Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রক্তচাপ বাড়ার কারণ

| প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী রক্তচাপ দু’ধরনের উচ্চ-রক্তচাপ ও নিম্ন-রক্তচাপ। আমাদের দেহে রক্ত সংবহন বা সঞ্চালনে হৃদপিন্ডের ভূমিকা প্রধান। হৃৎপিন্ডের কাজই হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন পাম্পের সাহায্যে সংকুচিত-প্রসারিত হয়ে চাপ প্রয়োগ করে রক্তকে সারাদেহে ধমনী ও শিরা-উপশিরা তথা রক্তনালীর মাধ্যমে দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়ে রক্তের আদান-প্রদান নিয়ন্ত্রণ করা। হৃৎপিন্ড সংকুচিত হয়ে তার ভেতরের রক্তকে চাপ দিয়ে রক্তবাহী নালীর মধ্য দিয়ে বের করে দেহে পাঠিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়াকে বলে সংকোচন বা সিস্টল এবং প্রসারিত হয়ে রক্ত টেনে ভেতরে নেয়াকে বলে প্রসারণ বা ডায়াস্টল। হৃৎপিন্ড যখন পাম্প করে রক্ত সমস্ত দেহে ছড়িয়ে দেয় তখন তার পর্যাক্রমিক সিস্টল-ডায়াস্টল প্রক্রিয়া চলতে থাকে এবং হৃৎপিন্ডের এই পর্যায়ক্রমিক চাপকে বলে সিস্টলিক প্রেসার ও ডায়াস্টলিক প্রেসার। সিস্টলিক থেকে ডায়াস্টলিক প্রেসার সাধারণত ৪০-এর মতো কম হয়। সুস্থ মানবদেহে সাধারণত সিস্টলিক প্রেসার থাকে ১২০ মিলিমিটার এবং ডায়াস্টলিক প্রেসার ৮০ মিলিমিটার। ক্ষেত্র বিশেষে এই মান কম-বেশি হতে পারে। এটাকেই স্বাভাবিক রক্তচাপ বলা হয়। এর ব্যত্যয় ঘটলে তাকে রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উভয় ক্ষেত্রে এই চাপ বেড়ে গেলে তাকে উচ্চ-রক্তচাপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে উচ্চ-রক্তচাপকেই বেশি বিপজ্জনক মনে করা হয়।
উচ্চ রক্তচাপ কখন হয়?
রক্তের স্বাভাবিক চাপ (সিস্টল ১২০ ও ডায়াস্টল ৮০ থেকে মাত্রা বেড়ে গেলে উচ্চ-রক্তচাপ হয়। রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে মাথায় যন্ত্রণা, কখনো ঘাড়ে ব্যথা এবং শরীর অস্থির হয়ে কাঁপতে থাকে। কখনোবা কানের মধ্যে শোঁ শোঁ আওয়াজ হয়। চিৎকার বা গ-গোল একেবারে সহ্য হয় না, অল্পতে অসহিষ্ণু হয়ে উঠে অনেকে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। রাতে ভালো ঘুম হয় না, বাঁদিকে কাৎ হয়ে শুতে কষ্ট হয়। কখনো কখনো রোগী জ্ঞান পর্যন্ত হারাতে পারেন। চিকিৎসাশাস্ত্রে রক্তচাপ ১৫৫ মিলিমিটারের বেশি হলে এই রোগে আক্রান্ত রোগীকেই হৃদরোগী বলা হয়।
উচ্চ রক্তচাপ হয় কেন?
শরীর সুরক্ষা ও পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য যতটা প্রোটিনজাতীয় খাদ্য দরকার এবং শরীরের তাপ কর্মশক্তি ঠিক রাখার জন্য যতটা চর্বি ও শর্করা জাতীয় খাদ্যগ্রহণ দরকার, দীর্ঘকাল ধরে তার চেয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করা এ রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। আমাদের দেহে প্রোটিন সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না-থাকায় এসব অতিরিক্ত মাত্রায় গৃহীত খাদ্যের প্রয়োজনাতিরিক্ত প্রোটিনকে দেহ থেকে বের করে দিতে দেহযন্ত্রগুলোর যে অতিরিক্ত পরিশ্র্র্র্রম করতে হয় তাতে একটা সময়ে এসে দেহযন্ত্রগুলো ধীরে ধীরে দুর্বল ও অকেজো হয় পড়তে থাকে। ফলে পরে আর ঠিকভাবে তা করতে পারে না বলে দেহে থেকে যাওয়া অতিরিক্ত প্রোটিন অ্যামোনিয়াজাত উপাদানে পরিবর্তিত হয়ে রক্তে মিশে গিয়ে ধমনী ও শিরা-উপশিরার দেয়ালে জমে রক্ত চলাচলের পথ সরু করে দেয়। এ অবস্থায় হৃৎপি-কে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করতে হয়। এই অতিরিক্ত চাপকেই রক্তচাপ বৃদ্ধি বলা হয়। এই অতিরিক্ত রক্তচাপ বেশি বৃদ্ধি পেলেই রক্তবাহী নালি যে-কোনো সময় যে-কোনো জায়গায় ফেটে বা ছিঁড়ে যে-কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
এই দুর্ঘটনা বুকে হলে রোগী বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেন, গা দিয়ে ঘাম ঝরতে থাকে। এই অবস্থাকে বলে হার্ট অ্যাটাক। আর তা যদি মস্তিস্কে ঘটে তবে তাকে বলা হয় করোনারি বা সেরিব্রাল থ্রম্বোসিস। মস্তিস্ক দেহের স্নায়ুজাল নিয়ন্ত্রণ করে বলে এরকম দুর্ঘটনায় দেহে আংশিক বা সম্পূর্ণ পক্ষাঘাত কিংবা মৃত্যুও ঘটাতে পারে।
আফতাব চৌধুরী, সাংবাদিক-কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন