Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্র কি বিশ্বশক্তিই থাকবে

নিউজউইকের প্রতিবেদন

| প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য। প্রশ্ন হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র কি একটি বিশ্বশক্তিই রয়ে যাবে?
কোরা প্রশ্নমালা হচ্ছে নিউজউইক ও কোরার মধ্যে অংশীদারিত্বের অংশ যার মাধ্যমে গোটা সপ্তাহ ধরে কোরা কন্ট্রিবিউটরদের প্রাসঙ্গিক ও আগ্রহোদ্দীপক জবাব সমূহ উপস্থাপন করা হয়।  
লেখক, উদ্যোক্তা, পডকাস্টার ও ওয়াল স্ট্রিট বিনিয়োগকারী জেমস আলচাচারের জবাবঃ
আমার ছয় বছরের মেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিষয় কী? এর জবাবে তাকে কী বলব তা আমার জানা ছিল না।
আমি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ঘরে ও বাইরে কীভাবে ভূমিকা পালন করে তা নিয়ে বহু সমস্যা আছে। একটি দেশ সম্পর্কে কী জবাব দেয়া যায় যে কিনা মারাত্মক যুদ্ধে নিয়োজিত, যে দেশে দাস আছে, দারিদ্র্য হার হচ্ছে ১৫ শতাংশ এবং তারপরও সে নিজেকে সুযোগের দেশ বলে আখ্যায়িত করে যার কারণ আছে।
এখানে আসলে দু’টি প্রশ্ন ঃ আপনি কীভাবে বিশ্বশক্তির সংজ্ঞা নির্ধারণ করবেন এবং তা কি ভালো না খারাপ জিনিস? হতে পারে ছোট শক্তি হওয়া এবং বিপুল সম্পদ ও সুবিধা থাকাই ভালো (যেমন লুক্সেমবুর্গ)।  
প্রথমত ঃ যুক্তরাষ্ট্র কি একটি বিশ্বশক্তি? হ্যাঁ, যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত বৃহত্তম বিশ্বশক্তি এবং কেউ তার কাছাকাছি নয়।
*জিডিপি (মার্কিন ডলারের পরিমাণে) ঃ জিডিপির পরিমাণ হচ্ছে ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার। সারা বিশ্বের জিডিপির পরিমাণ ৭৫ ট্রিলিয়ন ডলার। তার অর্থ আমরা হচ্ছি বিশ্ব অর্থনীতির ২৫ শতাংশ যদিও আমাদের জনসংখ্যা হচ্ছে বিশ^ জনসংখ্যার ৪ শতাংশ।
*সামরিক শক্তি ঃ এটা মূল্যায়নের সঠিক বা ভুল কোনো পন্থা নেই। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে একটি দেশ তখনি সামরিক শক্তি যখন সে যে কোনো অঞ্চলে দ্রুত সৈন্য মোতায়েন করতে ও যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারে। বিমানের সাহায্যে তা করা যায়। বিমান শক্তিতে ১৩ হাজারেরও বেশি জঙ্গি বিমান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে পয়লা নম্বরে আছে। পরবর্তী ৮টি দেশ হল রাশিয়া, চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, পৃঃ ৫ কঃ ৬
যুক্তরাষ্ট্র কি বিশ্বশক্তিই থাকবে

মিসর ও তুরস্ক। এদের সবার বিমান মিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সমান। যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক সাবমেরিন, ডেস্ট্রয়ার, ক্রুজার ইত্যাদিতে সবার উপরে।
*বিজ্ঞান ঃ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র বিশে^ এক নম্বরে রয়েছে। এর মধ্যে আছে জৈবপ্রযুক্তি, চিপস, রোবোটিকস, এ আই, প্ল্যান্ট বেজড ফুড, জ¦ালানি ইত্যাদি
*অ্যাথলেটিক সক্ষমতা ঃ বিশ^ জনসংখ্যার ৪ শতাংশ হওয়া সত্ত্বেও ২৮শ’রও বেশি পদক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সেরা অলিম্পিক পদক জয়ী দেশ। সেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও রাশিয়ার সম্মিলিত অর্জন ১৮শ’টি অলিম্পিক পদক।
*লোকে কোথায় যায়? ঃ যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে মানুষ যাই ভাবুক না কেন, এ দেশেই সবাই ছুটি কাটাতে আসে। বিশে^র তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র যত ক্ষুদ্রই হোক, পর্যটনের দিক দিয়ে দেশটি এক নম্বরে রয়েছে। পর্যটন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক আয় ২শ’ বিলিয়ন ডলার। চীনে পর্যটন বাবদ বার্ষিক আয় ১০৮ বিলিয়ন ডলার।
*স্বর্ণ ঃ লোকে বলে মার্কিন ডলার যদি এক নং মুদ্রা না থাকে তাহলে কী হবে? এটা কোনো ব্যাপার নয়। তখন বিশ্বসোনা নির্ভর হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ৮ হাজার টন স্বর্ণ মজুদ আছে। বিশে^ দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বর্ণ মজুদ রয়েছে জার্মানির, ৩ হাজার টন।
ট্রাম্প হিলারি? কে পাত্তা দেয়? পন্ডিতেরা ১৭৯২ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের পতনের ভবিষ্যদ্বাণী করছেন এবং সরকারের বাইরের উদ্ভাবনা সব সময়ই মার্কিন অর্থনীতি ধ্বংসের সরকারের ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে গেছে। (দেখুন সেই বই ঃ দি মিথ অব আমেরিকা’স ডিক্লাইন)
আপনি বলতে পারেন যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের তুলনায় মর্যাদায় এক নম্বর নয়। আমি এর সাথে একমত। আমি মনে করি না যুক্তরাষ্ট্রের বিশে^র পুলিশ হওয়া উচিত। আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া বন্ধ করা উচিত।
আমার এখন ১৭ বছরের একটি মেয়ে আছে। আমি তাকে এ কথা বলতে পারব না যে আমি মনে করি তোমার একটি অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া উচিত, তা নিয়ে সোজা একটি গরিব দেশে চলে যাও এবং ১৭ বছর বয়সী অন্যদের মেরে ফেল। সে দেশে যাই ঘটুক না কেন তা বিষয় নয়। বিশে^র ৭০টি দেশে এখনো যুক্তরাষ্ট্রের এখনো ৮শ’ সামরিক ঘাঁটি আছে।
যুক্তরাষ্ট্র সংবিধান মোতাবেক সর্বশেষ যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ১৯৪১ সালে যখন সে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধে প্রবেশ করে।
আমি যুদ্ধ ও হত্যা এবং যে সব দেশের তা করা প্রয়োজন তাদের সাহায্য করতে অনাগ্রহী। এগুলো আমার কাছে বিপর্যয় বলে মনে হয়।
ভবিষ্যতে কী ঘটবে?
বিভিন্ন দেশকে আমাদের কেন প্রয়োজন? তারা আমাদের শুধু জাতীয়তাবাদের দিকে নিয়ে যায়, যুদ্ধ বাধায়, অভিবাসন সমস্যা সৃষ্টি করে, স্বৈরতন্ত্র দেয়, দুর্নীতিগ্রস্ত করে।
ফেসবুক তাদের একক মঞ্চে ২শ’ কোটি লোককে বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। সামাজিক মাধ্যমে আমি এক দিনে কমপক্ষে ৫০টি লোকের সাথে কথা বলেছি।
এক সময় আমরা ১৫০ জন লোকের যাযাবর গোত্র ছিলাম। যখন আমাদের গম রক্ষা করার দরকার হর তখন আমরা বিভিন্ন গ্রাম তৈরি করলাম। পরে গ্রামগুলো বিশেষ কিছু হল, তারপর তা পরিণত হল বিভিন্ন শহরে। তারপর শহরগুলো বিলীন হল রাজ্যে। তারপর হল সাম্রাজ্য। (দেখুন বই, ‘স্যাপিয়েনস’, ইউভাল হারারি রচিত)
যুক্তরাষ্ট্র হল এ পর্যন্ত বিশে^র বৃহত্তম সাম্রাজ্য।
কিন্তু তারপর আরেকটি সাম্রাজ্য হবে। গত ১২ হাজার বছর ধরে সংঘটিত বিবর্তন বলে যে আরেকটি সাম্রাজ্য হবে। অর্থনীতির প্রয়োজনও সে কথাই বলে। (দেখুন বই, ম্যাট রিডলি রচিত ‘দি এভোল্যুশন অব এভরিথিং’)
বিশ^ যোগাযোগের জন্য আরেকটি সাম্রাজ্য প্রয়োজন। তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক আবিষ্কার যে ভবিষ্যতে যেমনটি হবে বলে লোকে মনে করে, বর্ণবাদ ও জাতিগোষ্ঠিগত পার্থক্য অনেক কম হবে। বিশ^ব্যাপী প্রযুক্তির বিস্তার আমাদের একসাথে ধরে রাখবে। আমি সেই আগামী সাম্রাজ্যের নাগরিক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ