করতে দেখা যায় না। তবে কোনো ম্যালিগন্যান্ট অবস্থার সাথে এ রোগ দেখা দিলে তা অবশ্যই সতর্কতার সাথে চিকিৎসা নিতে হবে।
চিকিৎসা
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা যেহেতু একটি লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা, সেহেতু লক্ষণ সাদৃশ্যে এবং রোগীর ব্যক্তিকেন্দ্রিক লক্ষণের ওপর চিকিৎসা প্রদান করলে রোগ নিরাময় হবে। এ ক্ষেত্রে হোমিও চিকিৎসার জ্ঞাতার্থে কয়েকটি প্রধান কার্যকর ওষুধের নাম উল্লেখ করা হলোÑ অ্যালুমিনা, এমোন কার্ব, আর্স এলবাম, ক্যালি কার্ব, বোরাং, ক্রিয়োজোট, নেট্রাম মিউর, প্লাটিনা, পালস, সিপিয়া, সালফার, সাইলিসিয়া।
ডাঃ আফরোজা বিলকিস (শেলী)
বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন