Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কার্যকর জাতিসংঘই কাম্য

সম্পাদকীয়-২

| প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে গত রবিবার দায়িত্ব নিয়েছেন অ্যান্তোনি গুতেরেস। তিনি বান কি মুনের স্থলাভিসিক্ত হলেন। ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে মেয়াদ শেষ হয় বান কি মুনের। দায়িত্ব নিয়ে নতুন মহাসচিব আশা প্রকাশ করেছেন, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তার প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। তার দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন ইংরেজি নববর্ষে তিনি বলেছেন, জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে প্রথম দিনে একটি প্রশ্ন আমার হৃদয়ে প্রচ-ভাবে প্রভাব ফেলে, কীভাবে আমরা দ্বন্দ্বে আক্রান্ত ও সমাপ্তিহীন যুদ্ধে ব্যাপকভাবে দুর্ভোগ পোহানো লাখো মানুষকে সাহায্য করতে পারি। বিশ্বজুড়ে অস্থিরতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকরা বড় শক্তির কাছে জিম্মি। নারী শিশু ও পুরুষেরা হত্যার শিকার এবং আহত হচ্ছেন, বাড়ি থেকে বিতাড়িত হচ্ছেন, দখলচ্যুত এবং পরিত্যক্ত হচ্ছেন। এমনকি হাসপাতাল ও সাহায্যের বাহনগুলোও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। এসব যুদ্ধে কেউ জয়লাভ করতে পারে না, সবারই পরাজয় ঘটে। কোটি কোটি ডলার খরচ হয়, সমাজ ও অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, অবিশ্বাস ও ভয়ের সৃষ্টি হয় যা বংশ পরম্পরা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। সমগ্র অঞ্চল অস্থিতিশীল হয় ও বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ আমাদের সবাইকে আক্রান্ত করে।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা হলেও গত কয়েক দশকে সংস্থাটি তার মূল লক্ষ্যে স্থির থাকতে পেরেছে বা লক্ষ্য অর্জনে পরিপূর্ণ সক্ষম হয়েছে সে কথা বলা যাবে না। বিশেষ করে ফিলিস্তিন ইস্যু এবং ইরাক-আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র ও তার মিত্রদের হামলার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘকে খুবই অসহায় বলে মনে হয়েছে। তৎকালীন জাতিসংঘের মহাসচিবের আহ্বান অগ্রাহ্য করেই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার মনগড়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আগ্রাসন পরিচালনা করেছেন। অথচ জাতিসংঘ এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি। এবারেও যখন নতুন মহাসচিব দায়িত্ব গ্রহণ করলেন তার আগেই নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতিসংঘকে একটি ক্লাব বলে আখ্যায়িত করেছেন। নতুন মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গুতেরেস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমেরিকার পরবর্তী সরকারসহ সকল সরকারের সঙ্গে তিনি সম্পর্ক তৈরি করবেন। গুতেরেস যে বহু সংস্কৃতিবাদকে জাতিসংঘের ভিত্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তার প্রতি আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগ্রহ খুব কম। তিনি বরং আমেরিকা ফার্স্ট নীতিতে বিশ্বাসী। এদিকে জাতিসংঘের প্রতি আমেরিকার সমর্থনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন। বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং। কারণ যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাধারী রাষ্ট্র। পাশাপাশি জাতিসংঘের নিয়মিত বাজেটের ২২ শতাংশ ও শান্তিরক্ষা বাজেটের ২৫ শতাংশের জোগানদাতা। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি স্থাপন নিষিদ্ধ করার পরপরই ইসরাইল তার নিন্দা করেছে। সিরিয়া ইয়েমেন থেকে শুরু করে দক্ষিণ সুদান আর লিবিয়ার চলমান সঙ্কটের সাথে যুক্ত হয়ে আছে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিধন ও বিতাড়ন সমস্যা।
জাতিসংঘ যদি প্রকৃত বিবেচনায় তার গৃহীত নীতির উপর অটল থেকে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে না পারে তাহলে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যই ব্যর্থ হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা তা প্রত্যক্ষ করেছি। প্রকৃত বিবেচনায় জাতিসংঘ যে এখন পর্যন্ত বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জটিল অঞ্চলগুলোতে খুব একটা সফল হয়েছে তাও বলা যাবে না। আবার তার সাফল্য একেবারেই নেই বা সর্বনিম্নœ কোঠায়, তাও নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান মহাসচিবের ভাষায় বড় শক্তিগুলোর নানা প্রভাব রয়েই গেছে। আর সেটা যদি এড়িয়ে চলা না যায় তাহলে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা কোনভাবেই সম্ভব নয়। বর্তমান পরিস্থিতি বহাল থাকলে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে, এটাই স্বাভাবিক। নতুন মহাসচিব বলেছেন, মানব পরিবার হিসেবে যা আমরা পেতে চাই অর্থাৎ সম্মান ও আশা, উন্নতি ও সমৃদ্ধি তা নির্ভর করে শান্তির উপর। প্রকৃত শান্তি অর্থাৎ প্রতিটি দেশের নাগরিকদের সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করতে বিশেষ করে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র বিবেচনায় যে বৈষম্য এখনো বিদ্যমান তা দূরীকরণে বর্তমান মহাসচিব শুধু কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করবেন এটাই বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা।



 

Show all comments
  • Ziaur Rahman ৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:০৭ এএম says : 0
    yes
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন