Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্যাস বিল নিয়ে প্রতারণা ও বঞ্চনার শিকার গ্রাহক

| প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : গ্যাস বিল নিয়ে গ্রাহকদের ক্ষোভ বাড়ছে। তাদের দাবি গ্রাহকরা প্রতি মাসে যে টাকা পরিশোধ করে সেই পরিমাণ  গ্যাস পাচ্ছেন না। বঞ্চনা ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন তারা। আর এতে গ্যাস বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা অর্জন করছে বিতরণ কোম্পানিগুলো।
পেট্রোবাংলা ও তিতাস গ্যাস কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তা জানান, দেশে প্রায় ২০ লাখ আবাসিক সংযোগ রয়েছে। আবাসিক গ্রাহকের অন্তত ৭০ ভাগ তাদের বেঁধে দেয়া সময় সীমার চেয়ে কম গ্যাস ব্যবহার করেন।
বিতরণ কোম্পানিগুলো পেট্রোবাংলার কাছ থেকে যে পরিমাণ গ্যাস কিনছে মাস বা বছর শেষে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ গ্যাস বিক্রির বিল হিসাবে জমা হচ্ছে। এই বাড়তি বিলের প্রায় পুরোটাই এভাবে হচ্ছে। এর মধ্যে চলে যাচ্ছে অবৈধ গ্যাসও। অবৈধ গ্যাস ব্যবহার হলেও তা আর হিসাবের খাতায় থাকছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত দুইভাবে গ্রাহক বঞ্চনার ঘটনা ঘটছে। প্রথমত লাইনে চাপ কম থাকায় শিল্প-বাণিজ্য খাতের গ্রাহকরা তাদের জন্য বরাদ্দ থাকা চাপ অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছেন না। পুরনো ভলিউমেট্রিক মিটারের কারণে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান কতটুকু কম গ্যাস পাচ্ছে তা ধরা পড়ে না। অথচ গ্যাস কোম্পানিগুলো ঠিকই বরাদ্দ থাকা চাপ অনুযায়ী গ্যাস বিতরণের পরিমাণ নির্ধারণ করে বিল জারি করে।
দ্বিতীয়ত আবাসিক গ্রাহকেরা যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করবেন বলে হিসাব করে কোম্পানিগুলো দাম নির্ধারণ করেছে, আসলে আবাসিক গ্রাহকরা তার চেয়ে অনেক কম গ্যাস ব্যবহার করেন। যেমন, দুই চুলার একজন গ্রাহক প্রতি মাসে ৯২ ঘনফুট (সিএফটি) গ্যাস ব্যবহার করবেন এমন ধারণা করে বিল নির্ধারণ করা হয়। বাস্তবে দুই চুলায় গড়ে ৪২ সিএফটি গ্যাস ব্যবহার হয়। ফলে তিতাসের এমনিতেই দ্বিগুণেরও বেশি লাভ হয়ে যায়। আবার আবাসিকে যে সকল গ্রাহকরা প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করছেন তারা ঠিকই যথাযথ বিল দিচ্ছেন। আর এই বিলের পরিমাণ নির্ধারিত বিল দেয়া গ্রাহকের চেয়ে অনেক কম।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, দেশে বিতরণ করা মোট গ্যাসের ১৩ শতাংশ আবাসিকে, ১৭ শতাংশ শিল্পে, ছয় শতাংশ সার কারখানায় এবং সিএনজিতে সাড়ে পাঁচ শতাংশ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৪১ শতাংশ এবং ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৭ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মসিউর রহমান বলেন, আবাসিকের বেশ কিছু গ্রাহক সংযোগ নিলেও তেমন ব্যবহার করে না। আবার শিল্পের গ্রাহকদের যে চাপ অনুযায়ী গ্যাসবিল করা হয় দিনে তিন-চার ঘণ্টা তার চেয়ে কম চাপে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। কিন্তু একই চাপের মাপকাঠি ধরে ২৪ ঘণ্টার বিল করা হয়। এ জন্যই এ সিস্টেম গেইন হচ্ছে। বড় গ্রাহকদের ক্ষেত্রে কম্পিউটারভিত্তিক মিটার স্থাপন করা হয়েছে। তাই তারা যে চাপ অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছেন সে অনুযায়ী বিল দিচ্ছেন।
বিতরণ কোম্পানিগুলোর বার্ষিক হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এক দশমিক ৮২ শতাংশ, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি চার শতাংশ, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ, কর্ণফুলী চার দশমিক ২৯ শতাংশ এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির সিস্টেম গেইন ছিল পাঁচ শতাংশ। চলতি অর্থ-বছরেও এ ধারা অব্যাহত আছে। এর আগের কয়েক বছরও কোম্পানিগুলো পদ্ধতিগত লোকসান বা সিস্টেম লস না করলেও আয় বেড়েছে করেছে।
কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, সিস্টেম গেইন নামক এই গ্রাহক বঞ্চনা ও প্রতারণার বিষয়ে বিইআরসিসহ সরকারের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে কাউকে আন্তরিক বলেও মনে হচ্ছে না। অবৈধ সংযোগ ও চুরি বন্ধের চেয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ব্যাপারেই যেন সংশ্লিষ্টদের আগ্রহ বেশি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্যাস

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ